মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

সংযম প্রদর্শন

মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

সংযম প্রদর্শন

সংযম  সিয়াম  সাধনার  একটি  অন্যতম  পূর্বশর্ত। রোজা পালনের দ্বারা প্রবৃত্তির ওপর  আকলের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়। এর দ্বারা মানুষের পাশবিক শক্তি অবদমিত  হয় এবং রুহানি শক্তি বৃদ্ধি পায়। কেননা ক্ষুধা ও পিপাসার কারণে মানুষের জৈবিক ও পাশবিক ইচ্ছা হ্রাস পায়। এতে মনুষত্ব জাগ্রত হয়। যে কোনো  পরিস্থিতিতে  ধৈর্য  অবলম্বন, সহনশীলতা  প্রকাশ, পারষ্পরিক সম্ভ্রমবোধ ও সৌজন্য প্রদর্শন, সর্বোপরি  সব  কার্যকলাপে  মুক্তবুদ্ধি  বিবেচনাপ্রসূত  মাত্রা  ও  মূল্যবোধের  অনুসরণ  ব্যক্তি  তথা  সমাজ  জীবনের  অনিবার্য  অবলম্বন  হওয়া  আবশ্যক। চলনে-বলনে চিন্তা-চেতনায় আগ্রহ  আকাক্সক্ষায়  আবেগ  উৎকণ্ঠায়  আনন্দ  সর্বনাশে  সর্বত্র  একটা  মধ্যপন্থা  অবলম্বনের  ওপর  আল  কুরআনে  বিশেষ  গুরুত্বারোপ  করা  হয়েছে। এটা অনস্বীকার্য যে কোনো ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি ভিন্নতর পরিস্থিতির  উদ্ভব  ঘটায়। যেমন  মাত্রা  অতিক্রম  করলেই  সাহস  হঠকারিতায়, আত্মোৎসর্গ  আত্মœহত্যায়, প্রতিযোগিতা  হিংসায়  পরিণত  হতে  পারে। অবস্থা  বিশেষে  সমালোচনা  পরচর্চায়, প্রশংসা  চাটুবাদে, তেজ ক্রোধে, দেশপ্রেম  দেশদ্রোহিতায়  এবং  অতি ধর্মপ্রীতি  ধর্মান্ধতার  স্তরে  নেমে  আসতে  পারে। পরিমিত  বোধের  ব্যাপারে  আল  কুরআনে  বহুবার  উপদেশ  দেওয়া  হয়েছে। লোকমান  হাকিম  তার  পুত্রকে  উপদেশ  দিচ্ছেন, ‘অহঙ্কার  বশে  তুমি  মানুষকে  অবজ্ঞা  কর না। কারণ  আল্লাহ  কোনো  উদ্ধত  অহঙ্কারীকে  পছন্দ  করেন না।  তুমি  পদক্ষেপ  করিও  সংযতভাবে  এবং  তোমার  কণ্ঠস্বর  নিচু  করিও; স্বরের  মধ্যে  গদর্ভের  স্বরই  সর্বাপেক্ষা  অপ্রীতিকর।’ (৩১ সুরা  লোকমান আয়াতঃ ৮-১৯)। ক্যানভাসে রং ও তুলির সুষম  সমন্বয়ে  শিল্পের  সার্থকতা ফুটে  উঠে। পরিপার্শ্বিক  সব  কিছুর  পরিমিত  অবস্থান ও শৃঙ্খলামি ত  উপস্থাপনার  মধ্যেই  সৌন্দর্যের  যথার্থ  বিকাশ।  নিয়মনিষ্ঠা  ও  সহনশীলতা কোনো  পরিবেশ  পরিস্থিতিতে  মেজাজ-মর্জি , আস্থা ও অবস্থান এমনকি প্রতিক্রিয়া প্রকাশের ক্ষেত্রেও দান  করে  এক  অনুপম  মর্যাদা। ওভারটেকিং  প্রবণতায়  ট্রাফিক  আইন  লঙ্ঘিত  হলে  যে  বিশৃঙ্খলার  সৃষ্টি  হয়  তাতে  দুর্ঘটনাই  ঘটে থাকে। দেহে  রক্তচাপের  স্বাভাবিক  মাত্রা অতিক্রান্ত  হলে  নানান  আশঙ্কাজনক  পরিস্থিতির  উদ্ভব  হয়।  সংগীতে  সাতটি  স্বরের  মধ্যে  পঞ্চমটিই  মিষ্ট  ও  সুষম; সপ্তম  সুর  তো  চড়া  সুর। রাত ও দিনের  মধ্যবর্তী  প্রভাত  ও গোধুলী  বেলা  সবচেয়ে  পেলব প্রশান্তির মুহূর্ত।  নৌকার  আরোহীদের  ভারসাম্য  বজায়  রেখে  নৌকায়  চড়তে  হয়। সবাই  একদিকে  অস্বাভাবিকভাবে  ঝুঁকলে নৌকা  ডুববে কিংবা  এলোপাতাড়ি ও  যত্রতত্র  স্থান  পরিবর্তনের  উদ্যোগ  নেওয়া হলে ভাসমান নৌকা তো  দুলতেই  থাকবে  এবং  একে  চালানো  কষ্টকর  হয়ে  যাবে। অর্থনীতিবিদরা  স্পষ্টতই  মত  প্রকাশ  করেছেন - অর্থ  সরবরাহে  অসম  আচরণ  এবং  স¤পদ  বণ্টনে  বৈষম্য  মুদ্রাস্ফিতির  অন্যতম  কারণ  এবং  মুদ্রাস্ফিতি অর্থনীতির অন্যান্য শৃঙ্খলাকে  সংক্রামিত  করে  বিপর্যস্ত  পরিস্থিতির  সৃষ্টি করে। অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতা শৃঙ্খলা ও  ভারসাম্যে  আঘাত হানে- পরিবেশ-প্রতিবেশ  হয়  কলুষিত। সুতরাং  দেখা  যাচ্ছে  ব্যক্তি  তথা  সামষ্টিক জীবনে সব  ক্ষেত্রে ও  পর্যায়ে  সংযম  ও  সহনশীলতা  প্রদর্শনের,  যুক্তিনিষ্ঠ ও  নিরপেক্ষ  মধ্যপন্থা  অবলম্বনের আবশ্যকতা রয়েছে। আল কুরআনের ২৫তম সুরা  ফুরকানে  এ বিষয়টির  প্রতি  ইঙ্গিত  করা  হয়েছে- ‘যখন তারা  ব্যয়  করে তখন  তারা  অপব্যয়  করে না, কার্পণ্যও  করে না, বরং  তারা  আছে  উভয়ের মধ্যে, মধ্যম  পন্থায়’ (আয়াত ৬৭), কিংবা ১৭ তম  সুরা  বনি  ইসরাইলে-’ সালাতে  স্বর  উচ্চ  করিওনা এবং  অতিশয়  ক্ষীণও করিওনা, এ দুয়ের  মধ্যপথ  অবলম্বন  কর।’ (আয়াত ১১০)। লেখক ঃ সাবেক সচিব  ও এন বি আরের সাবেক চেয়ারম্যান ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর