শনিবার, ১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

অর্থনীতি পাল্টে দেবে বে-টার্মিনাল

পতেঙ্গা থেকে মিরসরাই, চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ

মানিক মুনতাসির, পতেঙ্গা থেকে ফিরে

অর্থনীতি পাল্টে দেবে বে-টার্মিনাল

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতির চিত্র পাল্টে দেবে বে-টার্মিনাল। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকায় সাগর উপকূল ঘেঁষে নির্মিত হচ্ছে এই টার্মিনাল। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দরে থাকবে না কনটেইনার জট। কেননা, চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি সুবিধা সৃষ্টি হবে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে। বাড়বে কর্মসংস্থান। চাঞ্চল্যতা পাবে সবধরনের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী পর্যন্ত যুক্ত হচ্ছে বিস্তৃত সড়ক। পাল্টে যাচ্ছে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের             চেহারা। দিনরাত কাজ চলছে সৈকতের সামনে প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণের। তৈরি করা হচ্ছে বসার স্থান। এতে সৈকতের খুব কাছাকাছি বসে সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।   এদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত ব্যয় আপাতত বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দিচ্ছে। মূল কাজের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। এজন্য অবশ্য পিপিপি কর্তৃপক্ষ এবং বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) যৌথভাবে কাজ করছে। ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশ প্রাথমিকভাবে আগ্রহও প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটি (পিএসএ) নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুরো অঞ্চলে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ প্রায় শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। খুব শিগগিরই এ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। এতে ব্যয় হবে ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি। বে-টার্মিনাল ঘেঁষেই ট্রাক টার্মিনাল ও ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প এলাকায় ইতিমধ্যে বাউন্ডারি ওয়াল এবং সাইট অফিস নির্মাণসহ বিভিন্ন রকমের কাজ চলছে পুরোদমে। নগরীর পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকায় সাগর উপকূল ঘেঁষে নির্মিত হচ্ছে বে-টার্মিনাল। এজন্য ৮৭১ একর ভূমি ছাড়াও সমুদ্র থেকে রিক্লেইম করা আরও ১ হাজার ৬০০ একর ভূমিসহ ২ হাজার ৫০০ একর ভূমিতে গড়ে উঠছে টার্মিনালটি। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বড়। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের বর্তমান অবকাঠামোটি ৪৫০ একর ভূমিতে স্থাপিত। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে সাড়ে ৯ মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। ফলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাপক হারে ব্যাহত হয়। কিন্তু নতুন এ টার্মিনাল নির্মাণ শেষ হলে এতে ভিড়তে পারবে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যরে জাহাজ। ফলে বন্দরে প্রতি বছর যে পরিমাণ আমদানি-রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং হচ্ছে, বে-টার্মিনালে হ্যান্ডলিং হবে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যার ফলে দেশের আমদানি-রপ্তানির বাণিজ্যের চিত্র পাল্টে দেবে এই বে-টার্মিনাল, মনে করছে সরকার। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতি বছর আমদানি-রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে ১৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু নানা কারণে অবকাঠামো তেমন বাড়েনি। এ বন্দরে প্রায়ই জাহাজ জট সৃষ্টি হয়। জাহাজ নির্ধারিত সময়ের বেশি অপেক্ষা করায় আমদানি-রপ্তানিকারকদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। নির্মাণাধীন এই বে-টার্মিনাল হবে মূলত কন্টেইনার জাহাজনির্ভর। তবে প্রয়োজনে বাল্ক কার্গোবাহী (খোলা পণ্যবাহী) জাহাজও হ্যান্ডলিং করা যাবে। এতে থাকবে ১৩টি জেটি। এরমধ্যে ৭টি কন্টেইনার ও বাকি ৬টি মাল্টিপারপাস। যা দৈনন্দিন আমদানি-রপ্তানির জন্য জাহাজে পণ্য বোঝাই বা পণ্য খালাসের কাজে ব্যবহৃত হবে। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসারের ফলে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে পারছে না চট্টগ্রাম বন্দর। এজন্য একটি বে-টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছ সরকার। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর ২৩ লাখ কন্টেইনার আর ছয় কোটি টন খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং করার সক্ষমতা আছে চট্টগ্রাম বন্দরের। কিন্তু বর্তমান বাজারে প্রায় ৩০ লাখ কন্টেইনার আর ১০ কোটি টন খোলা পণ্যের চাহিদা আছে ব্যবসায়ীদের। এ চাহিদা প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। তবে বে-টার্মিনাল নির্মাণ হলে প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি কন্টেইনার ও প্রায় ৫০ কোটি টন খোলা পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা থাকবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রাম ঘিরে যে উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হলে পুরো এলাকার অর্থনৈতিক চিত্র বদলে যাবে। বে-টার্মিনাল নির্মাণ তারই একটা অংশ। তবে বে-টার্মিনাল বিশেষত আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

 

সর্বশেষ খবর