শুক্রবার, ২১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রশ্ন

নুসরাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদনে ফেনীর এডিএমের দায়িত্বে অবহেলা ও নাম থাকায় শোকজ

সাখাওয়াত কাওসার

পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রশ্ন

নুসরাত জাহান

ফেনীর বহুল আলোচিত নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় পুলিশ সদর দফতর গঠিত তদন্ত কমিটির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা। কমিটির গঠন ও কার্যপরিধি এবং ওই কমিটি ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের বিষয়ে কোনো তদন্ত করেছেন কিনা, করে থাকলে কোন এখতিয়ার বলে করেছেন তা স্পষ্ট করতে পুলিশ সদর দফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত ২১ মে উপসচিব মল্লিকা খাতুন স্বাক্ষরিত ওই চিঠির বিষয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে পুলিশ সদর দফতরে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুলিশের অনেক কর্মকর্তা। পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো চিঠির একটি কপি রয়েছে এই প্রতিবেদকের কাছে।

স্মারক নম্বর-৪৪.০০.০০০০.০৭৫.০৪.০১৪.১৮.৫০৬ সংবলিত ওই চিঠির বিষয় হলো- ‘ফেনী জেলার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি জনাব পি কে এনামুল করিম,  অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ফেনীর দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদন।’ পুলিশ সদর অধিদফতরের একটি স্মারক-০৩০.৪৭.০০৭.১৯/১৪০৬, তারিখ : ০২/০৫/২০১৯ খ্রি.-কে সূত্র উল্লেখ করে পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ে সূত্রোক্ত স্মারকে বর্ণিত পুলিশ অধিদফতর কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির গঠন ও কার্যপরিধি এবং উক্ত তদন্ত কমিটি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ফেনীর বিষয়ে কোনো তদন্ত করেছেন কিনা, করে থাকলে কোন এখতিয়ার বলে করেছেন তা স্পষ্টীকরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

নিহত নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ্দৌলার বিরুদ্ধে নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়। গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম শ্রেণির আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে যান অধ্যক্ষের ভাগ্নি পপি। সেখানে আরও কয়েকজন মিলে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেন। গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত। এ ঘটনায় এরপর গত ১৩ এপ্রিল পুলিশ সদর দফতরের উপমহাপরিদর্শক ডিআইজি এস এম রুহুল আমিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট দফতরে গত ৩০ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। ওই প্রতিবেদনে ফেনীর চার পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়ে  শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তীতে ফেনীর তৎকালীন পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। শুরুতে সাময়িক বরখাস্ত করার পর ঢাকা সাইবার আদালতে দায়ের করা মামলায় বর্তমানে কারাগারে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি  মোয়াজ্জেম হোসেন।

সর্বশেষ খবর