বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
দরপতনে শেয়ারবাজার

নিঃস্ব বিনিয়োগকারীরা হতাশ অসহায়

আলী রিয়াজ

প্রতিদিন দরপতনের কারণে লগ্নিকৃত টাকা হারিয়ে দিশাহারা বিনিয়োগকারীরা পুলিশের ভয়ে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে পারছেন না। নিঃস্ব হয়ে গেলেও কেউ কোনো কথা বলতে পারছেন না। যেন কোনো জায়গা নেই। সর্বশেষ গতকালও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক ৭৫ পয়েন্টের বেশি কমেছে। ফলে ফের সূচক পাঁচ হাজার পয়েন্টে নিচে নেমে গেছে। যা গত আড়াই বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম অবস্থান। এদিকে, লেনদেনে মন্দার কারণে গত এক মাসে শেয়ারবাজার থেকে সরকারের রাজস্ব আদায়ে ভাটা পড়েছে। রাজস্ব অর্ধেকের বেশি নিচে নেমে এসেছে। গত জুন মাসের পর থেকে টানা দরপতন চলছে শেয়ারবাজারে। এর মধ্যে মাঝে দু-একদিন সূচক বাড়লেও গড় সূচকের পতন হয়েছে। টানা পতনের হাত থেকে বাঁচাতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ডিএসই বরাবর একাধিকবার স্মারকলিপি দিয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় মতিঝিলের রাস্তায় নেমে মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে দিনের পর দিন। সর্বশেষ গত আগস্টের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেয় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। এতেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিএসইসি ও ডিএসই কর্তৃপক্ষ। উল্টো বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। গত ২৭ আগস্ট মতিঝিল থানায় এ জিডি করা হয়। ডিএসইর জিডিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের নামে পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অভিযোগ আনা হয়। পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে করণীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীরা ডিএসইর সামনে মাইকসহ বিক্ষোভ করে। যাতে ডিএসইর সদস্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াত ও অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যভঘাত ঘটে। তারা বেশ কিছুদিন ধরে এ বিক্ষোভ করে আসছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সম্মানহানিকর মন্তব্য করছে। এই জিডি করার পর বিনিয়োগকারীদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করার সুযোগও বন্ধ হয়ে যায়। এখন পুলিশি ভয়ে কেউ মতিঝিলে মাঠে নামছেন না। ডিএসই বাজার পরিস্থিতিতে দেখা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৩৩ পয়েন্টে। ডিএসইর এই সূচকটি ২ বছর ৮ মাস ২০ দিন বা ৬৬৭ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর ডিএসইএক্স সূচক এই স্থানে ছিল। ওই দিন ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৪ হাজার ৯২৪ পয়েন্টে। ডিএসইতে ৩৫৩টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৭টির বা ১০ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৮৮টির বা ৮২ শতাংশের এবং ২৮টি বা ৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আবদুর রাজ্জাক নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, পুঁজিবাজারের দরপতনসহ সূচক ধস রোধের প্রতিবাদে আমরা (সাধারণ বিনিয়োগকারীরা) রাজপথে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে আসছি। কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা বাজার স্থিতিশীল করার দাবি জানিয়েছি। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সব ধরনের অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এখন উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নিচ্ছে। এটা কোনোভাবে গণতান্ত্রিক নয়। মানুষের অধিকার হরণ। পুঁজি হারিয়ে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সিকিউরিটিজ হাউসগুলোতে পুঁজি হারানোয় বিনিয়োগকারীদের হাহাকার চলছে।

সর্বশেষ খবর