শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আট দিনের সফরে নিউইয়র্ক রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিশেষ ফ্লাইটে তিনি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হন। পরে তিনি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে পৌঁছান। এক রাতের যাত্রাবিরতির পর প্রধানমন্ত্রী আজ ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেবেন। ঢাকায় বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মাহবুব আলী। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধান এবং সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে, জেএফকে এয়ারপোর্টে শেখ হাসিনাকে সাদর অভ্যর্থনা জানাতে আওয়ামী পরিবারে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্য স্টেটের নেতৃবৃন্দও থাকবেন অভ্যর্থনা সমাবেশে। চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবকিছু বর্ণাঢ্য আয়োজনে সম্পন্ন করতে চান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে গতকাল নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২৩ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ দিনে মোট ২৪টি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন শেখ হাসিনা। ২৩ সেপ্টেম্বর ৪টি হলেও ২৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ৬টি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে হবে। গতবারের মতো এবারও নিজ খরচে এফবিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিমের নেতৃত্বে ১৩৩ সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল আসছেন মার্কিন ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলতে। সরকারি প্রতিনিধি দলে এবারও বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের খ্যাতিমান ব্যক্তিরা থাকবেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছাড়াও রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন। আরও আসবেন শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, পরিবেশ মন্ত্রী, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও আসছেন প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার পাশাপাশি এ সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ একাধিক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। এবারের সফরে তাকে দুটি সম্মাননা দেওয়া হবে। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই) তাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত করবে। আর জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ ২৬ সেপ্টেম্বর ‘অ্যান ইভনিং টু অনার হার এক্সিলেন্সি প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করবেন।

বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা-স্বাগত শুভেচ্ছা : নিউইয়র্ক থেকে এনআরবি নিউজ জানিয়েছে, ‘শেখ হাসিনার আগমন-শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা-অভিনন্দন-শুভেচ্ছা’ ইত্যাদি স্লোগানে প্রকম্পিত হলো নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সফরের সমর্থনে জনসংযোগ কর্মসূচির আওতায় বুধবার সন্ধ্যায় এ র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয় নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে। এর আগে পালকি পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর’ প্রস্তুতি সভায় সবাই দীপ্ত প্রত্যয়ে অঙ্গীকার করেন, জেএফকে এয়ারপোর্টে বিপুল লোকসমাগম ঘটিয়ে শেখ হাসিনাকে সাদর অভ্যর্থনা জানানো হবে। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী এবং সঞ্চালনা করেন যুগ্ম সম্পাদক মিনহাজ শরিফ রাসেল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে সর্বস্তরের প্রবাসীর সমাগম ঘটাতে দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান সভাপতি জাকারিয়া। আরও জানানো হয়, ২২ সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত প্রতিদিনই সিটির বিভিন্ন স্থানে জনসংযোগ র‌্যালি করা হবে শেখ হাসিনার আগমনের সমর্থনে। নানাবিধ কারণে এবার জেএফকে এয়ারপোর্টে কালো পতাকা প্রদর্শন কিংবা বিক্ষোভ দেখাবে না বিএনপি। এর ফলে উত্তেজনা কিছুটা কম পরিলক্ষিত হলেও আওয়ামী লীগের বিবদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। এ থেকেও সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এ গ্রুপিং শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে ড. সিদ্দিকুর রহমানকে সরানোর দাবি থেকে। উল্লেখ্য, তিন বছরের জন্য গঠিত কমিটির মেয়াদ এখন ৮ বছরে পড়েছে। তবুও সম্মেলন দিয়ে নতুন নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে গতিশীল করতে সীমাহীন কার্পণ্য করছেন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির এই সভাপতি।

সর্বশেষ খবর