শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
কী হচ্ছে বড় দুই দলে

সম্মেলনেই ব্যস্ত আওয়ামী লীগ

শাবান মাহমুদ ও রফিকুল ইসলাম রনি

সম্মেলনেই ব্যস্ত আওয়ামী লীগ

সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত ১০টি উপকমিটি দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সংশোধন-সংযোজন চলছে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের। চলছে জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা ও সম্মেলন। দম ফেলার সময় নেই কেন্দ্রীয় নেতাদের। সম্মেলনকে ঘিরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সরগরম। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডি কার্যালয়েও শীর্ষ নেতাদের নানামুখী তৎপরতা। তৃণমূলেও বইছে সম্মেলনী হাওয়া। কাক্সিক্ষত পদে আসতে কেন্দ্রের পাশাপাশি তৃণমূলেও শুরু হয়েছে নেতাদের জোর তৎপরতা। জেলা পর্যায়ের সম্মেলন তৃণমূল নেতাদের চাঙ্গা করলেও সবার দৃষ্টি এখন ২০-২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ২১তম ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে। আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র মতে, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে এবার বড় ধরনের চমক আসছে। চলমান শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে সহযোগী সংগঠনের মতো কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও বাদ পড়বেন বির্তকিতরা। কেন্দ্রে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন অতীতে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত, দেশব্যাপী পরিচিতি, দক্ষ সংগঠক ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের সাবেক ছাত্রনেতারা। কেন্দ্রে নতুন মুখ যারা আসছেন তাদের একটি খসড়া তালিকাও প্রস্তুত। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপক হোমওয়ার্ক করছেন। সূত্রটি জানায়, টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ চলমান বাস্তবতায় কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে যারা সক্রিয় তাদেরই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। দলে অনুপ্রবেশকারী বিতর্ক তীব্র হয়ে ওঠায় সভানেত্রী দলের কেন্দ্রীয় কাঠামো ঢেলে সাজাতে চান মাঠের রাজনীতিবিদদের দিয়ে। যারা ত্যাগ ও আদর্শে মহিমান্বিত তারাই শেখ হাসিনার দৃষ্টি কাড়ছেন। মাঠের নেতারাও চান দলে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন হোক। দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সম্মেলন ঘিরে চলছে কর্মযজ্ঞ। প্রতিদিনই কোনো না কোনো উপজেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে কমপক্ষে ৪০টি জেলার সম্মেলন কেন্দ্রের আগেই শেষ করার টার্গেট রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সবকিছু মনিটরিং করছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকালও তিনি দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় অফিসে বৈঠকে বসেন। এতে জেলা সম্মেলনগুলো দ্রুত করা, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সব ধরনের প্রস্তুতিতে জোর দেওয়া হয় বৈঠকে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদউত্তীর্ণ সব জেলার সম্মেলন করার টার্গেট রয়েছে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে ঘিরে বিভিন্ন উপকমিটির বৈঠক নিয়মিত বসছে।

গঠনতন্ত্র উপকমিটি দলের গঠনতন্ত্র সশোধন ও সংযোজনের কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে জেলা নেতাদের মতামত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের সুপারিশ ও মতামত লিখিত আকারে কেন্দ্রে পাঠাতে বলা হয়েছে। গণতন্ত্র উপকমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেছেন, গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিষয়ে আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চিঠি দিয়েছি। পরিবর্তন ও পরিবর্ধনে তাদের যদি কোনো সুপারিশ ও মতামত থাকে তারা দিতে পারবেন। দলের কেন্দ্রীয় ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা সুপারিশ বা মতামত দিতে পারবেন। এসব সুপারিশ ও মতামত কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে উপস্থাপন করা হবে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই চারটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে গত ৬ নভেম্বর কৃষক লীগের সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। আজ শনিবার জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন হচ্ছে। এ ছাড়াও আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সম্মেলন হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন আগামী ৩০ নভেম্বর ঘোষণা করা হয়েছে।  খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে আটটি জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ৪৯টি উপজেলার সম্মেলন শেষ হবে। আমরা পুরোদমে সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত।’ তিনি জানান, ২৮ নভেম্বর কুষ্টিয়া, ২৯ নভেম্বর যশোর, ৪ ডিসেম্বর নড়াইল, ৭ নভেম্বর খুলনা মহানগর, ৮ ডিসেম্বর খুলনা জেলা, ৯ ডিসেম্বর বাগেরহাট, ১২ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সিলেট বিভাগের পাঁচ জেলার মধ্যে আগামী ১ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ, ৫ ডিসেম্বর সিলেট জেলা, ৩০ ডিসেম্বর সিলেট মহানগর, ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, রাজশাহী বিভাগের নয় জেলার মধ্যে আগামী ৪ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা, ৭ ডিসেম্বর বগুড়া, ২৭ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।  রংপুর বিভাগের নয় জেলার মধ্যে ১০ ডিসেম্বর পঞ্চগড়, ৯ ডিসেম্বর লালমনিরহাট, ২৬ নভেম্বর রংপুর জেলা, ২৭ নভেম্বর রংপুর মহানগর, ৮ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলা সম্মেলন হবে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক।  চট্টগ্রাম বিভাগের ১৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে পাঁচটির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী ২১ নভেম্বর নোয়াখালী, ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম উত্তর, ২৪ নভেম্বর খাগড়াছড়ি, ২৫ নভেম্বর রাঙামাটি, ২৬ নভেম্বর বান্দরবান, ৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সম্মেলন হবে।’ বরিশাল বিভাগে রয়েছে সাত জেলা। এ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, আগামী ১ ডিসেম্বর বরগুনা, ২ ডিসেম্বর পটুয়াখালী, ৩ ডিসেম্বর পিরোজপুর, ৭ ডিসেম্বর বরিশাল মহানগর ও ৮ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার সম্মেলন হবে।

সর্বশেষ খবর