রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চারদিকে ষড়যন্ত্রের গন্ধ

সরকারকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে বিশ্লেষকদের অভিমত

আরাফাত মুন্না

আওয়ামী লীগ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চরদিকে নীরব ষড়যন্ত্র চলছে। পর পর তিনটি রেল দুর্ঘটনায় এর কিছুটা আলামতও পাওয়া গেছে। প্রশাসনসহ বিভিন্ন খাতে সংকট তৈরি করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে তৎপর ষড়যন্ত্রকারীরা। বাজার অস্থিতিশীল করতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ছোটখাটো ঘটনায় বড় বড় প্রতিক্রিয়া দেখানোও ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করেন অনেকে।

বিরোধী রাজনৈতিক দল জোটের পাশাপাশি আর্থিক খাতের দুর্নীতিবাজরাও এসব ষড়যন্ত্রে ইন্ধন জোগাচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনসহ অনেক ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের মতে, দেশের বৃহত্তর উন্নয়নের স্বার্থে সরকারকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সব ধরনের নীরব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে গণতান্ত্রিক পরিবেশের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। সূত্রমতে, সরকারের উন্নয়ন সাফল্য ও দেশে-বিদেশে ঈর্ষণীয় ইতিবাচক ইমেজ নষ্ট করতে নানা কায়দায় ষড়যন্ত্রকারীরা প্রচারণা চালাচ্ছে। এমনকি আন্তর্জাতিক মিডিয়াকেও কোনো কোনো বিষয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। চক্রান্তকারীদের লক্ষ্য সরকারকে বেকায়দায় ফেলে স্বার্থ হাসিল করা। পর পর রেল দুর্ঘটনা বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন তৈরি করেছে। এর মধ্যে যোগ হয়েছে পিয়াজ নিয়ে সিন্ডিকেটের তৎপরতা। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঢু মারলে এমন বেশ কিছু তৎপরতা চোখে পড়ে। নানা ধরনের ফেক আইডি বা প্রোফাইল থেকে ছড়ানো হচ্ছে ভুয়া খবর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা মনে করি, শত্রু দেশের বাইরে এবং ভিতরেও। শত্রুরা কিন্তু নতুন নয়। সেই ’৭১ সাল থেকে তারা সক্রিয়। যারা বাংলাদেশ সৃষ্টি চায়নি। তারা যখনই সুযোগ পায়, তখনই ছোবল মারে। সম্প্রতি ভোলার ঘটনা থেকে রেল দুর্ঘটনা, সবই কিন্তু ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাগুলো কিন্তু চিন্তার বিষয়। আজগুবি ব্যাপার নিয়ে সেখানে আন্দোলন করা হচ্ছে। এর আগে কোটা ও নিরাপদ সড়কের ইস্যুতেও একই ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে আমার মনে হয়, আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কাজ করছে। তিনি বলেন, বিদেশে তারেক জিয়া, বিচারপতি এস কে সিনহারা বসে আছেন। তারা কিন্তু চুপচাপ বসে থাকবেন না। তাই এসব ঘটনায় একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে ষড়যন্ত্রকারীদের মূলোৎপাটন করতে হবে।

অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, কেউ ভালো কাজ করলে তিনি বাধার মুখোমুখি হতে পারেন, এটা স্বাভাবিক। খারাপ মানুষগুলো নানাভাবে ভালো কাজকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে। ফলে সরকার যেহেতু ভালো কাজ করছে, তাই সরকারের বিরুদ্ধেও বাধা আসতে পারে। এজন্য সরকারকে অনেক বেশি সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান সরকার অনেক ভালো কাজ করছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। ফলে দুর্নীতিবাজ বা গডফাদাররা তো আর বসে থাকবে না। তারা সবসময়ই সরকারের এসব কাজের কাউন্টার দিতে চেষ্টা করবে। সুযোগ খুঁজবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে। এজন্য সরকারের সব এজেন্সিকে সতর্ক থাকতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে জনপ্রতিনিধিদেরও।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যখন এতগুলো ঘটনা একসঙ্গে ঘটবে তখন আমরা স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেব, এর পেছনে কোনো সংগঠিত শক্তি কাজ করছে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমরা দেখেছি যারা বিরোধী দল নামে পরিচিত, তারা শাসন পরিবর্তনের জন্য গণতান্ত্রিক পন্থায় পেরে উঠছে না বা সেই চেষ্টা করছে না। তখন স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতায় যেতে তারা অগণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করে বা অদৃশ্য শক্তির সাহায্য নেয়। ’৭৫ এর ১৫ আগস্টেও আমরা সেই ঘটনা দেখেছি। তিনি বলেন, জনপ্রতিক্রিয়া যেখানে তৈরি হতে পারে, ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু সেগুলোই বেছে নিচ্ছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে আমরা দেখেছি রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ছিল। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনেও দেখেছি, সেখানে বিভিন্ন অপশক্তির অর্থ লেনদেনের খবরও আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি। তাই দেশের চলমান অস্থিরতার পেছনে রাজনৈতিক কোনো অপশক্তি কাজ করছে না, এটিকে আমরা বাদ দিতে পারছি না। এটিকে আরও গভীরভাবে তদন্ত করে ওই অপশক্তিকে চিহ্নিত করতে হবে। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে ব্যাহত করার জন্যও ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে মনে করেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর জিনাত হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে হঠাৎ করেই এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এটা কিন্তু এমনি এমনি হয়নি। এটা কেউ তৈরি করেছে। বিশেষ করে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে। মনে হচ্ছে এক ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দেখছি ভিসিবিরোধী আন্দোলন হচ্ছে। যে বিষয় নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেটা কিন্তু সমাধান হয়ে গেছে। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রাব্বানী-শোভনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যদি এর সঙ্গে উপাচার্যের কোনো দোষ পেতেন অবশ্যই তাকেও সরিয়ে দিতেন। তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনের পরও এই আন্দোলন বন্ধ না করাই প্রমাণ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অচলাবস্থা তৈরি করতে একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে জাবির আন্দোলন নিয়ে দেওয়া পোস্টগুলোর ভাষা দেখলেই বোঝা যাবে কেমন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কারা উসকানি দিচ্ছে। আর জাবিতে কয়েকজন শিক্ষকও রয়েছেন, যারা সবসময়ই উপাচার্যবিরোধী প্লাটফর্ম তৈরি করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর