শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
চট্টগ্রাম

ক্যাসিনোর চেয়েও ভয়াবহ কারসাজি

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

এক সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। অস্থির অবস্থা চলছে চাল, ডাল, আলু, পিয়াজ, মরিচ ও মসলার দাম নিয়ে। চালের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। বেড়েছে চিনির দামও। চট্টগ্রামের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এক মাস আগেও প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ২২০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে প্রতিকেজি এলাচের দাম বেড়েছে ৮৩০ টাকা। গত প্রায় দুই মাস ধরেই পিয়াজ নিয়ে চলছে চরম কারসাজি। দুই মাসের ব্যবধানে প্রতিকেজি পিয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ২০০ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, হাতেগোনা কিছু ব্যবসায়ীর কারণে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। এর চরম খেসারত দিতে হবে সবাইকে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিকল্পনার অভাব, অব্যবস্থাপনার কারণে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া রাতারাতি দ্রব্যের মূল্য পরিবর্তন এবং অসাধু কিছু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পণ্য আমদানিকারকের সংখ্যাও দিন দিন কমছে। তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম সংকট। ক্যাসিনো কান্ডের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করছে তারা। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, ‘পণ্যের চাহিদা বিবেচনা করে পরিকল্পিতভাবে সরবরাহ এবং আমদানি করা হলে ভোগ্যপণ্যের বাজারে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। খাতুনগঞ্জের পাইকারি পিয়াজ বিক্রেতা মেসার্স আবুল বশর অ্যান্ড সন্সের মালিক আবুল বশর বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রামে দেশীয় কোনো পিয়াজ বাজারে নেই। এখন চাহিদা পূরণ করছে চায় না, মিয়ানমার ও মিসরের পিয়াজ। এখন  পাইকারিতে প্রতিকেজি চায়নার পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, মিয়ানমারের পিয়াজ ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা এবং মিসরের পিয়াজ ১১০ থেকে-১১২ টাকা।’ মসলাপণ্যের ব্যবসায়ী মো. আলম বলেন, ‘পণ্যের সরবরাহ থাকলে দাম স্থিতিশীল থাকে। তবে হাতেগোনা কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে যে বাজার অস্থির হয় তাও অস্বীকার করা যায় না।’ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হাতেগোনা কিছু ব্যবসায়ী চাল, পামঅয়েল, সয়াবিন তেল, চিনি, মসলা পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা শুধু স্লিপ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা শুধু স্লিপ ক্রয় করে অল্প টাকায় কয়েকগুণ বেশি দাম বাড়িয়ে কৌশলে লাভ করেন কোটি কোটি টাকা।

প্রতিদিনই বাড়ছে মূল্য : বৃহস্পতিবার পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি চায়নার পিয়াজ বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, মিয়ানমারের পিয়াজ ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা এবং মিসরের পিয়াজ ১১০ থেকে-১১২ টাকা। সরকারি সংস্থা টিসিবি ৪৫ টাকায় পিয়াজ বিক্রি করলেও তা প্রয়োজন ও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাছাড়া চট্টগ্রাম চেম্বারের উদ্যোগে তুরস্কের পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে, প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানেই হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে চালের মূল্য। প্রতিবস্তা গড়ে ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। অতীতে দেশের উত্তরবঙ্গ থেকে চট্টগ্রামে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক চাল আসত। কিন্তু এই সময়ে চাল আসছে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক। এর মধ্যে সিদ্ধ চালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। সপ্তাহখানেক আগে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) জিরাশাইল চাল বিক্রি হয়েছিল দুই হাজার টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৫০ টাকা। পারিসিদ্ধ বিক্রি হতো এক হাজার ৪৫০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬৫০ টাকা। মিনিকেট এক হাজার ৪৫০ থেকে বেড়ে এক হাজার ৮০০ টাকা, স্বর্ণা সিদ্ধ এক হাজার ৪০০ থেকে বেড়ে এক হাজার ৫৫০ টাকা, গুটি সিদ্ধ এক হাজার ২৫০ থেকে বেড়ে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও বর্তমানে পাইজার আতপ বস্তাপ্রতি দাম দুই হাজার ৪০০ থেকে বেড়ে দুই হাজার ৬০০ টাকা, বেতি এক হাজার ৭০০ থেকে বেড়ে এক হাজার ৮০০ টাকা, মিনিকেট আতপ এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিদ্ধ ও আতপের পাশাপাশি সুগন্ধি চালের দামও বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গত ১০ দিনে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির দামও বেড়েছে। গমের দাম বৃদ্ধির কারণে আটা ও ময়দার দামও বেড়েছে। সব কিছুর মতো ডালের বাজারেও চলছে অস্থিরতা। প্রতিটি ডালের দাম ৪-৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মুগ ডালের দাম। হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে গেছে শুকনো মরিচের দাম। কয়েক দিনের ব্যবধানে সব ধরনের মরিচের দাম প্রতিকেজিতে ৩০ থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ের মরিচের দাম কেজিপ্রতি ৪৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা, বিন্দু মরিচ ৪৫ টাকা বেড়ে ২০৫ টাকা, ভারতীয় আমদানিকৃত মরিচ ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার প্রতিমণ পামঅয়েল বিক্রি হয় ২ হাজার ৫৮০ টাকা। এক মাস আগেও যার মূল্য ছিল ২ হাজার ২৩০ টাকা। নিত্য এ পণ্যটির দাম বাড়ছে প্রতি ঘণ্টায়। কার্যত, মিলগেট থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার প্রতিমণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ২ হাজার ৯৮০ টাকা।

গরম মসলার বাজারে গত ছয় মাস ধরে আলোচিত নাম এলাচ। গত ছয় মাস ধরে এর মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্ববাজারে চাহিদা ও দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারেও দাম বেড়ে যায়। এক সময় কেজি প্রতি এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হতো। দাম বেড়ে এক মাস আগেও দুই হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বৈশ্বিক নতুন উৎপাদন মৌসুম শুরু হওয়ায় পণ্যটির দাম কমে যাওয়ার কথা থাকলেও হঠাৎ করে ফের বেড়ে যায়। এর মধ্যে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে এলাচের পাইকারি দাম বাড়তে থাকে। গত বৃহস্পতিবার পাইকারি বাজারে এলাচ বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। বর্তমানে ২০ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, প্রতিকেজি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, শিম ৭০ টাকা, বাঁধা কপি ৫০-৬০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, টমেটো ৮০-১০০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০-৫০ টাকা ও মুলা ৫০-৬০ টাকা।

সর্বশেষ খবর