মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকার

বিএনপির ঘরেই গণতন্ত্র নেই : ওবায়দুল কাদের

রফিকুল ইসলাম রনি

বিএনপির ঘরেই গণতন্ত্র নেই : ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র আছে। গণতন্ত্র নেই বিএনপির ভিতরে। তাদের ঘরে এবং দলেই গণতন্ত্র নেই। তারা কীভাবে গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলে?

গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। দীর্ঘ আলাপকালে গত এক বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য, দলের সাংগঠনিক তৎপরতা, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের পাশাপাশি মাঠের বিরোধী দল বিএনপি নিয়ে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের এক বছর আগে বিএনপির সম্মেলন হয়েছে। আওয়ামী লীগ তিন বছরের মাথায় আবারও সম্মেলন শেষ করেছে। সম্মেলনের পর গত সাড়ে চার বছরে ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করতে পারেনি বিএনপি। ছাত্রদলের কমিটি হয় ঘরে বসে। দুর্নীতির দায়ে দন্ডিত বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর সন্তান পলাতক আসামি তারেক রহমানই দলটির হর্তাকর্তা, বিধাতা। এখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম তাঁদের ইয়েস ম্যান হিসেবে কাজ করেন। ফখরুল সাহেব কোন তন্ত্রে আছেন? সরকার গত এক বছরে গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছে- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, গণতন্ত্র হত্যাকারী দল বিএনপির মহাসচিবের মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। যে দলের ভিতরে গণতন্ত্রের চর্চা নেই, তারা কীভাবে গণতন্ত্রের সবক দেয়? ঢাউস মার্কা কমিটি নিয়েও কখনো নিয়মিত মিটিং করতে পারে না। জেলা-উপজেলায় সম্মেলনে গিয়ে নেতাদের মারামারিতে পালিয়ে আসতে হয় কেন্দ্রীয় নেতাদের। আমরা দুই মাস পরপর কার্যনির্বাহী সংসদের মিটিং করি। প্রতি মাসে সম্পাদকম-লীর সভা করি। উপদেষ্টাদের নিয়েও যৌথ সভা করা হয়। তাঁরা কি বৈঠক করেন? উপদেষ্টাদের নিয়ে কি বৈঠকে বসেন? তাঁরা সহযোগী সংগঠনের কমিটি দেন ঘরে বসে। আর আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করি। তিনি বলেন, বিএনপি দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পর খুনি ফারুক নিজেই সাক্ষাৎকার দিয়েছে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন। জিয়া খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়াও খুনিদের পুরস্কার দিয়ে বিরোধী দলের চেয়ারে বসিয়েছিলেন। দেশদ্রোহীদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন। তার পরও আমরা বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন করেছি। বিরোধী দলকে বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাইম টার্গেট করে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আল্লাহর রহমতে বঙ্গবন্ধুকন্যা সেদিন বেঁচে গেলেও ২৪ জন দলীয় নেতা-কর্মী প্রাণ হারান। তখনই তো বিএনপির সঙ্গে আমাদের দেয়াল ওঠে। এর পরও বিএনপি নেত্রীর ছোট সন্তান যখন মারা যান, তখন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাড়িতে যান সান্ত্বনা দিতে। সেই বাসায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি প্রধানমন্ত্রীকে। গেট থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়। তার পরও নির্বাচন করার স্বার্থে ২০১৪ সালে বিএনপি নেত্রীকে গণভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি যাননি, বরং প্রধানমন্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এটা দেশবাসী ইতিমধ্যে শুনেছেন। এর পরও বিএনপিকে নিয়ে আমরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংলাপ করেছিলাম।

বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদী সরকার- বিএনপি মহাসচিবের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী সেগুলো সব ছিল বিএনপি সরকার আমলে। তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল। সে কারণে বিএনপিকে আন্তর্জাতিকভাবেও সন্ত্রাসী দল হিসেবে কানাডার ফেডারেল কোর্ট রায় দিয়েছে। মানি লন্ডারিংয়ের জন্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও দন্ডিত হয়েছেন। খালেদা জিয়ার আরেক সন্তান আরাফাত রহমান কোকোর পাচারকৃত অর্থ আমরা ফেরত নিয়ে এসেছি। এগুলো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে ধরা পড়েছে। কাজেই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মানি লন্ডারিংয়ে বিএনপি চ্যাম্পিয়ন। তাদের মুখে এ সরকারকে ফ্যাসিবাদী সরকার বলা বেমানান। তার পরও আমরা একটি শক্তিশালী বিরোধী দল চাই। বিএনপির প্রতি আহ্বান থাকবে- গণতন্ত্রের পথে আসুন। গণতান্ত্রিক রাজনীতি করে সরকারের খারাপ দিক সমালোচনা করুন। ভালো কাজের প্রশংসা করুন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের জনগণের মন জয় করতে পেরেছে বলেই আমরা টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করেছি। জনসমর্থন আছে বলেই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজকে দৃশ্যমান। এগিয়ে চলেছে মেট্রোরেলের কাজ। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ, রোহিঙ্গা সংকটে মানবতা প্রদর্শনসহ নানা ইস্যুতে সফলতার কারণে বছরজুড়ে বিশ্বে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, সবচাইতে বড় কথা হলো, গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশকে যে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছে সেখান থেকে গত এক বছরে একচুলও আমরা বিচ্যুত হইনি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছি। নিজ দল থেকেই শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছি। তিনি বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা ছিল বলেই চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে আমাদের মোট বাজেট ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা; যা ২০০৬ সালে ছিল মাত্র ৬১ কোটি টাকা। জাতীয় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে। মানুষের মাথাপিছু আয় প্রায় ২ হাজার ডলার। রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে ২২ হাজার ৫৬২ মেগাওয়াট; যা ২০০৬ সালে ছিল মাত্র ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। ৯৫ শতাংশ মানুষ আজকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে। শিক্ষার হার বেড়েছে। দারিদ্র্য আজকে এ বছরে ২২ থেকে ১৯ শতাংশে। হতদরিদ্র ১০ শতাংশ নেমে এসেছে। এটা শেখ হাসিনার ম্যাজিক লিডারশিপ।

বিশ্বসভা বাংলাদেশকে বিশেষ মর্যাদা দেয়। এখন আমাদের স্যাটেলাইট মহাকাশে।

আগামী দিনে কী চ্যালেঞ্জ আছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত সময়ে আমাদের যেমন সাফল্য আছে, সামনে তেমন চ্যালেঞ্জও আছে। জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হচ্ছে। তারা নিষ্ক্রিয় হচ্ছে। তবে তারা তলে তলে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে বলে মাঝেমধ্যে প্রতীয়মান হয়। আপাতত দুর্বল মনে হলেও তারা তলে তলে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এটা বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী চার বছরে মেগা প্রজেক্টগুলো শেষ করব। এর মধ্যে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস সড়ক, উড়ালসড়কসহ সরকারের উন্নয়নের মহাপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করব। এ ছাড়া প্রতিটি পরিবারে বেকার তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। উন্নয়নের চাকার সঙ্গে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে না পারলে, তারুণ্যকে কাজে লাগাতে না পারলে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হবে না। হতাশ তরুণ সমাজ নানা অপকর্মে জড়িয়ে যায়, মাদক-সন্ত্রাসের দিকে ঝুঁকে পড়ে। সে কারণে বেকার তরুণদের কর্মসংস্থান করাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা দুর্নীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিই না। আমাদের আমলে কোনো হাওয়া ভবন-খাওয়া ভবন সৃষ্টি হয়নি। বিএনপি আমলে সরকারের ভিতরে আরেকটি সরকার গঠন করে কমিশন বাণিজ্য করা হতো। কমিশনের সেই অর্থ বিদেশে পাচার করা হতো। বরং আওয়ামী লীগ নিজ দলের ভিতরে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। নিজ দলের অনেক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাউকে কাউকে সংগঠনের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিএনপি আমলে কি এমন রেকর্ড কেউ দেখাতে পারবেন? বরং তারা দুর্নীতিকেই নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিল। যে কারণে তাদের আমলে কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমরা দেশের উন্নয়ন করেছি বলেই টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছি।

সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের আঁচ পেয়ে বিএনপি নেতারা আবোল-তাবোল বকছেন। বিএনপি আসলে নির্বাচনের আগেই হেরে গেছে, যে কারণে তাদের মুখে মুখে পরাজয়ের সুর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর