আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ভোট চাওয়া ছাড়া এমপিরা সব করতে পারবে। তবে পথসভা হবে আমরা যাব না। বাড়ি বাড়ি যেয়ে প্রচার, হয়তো সেটা আমরা করব না। কিন্তু আমরা নির্বাচনী অফিসে বসে পরিকল্পনা করতে পারি। এতে কোনো বাধা নাই।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, এমপিরা নির্বাচনের প্রচারণা, নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে শেষে তারা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। সিইসি কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম।
বৈঠক শেষে তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সুন্দর, গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনও আইনের বাইরে যাবে না। আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি আইনের পরিপন্থী কিছু করব না। উত্তর-দক্ষিণ সিটিতে অবাধ-নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ নির্বাচন হবে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। যেহেতু আমরা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, এমন কোনো কাজ করব না, যাতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচনে আমাদের নেতা-কর্মীরা ঘরে ঘরে যাবে একাধিকবার। গ্যারান্টি দিতে পারিÑএ নির্বাচনে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবে। একটা অবাধ-নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনী আচরণবিধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অর্থÑপ্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমপদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র। এই যে কথাটা আমরা তুলে ধরেছি এবং তারা আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। জাতীয় সংসদের সদস্যরা কিন্তু সুবিধাভোগী না এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিÑ যদিও আমিও নিজে ব্যক্তিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ না।’
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সুবিধাভোগী বলতে বোঝায় অফিস অব প্রফিট। আমরা এমপিরা তা পাই না। মন্ত্রীরা পায়। হুইপরা পায়। প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার তারা তো পায়ই। এটাকে কমিশন পরিবর্তন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সম্ভব হয়নি। আমরাও বলেছি, ঠিক আছে, এটা পরিবর্তন করতে বলব না। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী এলাকায় আমরা ‘মুজিব বর্ষ’ পালন করতে পারব। তাদের অনুরোধÑ আমাদের মতো যারা এমপি, তারা যেন ভোট না চাই। আমার সঙ্গে যে এমপি নয়, সে কিন্তু ভোট চাইতে পারবে। এ জন্য আমাদের আলোচনা খুব ক্লিয়ার হয়েছে। খুব ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মেনে গেলাম, যে আমরা এমপিরা ভোট চাইব না। কিন্তু মাহবুব তালুকদার যে বলেছেন, আমরা ঘরে বসেও কোনো কিছুই করতে পারব না, এটা কিন্তু ঠিক না। আমার বাসায় লোক আসবে, আমি কেন কথা বলতে পারব না। মিলাদ মাহফিলে তো কোনো বাধা নাই। কর্মীদের দিকনির্দেশনা- এগুলো ঘরের মধ্যে বসে এমপিরা করতে পারবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে শেখ সেলিম, হানিফ, মির্জা আজম সাহেবকে নির্বাচনী সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা অফিসে বসে পরিকল্পনা করতে পারি। এতে কোনো বাধা নাই। এমপিরা নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যাপারে কোনো প্রচারে যেতে পারব না। এটা আমরা মেনে নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সিইসিসহ পাঁচজনের চারজন, আমি যে বক্তব্য দিলাম এর সঙ্গে তারা একমত পোষণ করেছেন। এটা বাস্তবসম্মত। আর মাহবুব তালুকদার বলেছেন, আমি অন্য কমিশনারদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি।’
এমপিরা প্রচারে অংশ নিতে পারবে না : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, এমপিরা সব কিছুই করতে পারবেন, কেবল মাত্র নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা, নির্বাচনের প্রচারণা, নির্বাচনী কার্যক্রম তারা করতে পারবেন না। তিনি বলেন, এমপিদের নির্বাচনের বাইরে যে কাজ, সেখান থেকে তাঁদের নিষ্ক্রিয় করার কোনো সুযোগ আমাদের নেই।
গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এক প্রশ্নে সিইসি বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো সমন্বয় সংসদ সদস্যরা করতে পারবেন না। নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো কাজ তারা ঘরোয়া বা বাইরে হোক, করতে পারবেন না। এটাই আাচরণবিধিতে বলা হয়েছে। এটা তাঁদের আমরা বুঝিয়ে বলেছি। অবশ্য সিইসি এটাও বলেছেন, ‘তবে ঘরে বসে কী করবেন, সেটা আমি কী করে বলব?’ তিনি বলেন, ‘সমন্বয়কের কমিটিতে কে আছে, অফিশিয়ালি তেমন কিছু পাইনি। পেলে তাদের নিষেধ করব সমন্বয়কারী হিসেবে তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।’ প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে এমপিরা থাকতে পারবেন কি না প্রশ্নে নূরুল হুদা বলেন, ‘প্রার্থীর সঙ্গে এমপিরা থাকতে পারবেন কি না, আইনে এমন ডিটেইলস বাধা-নিষেধ নেই। এখন তারা পার্টির লোক হিসেবে একই সঙ্গে যদি কোনো এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে থেকে থাকে, সেখানে যেতে পারবেন। রাজনৈতিক কর্মকা- যেমন মুজিব বর্ষ পালন হচ্ছে, সেখানে তো যে কোনো সভা-সমাবেশের আয়োজন হতে পারে, সেখানে তো সবাই যেতে পারবে। শুধু ভোট চাইতে পারবেন না।’ সিইসি বলেন, আওয়ামী লীগের এই প্রতিনিধি দলটি কোনো প্রার্থী বা দলের বিষয়ে আলোচনা করতে আসেনি। তাঁরা নির্বাচনী আচরণবিধির ব্যাখ্যা জানতে এসেছিলেন।
এমপিদের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আইন বাতিল চায় ১৪ দল : ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আইন বাতিল করার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট। গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের ধানমন্ডির বাসভবনে অনুষ্ঠিত জোটের এক বিশেষ সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে সংসদ সদস্যরা সিটি নির্বাচনে প্রচার চালাতে পারবেন না। একজন কাউন্সিলর প্রার্থী যিনি সংসদ নির্বাচনের সময় এমপির পক্ষে কাজ করেছেন, এখন সেই এমপি তার নির্বাচনে রিটার্ন দিতে পারবেন না, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা নাগরিক অধিকার খর্বের জন্য করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রীরা প্রচার চালাতে পারলে বর্তমান এমপিরা পারবেন না কেন? এটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলো কীভাবে? এ আইন বাতিলের বিবেচনা করা উচিত। স্থানীয় হলেও একে অরাজনৈতিক নির্বাচন বলার সুযোগ নেই। সভাপতির বক্তৃতায় মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী এমপিরা প্রচারে যেতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশন এটা বলায় আমরা দুঃখ পেয়েছি।
আমরা মনে করি সংসদে এ আইনটি পরিবর্তন করা দরকার। বিএনপি নেতারা টপ টু বটম নির্বাচনের প্রচারে নামতে পারবেন, আমরা পারব না, এটা দুঃখজনক। তার পরও যেহেতু নির্বাচন কমিশনের আইন আছে আমরা তা মেনেই চলছি। এ সিটি নির্বাচন হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির লড়াই। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের জন্য একটি চ্যালেঞ্জের।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার, গণতন্ত্রী পার্টির ডা. অধ্যাপক শহীদুল্লাহ সিকদার, ডা. শাহাদাত হোসেন, বাসদের রেজাউর রশীদ খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        