দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, চুনোপুঁটি আর রাঘববোয়াল কোনোটিই না, আমরা ধরতে চাই যারা দুর্নীতি করছে বা করতে চায় তাদের। যারা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে, ঘুষ খেয়েছে, জনগণের হক যারা মেরেছে, তাদের কাউকে ছাড়ব না। গতকাল দুদক কার্যালয়ে দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২০ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে দুদক কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, চ্যানেল আই-এর পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজসহ অন্যরা বক্তব্য দেন। ইকবাল মাহমুদ আরও বলেন, আমরা মানুষের নাম পদবি দেখছি না, আমরা দেখছি দুর্নীতি। নির্দিষ্টভাবে পিএ, পিএস, এমপি, মন্ত্রী বা সচিব কারও ব্যাপারে বক্তব্য নাই আমাদের। যিনিই দুর্নীতির গহ্বরে পা দিয়েছেন, তাকেই আমরা ডাকছি, জিজ্ঞাসাবাদ করছি, তার বিরুদ্ধেই আমাদের সংগ্রাম। ওয়েট অ্যান্ড সি, আমরা কাউকে বাদ দিচ্ছি না। আমরা কাউকে বাদ দিলে, কাউকে হয়রানি করলে সমালোচনা করবেন। কোনো কোনো দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধি হওয়ার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে কী করছে দুদক, এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, জেলখানায় থেকেও অনেকে নির্বাচন করে। ইলেকশন করুক বা না করুক আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। পিএস, এপিএস, পিএ’র দায় অন্যরা কেন নেবে? আমি কেন নেব? অন্যায়ের দায় নিজের। পিএস, এপিএস, পিএ’রা রাঘববোয়ালদের নাম ব্যবহার করলে তাদেরও এখানে ডাকা হবে। যত বড় ক্ষমতাশালী হোক না কেন, তাকে দুদকের বারান্দায় আসতে হয়েছে, মন্তব্য করেন দুদক চেয়ারম্যান। মেয়র সাঈদ খোকনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের চোখ নেই এমন নয়।
যেখানেই দুর্নীতি হয়েছে, সেখান থেকেই তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। জানা মতে, তাকে নিয়ে একটি মামলা হাই কোর্টে আছে। ওয়েট অ্যান্ড সি। আমরা দেখি দুর্নীতিটি কীভাবে হয়েছে। আমরা পিএস, এপিএস দিয়ে শেষ করব, এমনটা নয়। এরা ছাড়াও দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন, তাদেরও খুঁজে বের করব আমরা। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের কোনো ভয় নাই। কাউকে এখানে ডাকতে আমাদের কলম কাঁপেনি। বিতর্ক প্রতিযোগিতা সম্পর্কে ইকবাল মাহমুদ বলেন, সারা দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতির নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। এ প্রতিযোগিতা ২০ জানুয়ারি শুরু হয়ে আগামী ৩১ মার্চ শেষ হবে। প্রতিযোগিতাটি স্কুল, উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে শেষে জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মকে সৎ যোগ্য দেশপ্রেমিক ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। কারণ এই শিক্ষার্থীরাই গড়বে আগামীর বাংলাদেশ। তারাই বাংলাদেশের সত্যিকারের মূলধন। দুর্নীতি দমন কমিশনের উদ্যোগে অক্সফাম ইন বাংলাদেশ ও চ্যানেল আইর সহযোগিতায় রয়েছে এ বিতর্ক প্রতিযোগিতার। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, শুধু জিপিএ-৫ বা এ-প্লাস নয়, আমরা চাই মূল্যবোধসম্পন্ন স্বশিক্ষিত মানুষ তৈরি হোক। আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামীর বাংলাদেশ গড়বে।