রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বিপন্ন সেন্টমার্টিন

অজৈব বর্জ্যে দূষণ, পর্যটক নিয়ন্ত্রণের দাবি

শিমুল মাহমুদ, সেন্টমার্টিন থেকে

বিপন্ন সেন্টমার্টিন

সকালে নয়টি বড় জাহাজ ও ৩০টির বেশি কাঠের নৌকায় করে প্রায় পাঁচ হাজার পর্যটক দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ  সেন্টমার্টিনে পা রাখে। বিকালে একইভাবে সমসংখ্যক পর্যটক যার যার গন্তব্যে ফিরে যায়। পর্যটন মৌসুমে এই বিপুলসংখ্যক পর্যটক প্লাস্টিক, পলিথিনসহ হাজারো অজৈব বর্জ্য ফেলে যায় সেন্ট মার্টিনে। অপচনশীল এসব বর্জ্য,  এখানকার ১০৬টি হোটেল-কটেজের বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে সমুদ্রের নীল জল। সৈকতে ডিম পাড়তে পারছে না মা কচ্ছপ। নিত্য দূষণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে সেন্টমার্টিন। এমনকি ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ খ্যাত এই দ্বীপের সুলভ ডাব এখন প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। তাই  সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় পর্যটক নিয়ন্ত্রণ ও দূষণ  রোধের দাবি পরিবেশ সংগঠনগুলোর। উদ্বিগ্ন সরকার ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। তারপরও সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। সেন্টমার্টিনের পরিবেশ দেখতে পরিবেশ অধিদফতরের একটি দল গত বছর সেন্ট মার্টিনে তিন দিন অবস্থান করে। এ সময় তাঁরা পর্যটকবাহী প্রমোদ তরী (জাহাজ) চলাচল, লোকজনের বিচরণ, দ্বীপের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সমুদ্রতলের প্রবাল, শামুক-ঝিনুক নিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। তারা সেন্ট মার্টিনের তিন দিকের প্রবাল আস্তর থেকে বিপুল পরিমাণ পলিথিন, নৌকার মাছ ধরার জাল, প্লাস্টিক  বোতল, ক্যান ও সিগারেটের উচ্ছিষ্ট উদ্ধার করেছেন। দ্বীপের তিন দিকের কয়েক শ’ একর প্রবাল এলাকায় বালুর আস্তর জমে থাকতে দেখেছেন তাঁরা। গতকাল শনিবার  সকালে টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট  থেকে সেন্ট মার্টিনে এসেছে আটটি জাহাজ। এর মধ্যে  কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ, ফারহান ক্রুজ, গ্রীন লাইন, বে ক্রুজসহ সব কটি জাহাজেই পাঁচ শ’র বেশি যাত্রী ছিলেন। এ ছাড়া জাহাজের বাইরে কাঠের ট্রলারে করে সেন্ট মার্টিন এসেছেন আরও সহস্রাধিক যাত্রী।  বেলা ১২টার পর থেকে পর পর সব লঞ্চ, কাঠের বোট, স্পিডবোট সেন্টমার্টিনে ভিড়তে শুরু করে। তখন একে একে সবাই দ্বীপে নেমে আসে। এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা এবং শামুক, ঝিনুক না ধরার অনুরোধ জানানো হয় পর্যটকদের। কিন্তু সে অনুরোধে সাড়া মিলছে কমই। বেড়াতে এসে মানুষ যেন কিছুটা বেসামাল হয়ে যায়। সেন্টমার্টিনের সর্বত্রই নাইলন ও প্লাস্টিক জাত চিপস প্যাকেট, চায়ের কাপ, বোতল, পানির বোতল, পানির গ্লাস, প্লেট, ডাবের পানি খাওয়ার স্ট্র, খাবার প্যাকেট, ভাঙা চশমা বা কাঠি, মাছ ধরার জালের টুকরা, নাইলন দড়ির টুকরা ছাড়াও  পোড়া মাটি ও ইটের ভাঙা টুকরা পড়ে থাকতে দেখা যায়। পর্যটকদের অবহেলা ও উদাসীনতার ছাপ প্রবাল দ্বীপের সর্বত্র। এমনকি সৈকত থেকে লোকজনকে শামুক-ঝিনুক আহরণ করতে দেখা গেছে। লোক সমাগমের কারণে গভীর সমুদ্র থেকে ডিম পাড়তে আসা ক্লান্ত ও দুর্বল মা কচ্ছপগুলো সৈকতে উঠতে পারছে না। চলতি জানুয়ারি মাসের শুরুতে সেন্ট মার্টিনের দেড় কিলোমিটার এলাকা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ১২০ কেজি (৩ মণ) প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসব প্লাস্টিক বর্জ্যরে বেশির ভাগই ছিল একবার ব্যবহারযোগ্য কাপ, প্লেট, চিপসের খালি প্যাকেট। পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য মতে, ৫৯০ হেক্টর আয়তনের ৭ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটারের এই প্রবালদ্বীপে অতিরিক্ত মানুষের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে দ্বীপের পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে।  সেন্ট মার্টিন হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপ ভ্রমণে আসা পর্যটকদের দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় আমরা সচেতন করছি। এখানে পর্যটকদের চাপ খুব বেশি। তাই পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি উদ্যোগ দরকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর