রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বড় অঘটন ঘটতে পারে সিটি ভোটে : সুজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিটি নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, রাতের আঁধারে ক্যাম্প ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনী প্রচারণাকালে অন্য দলের প্রার্থীর ওপর হামলা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গের ব্যাপারে কঠোর হতে না পারলে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। তেমন কিছু ঘটলে তা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে ব্যাহত করবে। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০২০ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সুজনের আহ্বান শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান। বক্তব্য রাখেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দিলীপ কুমার সরকার। উপস্থিত ছিলেন সুজন ঢাকা মহানগর কমিটির ক্যামেলিয়া চৌধুরী ও নাজিমউদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য শফিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনী ছয় মেয়র প্রার্থীর আয়-ব্যয়সহ সম্পদের বিবরণ-সংবলিত সুজনের একটি প্রচারপত্র বিলি করা হয়। এতে বলা হয়, প্রার্থীদের তথ্যগুলো কি বিশ্বাসযোগ্য? প্রার্থী কি যোগ্যতা ও দক্ষতাসম্পন্ন? অসৎ অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে আপনিও অনেকাংশে দায়ী। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচনী ম্যানুয়ালে প্রার্থীদের হলফনামায় প্রদান করা তথ্যগুলো প্রকাশের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। অতীতে আমরা সব সময় এই তথ্যগুলো পেয়েছি। কিন্তু এবার আমরা তথ্য পাচ্ছি না। এ জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে উকিল নোটিসও দিয়েছি। কোনো জবাব পাইনি।’ তিনি বলেন, ‘আজকে উপস্থাপিত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের আধিপত্য বেশি। এর মানে আমাদের রাজনীতি ব্যবসায়ীদের করায়ত্ত হয়ে যাচ্ছে। আরেকটি জিনিস হলো, প্রার্থীদের মানের অবনতি ঘটছে। কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে, স্বল্প আয়ের প্রার্থীর সংখ্যা কমছে। একই সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতা কম এমন প্রার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে।’ বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এই নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হচ্ছে কি না আমরা নিশ্চিত নই। কারণ মেয়র পদে নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হওয়ার কথা থাকলেও কাউন্সিলর পদে দলীয় ভিত্তিতে হওয়ার কথা নয়। কিন্তু দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়েছে আইনকানুন বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে।’ এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, হলফনামায় দেওয়া তথ্যের সঠিকতা যাচাই করা নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য। তথ্য যদি যাচাই না করা হয় তাহলে এই তথ্য নেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। এ জন্য কমিশন যাতে তথ্য যাচাই করে এ জন্য সবাইকে জোর দিতে হবে। নিজাম উদ্দিন বলেন, এবার সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু নাগরিকদের ইভিএম ব্যবহারের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।

ইভিএম নিয়ে বিতর্ক আছে : আসন্ন সিটি নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা শুরু থেকেই বিতর্ক আছে। সব রাজনৈতিক দল একমত না হলেও, এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহারে বদ্ধপরিকর। সুজন মনে করে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম বাধা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা। নির্বাচন কমিশনের ওপর যদি ভোটারদের আস্থা থাকত, তবে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে হয়তো প্রশ্ন উঠত না।

আচরণবিধি ভঙ্গ করা হচ্ছে : আচরণবিধি বিষয়ে সুজনের পর্যবেক্ষণ বলছে, মনোনয়ন দাখিলের দিন থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা আচরণবিধি ভঙ্গ করে আসছেন। তারা নিয়মবহির্ভূতভাবে মিছিল করে বিপুলসংখ্যক মানুষ নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। পরবর্তী সময়ে কোনো কোনো মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে মিছিল করা, ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রচার, গাড়িবহর ব্যবহার, মোটরসাইকেলের বহুল ব্যবহার, রাতের আঁধারে ক্যাম্প ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনী প্রচারণাকালে অন্য দলের প্রার্থীর ওপর হামলাসহ বিভিন্ন ধরনের আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে।

প্রার্থীদের মামলার হিসাব : ঢাকা উত্তরের ৬ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে শুধু বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থীর বিরুদ্ধে অতীতে একটি মামলা ছিল, যা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। আর কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে কখনো মামলা দায়ের হয়নি। ঢাকা উত্তরের সর্বমোট ৩৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৯৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, ৪৪ জনের বিরুদ্ধে অতীতে ছিল এবং ২১ জনের আছে বা ছিল। ঢাকা দক্ষিণের ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ২ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে, ৩ জনের বিরুদ্ধে অতীতে  ছিল, এখনো আছে। ঢাকা দক্ষিণের সর্বমোট ৪০৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১০৯ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে আছে। ৫০ জনের বিরুদ্ধে অতীতে ছিল এবং ২৬ জনের বিরুদ্ধে অতীতে ছিল, এখনো আছে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা : মেয়রের ক্ষেত্রে বেড়েছে। ঢাকা উত্তরের ৬ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৫ জনই (৮৩.৩৩%) উচ্চশিক্ষিত। তবে ১ জন (১৬.৬৭%) প্রার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। একইভাবে ঢাকা দক্ষিণের ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৩ জন (৪২.৮৬%) উচ্চশিক্ষিত। তবে ৩ জন (৪২.৮৬%) প্রার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। এ ছাড়া ঢাকা উত্তরের সংরক্ষিত ও সাধারণ মিলিয়ে ৩৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশের (২০৩ জন বা ৬১.৩২%) শিক্ষাগত যাগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। ৫৪টি ওয়ার্ডের ২৪৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশ প্রার্থীর (১৫৬ জন বা ৬২.৯০%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। মাত্র ৫৬ জন ¯œাতক বা ¯œাতকোত্তর। ঢাকা উত্তরে ২০১৫ সালের নির্বাচনের তুলনায় একদিকে স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার বেড়েছে (৫৯,৪০% এর স্থলে ৬১.৩২%)। একইভাবে ঢাকা দক্ষিণের ৪০৯ জন প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশের (২৬৬ জন বা ৬৫.০৩%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিতের হার সমান (৪২.৮৬%) হলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে স্বল্পশিক্ষিতের হার অনেক বেশি। ২০১৫ সালের নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, স্বল্পশিক্ষিতের হার সমান রয়েছে (৬৬.৭৪)। উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর ক্ষেত্রে সামান্য কিছু অবনতি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর