বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

১৬ দেশে করোনাভাইরাস মৃত ১০০ ছাড়াল

১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখবে চীন সরকার : পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভাইরাস ঠেকাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ দেশে করোনাভাইরাস মৃত ১০০ ছাড়াল

চীনের গন্ডি পেরিয়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ১৬টি দেশে। এরই মধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৪ হাজার ১১৫ জন। গতকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৬ জনে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তবে চীনে থাকা সব দেশের নাগরিকদের পর্যবেক্ষণে রাখায় বাংলাদেশিদের ১৪ দিনের মধ্যে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর : স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সব রকম প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের। তিনি বলেন, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাস প্রবেশ করলেও বাংলাদেশে একটি মানুষও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। করোনাভাইরাস নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

জাহিদ মালেক বলেন, সীমান্ত এলাকার সবগুলো ইউনিটেই আমরা স্ক্যান মেশিন বসিয়েছি। সারা দেশে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কুর্মিটোলা হাসপাতালে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য আলাদা একটি আইসোলেটেড কেবিন খোলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধসামগ্রী ও কিটস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে খোঁজখবর রাখছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে হটলাইন চালু করেছি এবং বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের হাতে করোনাভাইরাসের সতর্কতা, করণীয় ও যোগাযোগ নম্বর সংবলিত কার্ড দেওয়া হচ্ছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের স্বাস্থ্য খাতসহ সব ইউনিট একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস নিয়ে দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস সার্চ ভাইরাসের মতো ভয়াবহ নয়। এই ভাইরাস শীতকালে দেখা দিলেও গরমের সময় টিকতে পারবে না। কাজেই এ ভাইরাস নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্যিকভাবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুবিধ সম্পর্ক রয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশই চীনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বন্ধ করেনি। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ ব্যাপারে আমাদেরকে কিছু বলেনি। কাজেই চীনের সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ রাখার কোনো চিন্তা-ভাবনা সরকারের আপাতত নেই।

সংবাদ সম্মেলনের আগে দুপুরে করোনাভাইরাস নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জানতে চীনে যাচ্ছেন না কেউ : পৃথিবীজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো করোনা ভাইরাস জ্ঞাত হওয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে আপাতত কোনো বিশেষজ্ঞ দলকে চীনে পাঠানো হচ্ছে না। সংক্রামক এ ভাইরাস নিয়ে সচেতনতা ও করণীয় সম্পর্কে গতকাল এক আন্তমন্ত্রণালয় সভার পর সাংবাদিকের প্রশ্নে এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। জানা গেছে, সভার পর করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি বিস্তারিত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন মন্ত্রী। এ সময় একজন সাংবাদিক জানতে চান বাংলাদেশ থেকে কোনো টিম চীনে পাঠিয়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা? উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ মুহূর্তে প্রয়োজন নেই, প্রয়োজনীয়তা ফিলও করিনি। এ মুহূর্তে কোনো বিশেষজ্ঞ টিম পাঠানোর প্ল্যান আমাদের নেই। প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে চিন্তা করব।’

১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখবে চীন সরকার : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেন বলেছেন, উহান প্রদেশে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ফিরতে চাইলে বিমান প্রস্তুত রয়েছে। আমরা চীন সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা দুই সপ্তাহ অর্থাৎ ১৪ দিন তাদের পর্যবেক্ষণে থাকবে। এই দুই সপ্তাহ ওই প্রদেশে কোনো বিদেশিকে প্রবেশ ও বের হতে দেবে না। পর্যবেক্ষণ শেষে তারা সিদ্ধান্ত জানালে আমরা বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুত রয়েছি।

বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, নৌবন্দরে সতর্কতা : দেশের বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, নৌবন্দরে সতর্কতা আরোপ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভাইরাসটির বিভিন্ন লক্ষণ সম্পর্কে বিমানবন্দরে ডিজিটাল ফরম্যাটে তথ্য দেওয়া হয়েছে। চীন এবং প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যের একটি কার্ড পূরণ করানো হচ্ছে। ঢাকায় আসার পর সেটি বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য ডেস্কে জমা দিতে হবে। থার্মাল স্ক্যানারে পরীক্ষায় কোনো যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি পাওয়া গেলে তাকে প্রথমে বিমানবন্দরের পর্যবেক্ষণ কক্ষে রাখা হবে। পরে তাকে প্রয়োজনে কুর্মিটোলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তার শারীরিক অবস্থার তথ্য সংগ্রহে রাখবেন। আসার সময় জ্বর না থাকলেও চীন থেকে আসার ১৪ দিনের মধ্যে যদি জ্বর হয় তাহলে আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর