মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকায় হাত পা মুখ বেঁধে গণধর্ষণ দুই কিশোরীকে

রাবি ছাত্রীর ধর্ষক রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও রাজশাহী

রাজধানীর কদমতলীর একটি বাসায় গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন দুই কিশোরী। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে আদালতে হাজির করা হলে তাদের প্রত্যেকের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আসামিরা হলেন- সোহেল বেপারী, রানা বেপারী ও আক্তার আলী। এর আগে রবিবার রাতে রাজধানীর গুলিস্তান থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধর্ষণের শিকার ১৫ বছরের এক কিশোরীর বাবা নৈশপ্রহরীর চাকরি করেন। তারা জুরাইন মেডিকেল রোডের নোয়াখালী পট্টির একটি বাড়ির নিচ তলায় ভাড়া থাকেন। প্রতিদিনের মতো শনিবার রাত ১০টার দিকে তার বাবা কাজে বের হন। এ সময় ওই কিশোরী বাসায় একা ছিল। একা থাকতে সংকোচ বোধ করায় তার এক বান্ধবীকে ডেকে আনে। তার বয়স আনুমানিক ১৪। তখন ওই কিশোরী তার দুই ভাতিজা ও ভাতিজার বন্ধুও বাসায় ছিল। রাত ১১টার দিকে সোহেল, রানা ও আক্তার তাদের বাসায় কড়া নাড়ে। বাসায় থাকা ওই কিশোরী দরজা খুলে দিলে তারা ভিতরে ঢুকে পড়ে। এরপর দরজা আটকে দেয়। তারা কিশোরীর ভাতিজা ও তার বন্ধুকে মেরে পাশের রুমে আটকে রাখে। তারা একা বাসায় অসামাজিক কাজে লিপ্ত ছিল- এমন ভয় দেখাতে থাকে। পরে হাত-পা মুখ বেঁধে সোহেল দুই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এরপর রানা ও আক্তার পৃথকভাবে দুই কিশোরীকে রাতভর ধর্ষণ করে। পরে রবিবার ভোর ৫টার দিকে তারা বেরিয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে কিশোরীর ভাবী কদমতলী থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ দুই কিশোরীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করে।  কদমতলী থানার পরিদর্শক মাহবুব আলম জানান, কিশোরী দুজন বান্ধবী। তাদের দুজনকে বাসায় রেখে বাবা-মা বাইরে যান। ওই সময় তারা ধর্ষণের শিকার হয়। স্বজনদের অভিযোগ, দুই কিশোরীর একজনকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল সোহেল। সে বখাটে ধরনের হওয়ায় তারা ভয়ে তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি। জানা গেছে, সোহেল, রানা ও আক্তার ভবঘুরে। সোহেল ও রানা কদমতলীর ভবানী বাগিচায় আক্তারের বাসায় ভাড়া থাকত।

রাবি ছাত্রীকে ধর্ষণে মূল আসামি রিমান্ডে : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রীর দায়ের করা ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলায় রবিবার রাবির অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহফুজুর রহমান শারুদসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল রাজশাহী মেট্রোপলিটন হাকিম আদালত মামলার মূল আসামি শারুদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর ও বাকি চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছে। তারা হলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাফসান আহমেদ ও প্লাবন তালুকদার, কাজলা এলাকার জীবন ও তারেক মাহমুদ জয়। আরেক আসামি পলাতক রয়েছেন। নগরীর মতিহার থানার ওসি এস এম মাসুদ পারভেজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 মাহফুজ শারুদ ও ভুক্তভোগী দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত বলে জানা গেছে।

মামলার বরাত দিয়ে মতিহার থানার ওসি জানান, কয়েক মাস আগে শারুদ ও ভুক্তভোগীর মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। ২৪ জানুয়ারি রাতে গল্প করার কথা বলে শারুদ তার বান্ধবীকে কাজলা সাঁকপাড়ার তার ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন প্লাবন। তারা যাওয়ার পর প্লাবন বাইরে চলে যায়। এ সময় ছাত্রীটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন শারুদ। এমনকি পূর্বপরিকল্পিতভাবে কৌশলে শারুদের বন্ধু বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্লাবন সরকার, রাফসান এবং কাজলা এলাকার জয়, জীবন ও বিশাল মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন। পরে ভুক্তভোগীর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন তারা। নইলে ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে গভীর রাতে তাকে ছেড়ে দেন। পুরো ঘটনাটি পরিবারকে জানান এবং ২৭ জানুয়ারি বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন ওই ছাত্রী।

ওসি মাসুদ পারভেজ বলেন, মামলা করার পরই মতিহার থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে শারুদ এবং তার দুই সহযোগী প্লাবন ও রাফসানকে গ্রেফতার এবং তাদের কাছ থেকে ভিডিওসহ মোবাইলটি জব্দ করে। এ ছাড়া রবিবার আসামি জীবন ও জয়কে গ্রেফতার করা হয়। পলাতক বিশালকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে রাবির প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, এখনো এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে শনিবার রাতে বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্টে গণধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে আরও দুই কিশোরী। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম জানান, দুই কিশোরীর বয়স ১৩। শনিবার রাতে বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায় ঘুরতে বের হয় তারা। এ সময় তিন যুবক দুই কিশোরীকে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে দুই যুবক এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে ও অন্যজনের শ্লীলতাহানি করে। অন্য যুবক তাদের সহায়তা করে। পরদিন থানায় এসে মামলা করে দুই কিশোরী। মামলার পর ধর্ষণে সহায়তাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল দুই অভিযুক্তকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ খবর