শনিবার, ৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বিএনপি

দল ও অঙ্গসংগঠন গোছানোর কাজ এগিয়েছে, স্থানীয় সরকারসহ সব নির্বাচনেই অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত, বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি আসছে

মাহমুদ আজহার

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বিএনপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। দল ও অঙ্গসংগঠনগুলো গোছানোর কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। ইতিবাচক ধারায় চলছে দলের সামগ্রিক কার্যক্রম। স্থানীয় সরকারসহ সব নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছে বিএনপি। ভবিষ্যতেও অংশ নেবে তারা। দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের আশা, শিগগিরই দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া কারামুক্তি লাভ করবেন। এরপর তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে দলের কাউন্সিলের ডাক দেবেন। লন্ডনে অবস্থান নেওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিয়মিতই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। জেলা বিএনপির কমিটি ছাড়াও অঙ্গসংগঠনের কমিটিগুলোর পুনর্গঠনও অনেক দূর এগিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক পর্যায়ের নেতাদের সমন্বয়ে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমও এগিয়ে চলছে। তৃণমূলকে উজ্জীবিত করতে মাঠপর্যায়ে সফর করার চিন্তাভাবনাও চলছে বিএনপিতে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বিগত নির্বাচনের আগে ও পরে মামলা, জুলুম নির্যাতনসহ নানামুখী সংকট কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। আমরা ইতিবাচক ধারার রাজনীতি করছি। এখন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর গোছানোর প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে বিএনপির অধিকাংশ জেলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা দল গুছিয়ে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। বেগম জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’ বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, যত প্রতিকূল পরিস্থিতিরই সৃষ্টি হোক না কেন, আগামীতে সব নির্বাচনেই বিএনপি অংশ নেবে। অতীতে একাধিকবার নির্বাচন বর্জন করাকে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলেও মেনে নেন তারা। নেতারা বলছেন, বিএনপি একটি উদারপন্থি গণতান্ত্রিক দল। বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। আর গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় দিক হলো নির্বাচন। ভোট বর্জন করলে বিকল্প কিছু থাকে না। কিন্তু ভোটে অংশ নিলে জয় পরাজয় যাই হোক এ নিয়ে আলোচনা বা ইস্যু তৈরি করার সুযোগ থাকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে শুরু করে সিনিয়র সব নেতাই এ ব্যাপারে একমত বলে জানা গেছে। এ দিকে বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য আইনি লড়াইয়ে আর তারা ভরসা পাচ্ছেন না। তাই এখন রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচির দিকে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। তবে আন্দোলন কর্মসূচিতে যাওয়ার আগেই দলকে গুছিয়ে ফেলতে চায় হাইকমান্ড। আগামী তিন মাসের মধ্যেই দল গোছানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথাও বলছেন দায়িত্বশীল নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেগম জিয়াকে মুক্ত করা আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতিও নিচ্ছি। এর আগেই আমরা দল ও অঙ্গসংগঠনগুলো গুছিয়ে ফেলতে চাই। আশা করছি, খুব শিগগিরই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ হবে। এরপরই আমাদের রাজপথের কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি আসবে। তবে এগুলো হবে ধাপে ধাপে।

দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাশাপাশি কারাগারে থাকা দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াও সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে এ বার্তা দিয়েছেন। তাদের নির্দেশনায় অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এ দিকে দু-একটি ছাড়া প্রায় সব অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ দলের নীতিনির্ধারকরা। বিশেষ করে সদ্য সমাপ্ত ঢাকার দুই সিটি ভোটে দু-একটি অঙ্গসংগঠন ছাড়া বাকিদের ভূমিকায় হতাশ বিএনপি। তাই কমিটি ঢেলে সাজানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যেই সব অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনে অলিখিত আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। জাতীয়তাবাদী যুবদলের নির্বাহী কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার এক মাস পর সম্প্রতি আবারও ১১৪ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০১৭ সালেও আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। শিগগিরই জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কথা। আগামী দুই মাসের মধ্যেই কৃষক দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৬০ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হয়েছে। বাকি ৪১ সদস্যের কমিটিও খুব দ্রুত ঘোষণা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটি হওয়া তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল, ওলামা দলসহ অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে দাবি করেছেন, ছাত্রদলের মতো সামনে বিএনপিসহ সব অঙ্গসংগঠনের কমিটিই যেন কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আংশিক কমিটি যেহেতু আগেই ঘোষণা হয়েছে, তাই এদের দিয়েই আপাতত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তবে তাদের মেয়াদ বেশি দিন থাকবে না। পরবর্তী এই দুই সংগঠনের কমিটি হবে কাউন্সিলে নির্বাচনের মাধ্যমে। বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান জানান, তারা যখন তৃণমূল সফরে যান তখন নেতা-কর্মীদের একটাই বক্তব্য যে, আপনারা কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া কমিটি দেবেন না। কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটি দেবেন। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ফজলুর রহমান খোকন এবং সাধারণ সম্পাদক হন ইকবাল হোসেন শ্যামল। এরপর ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বাকি ৪১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা হবে শিগগিরই। ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে ১০১ সদস্যের। এর আগে ছাত্রদলের রাজিব-আকরামের ‘ঢাউস’ কমিটি ছিল। দলের হাইকমান্ড এতে ক্ষুব্ধ হয়। সেখানে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ছিল ৭৩৬ সদস্যের। যুবদল সূত্রে জানা যায়, কয়েক দফা আলটিমেটাম দেওয়ার পর যুবদল পাঁচ সদস্য থেকে ১১৪ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে। যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে সাবেক ছাত্রনেতারা খুব একটা ঠাঁই পাননি। যুবদলের সাবেক কিছু নেতার পাশাপাশি ব্যবসায়ী একটি শ্রেণির ঠাঁই মিলেছে যুবদলে। তবে যুবদলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, তারা একটি খসড়া কমিটি লন্ডনে পাঠিয়েছেন। সেটা কাটছাঁট হয়ে ১১৪ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। বাকি কমিটিও শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। স্বেচ্ছাসেবক দল সূত্রে জানা যায়, আংশিক কমিটি দিয়ে মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দলের। সংগঠনটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, তারা একটি খসড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা অনেক আগেই লন্ডনে পাঠিয়েছেন। এখনো তা অনুমোদন হয়নি। তবে শিগগিরই স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নেতারা। তাদের মতে, যুবদলের কমিটি হয়েছে। এবার স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিরও ঘোষণা আসবে। এ প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, নানাবিধ কারণে যথাসময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে যুবদলের কমিটি হয়েছে। আমরা আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হবে।

সর্বশেষ খবর