সোমবার, ৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

দুই সন্তান হত্যায় মায়ের বিরুদ্ধে বাবার মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর খিলগাঁওয়ে দুই সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী আক্তারুন্নেছা পপিকে আসামি করেছেন তার স্বামী মো. মোজাম্মেল হোসেন বিপ্লব। শনিবার রাতে খিলগাঁও থানায় করা এ মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ‘১৪ বছর আগে পপিকে বিয়ে করি। পপির সন্দেহ সব টাকা আমার মা-বাবা, ভাইবোনের পেছনে খরচ করি। এ থেকে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া আর্থিক কারণে ঢাকায় না থেকে গ্রামের বাড়িতে যেতে বলায় ক্ষিপ্ত হয় পপি।’ এর আগে, শনিবার সকালে খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ গোড়ানের ৩৯৭ নম্বর মোল্লা ভবনের ৪/ডি ফ্ল্যাট থেকে ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী মেহজাবিন আলভি (১১) ও একই স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস (৭) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেখান থেকে ওই দুই শিশুর মা পপিকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, আগুনে পপির শরীরের ১৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। মামলার এজাহারে বিপ্লব উল্লেখ করেন, ‘ব্যবসায়িক কারণে ৪০ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়েছি। ২২ লাখ টাকা মূল্যের একটি জমি ক্রয় করি। কিন্তু টাকা পরিশোধ হওয়ার পরও জমির মালিক জমি রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছেন না। ফলে আমার স্ত্রী মনে করে সব টাকা আমার পরিবারের পেছনে খরচ করেছি। এই সব বিষয়ে দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকত। বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা ভালো না থাকায় টানাপড়েনের মধ্যে ছিলাম। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ বাসায় গিয়েছিলাম। পরদিন ব্যবসার কাজে গ্রামের বাড়িতে চলে যাই। ৬ মার্চ রাত ৯টার দিকে পপির সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার সময় সাংসারিক আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে বলেছিলাম ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়। তুমি মেয়েদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে শ্রীনগরে চলে এসো। কিন্তু সে ঢাকায় থাকতে চায়। পরদিন সকাল ১০টার দিকে আমার শ্বশুর আবু তালেব আমাকে ফোন করে বলেন, তোমার বাচ্চা দুইটা আর জীবিত নাই, আমার মেয়ে পপি জবাই করে মেরে ফেলেছে এবং তার নিজের শরীরেও আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এই সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা আসি এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়ে আমার দুই সন্তানের লাশ দেখে শনাক্ত করি। পরে আমি জানতে পারি, ৬ মার্চ মধ্যরাত থেকে পরদিন ৭ মার্চ সকালের মধ্যে যে কোনো সময় পপি আমার দুই সন্তানকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে আগুনে ঝলসে দিয়েছে। পরে সে নিজেও শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পারিবারিক কলহের কারণে পপি দুই সন্তানকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। পপির বাড়ি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে।’

পুলিশের খিলগাঁও জোনের এসি জুলফিকার আলী জানান, বিপ্লবের মামলার পরই তার স্ত্রী পপিকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। খিলগাঁওয়ের ওই ফ্ল্যাট থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। নোট ও পপির স্বামী বিপ্লবের বক্তব্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, আর্থিক অনটন থেকে দাম্পত্য কলহের জের ধরে দুই সন্তানকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন পপি।

সর্বশেষ খবর