বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

এগিয়ে আসতে হবে শিল্পপতি ব্যবসায়ীদের

শিমুল মাহমুদ

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশব্যাপী সরকার ঘোষিত বন্ধের কারণে নিম্নœআয়ের অসংখ্য মানুষের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তারা কর্মহীন অবস্থায় সরকার ও দেশের বিত্তবানদের সহায়তার দিকে তাকিয়ে আছেন। এ পরিস্থিতিতে আর্তমানবতার সেবায় দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, সমাজের মানুষের প্রতি বিত্তবানদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায় থেকেই তাদের দাঁড়াতে হবে অসহায় সাধারণ মানুষের পাশে। উল্লেখ্য, অনুকূল পরিবেশের কারণে দেশে গত এক দশকে অসংখ্য ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ ঘটেছে। জাতীয় বিপর্যয়ের এ সময়ে তাদের সবাইকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

তারই অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকার চেক দিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। এদিন তিনি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ৫ হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল তৈরির জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের একটি চিঠি দেন। পরে আইসিসিবিতে হাসপাতাল তৈরিতে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি পরিদর্শন করে হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যানের প্রস্তাবিত স্থানে ৫ হাজার শয্যার হাসপাতাল তৈরি করা সম্ভব বলে সেনাবাহিনী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি দলের পর্যবেক্ষণে জানানো হয়েছে। এটি হবে চীনের উহানে নির্মিত করোনা হাসপাতালের চেয়েও বড় হাসপাতাল।

অন্যদিকে বসুন্ধরা গ্রুপ কয়েক দিন ধরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আশপাশের হাজার হাজার দরিদ্র পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। পরিবারপ্রতি ১০ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, এক লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি পিয়াজ, দুই কেজি আলু, আধা কেজি আদা ও আধা কেজি রসুন দেওয়া হচ্ছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের ছোলমাইদ এলাকা, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বেরাইদ ও ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডুমনি এলাকার দরিদ্র মানুষের মাঝে স্থানীয় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে এসব বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে থাকা বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মাহবুব উর রহমান বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে এগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বসুন্ধরা গ্রুপের ১০ কোটি টাকা দেওয়ার পাশাপাশি অন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছে।  বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের এক দিনের বেতনের অর্থ ২৫ কোটি টাকা রবিবার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়েছে সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী দিয়েছে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বিমান বাহিনী দিয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ১ কোটি টাকা, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ১ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ওরিয়ন গ্রুপ ৩ কোটি টাকা, নাভানা গ্রুপ ২৫ লাখ টাকা, হোসাফ গ্রুপ ৫ কোটি টাকা, আবুল খায়ের গ্রুপ ৫০ লাখ টাকা, সামিট পাওয়ার ৩ কোটি টাকা, কনফিডেন্স পাওয়ার কোম্পানি ৩ কোটি টাকা, দি ওয়েস্টিন হোটেল ২ কোটি, লা মেরিডিয়ান ২ কোটি টাকা অনুদান দেয়। সিএমসি-চায়না ১ মিলিয়ন মাস্ক, ১০ হাজার পিপিই এবং কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স ১০ হাজার পিপিই দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। এর বাইরেও দেশে ১ হাজারের বেশি বড় ব্যবসায়ী-শিল্পপতি রয়েছেন, যাদের আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে হবে। জাতির এই দুঃসময়ে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।  বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সারা দেশে সরকারিভাবে বন্ধ ঘোষণা করায় সাধারণ মানুষ মারাত্মক অর্থকষ্টে আছে। সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের রোজগারের পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এই সময়ে নিম্নআয়ের মানুষের সহায়তায় বিত্তবান সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী এই বিপর্যয়ের সময়ে কারও নীরবে বসে থাকার সুযোগ নেই। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তারা করোনা রোগীদের সেবায় সবচেয়ে বড় হাসপাতাল তৈরির জন্য জায়গা দিয়েছে। এটি একটি উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। তাদের পাশাপাশি দেশের অন্য ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের এখন আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশে অর্ধশতাধিক বেসরকারি ব্যাংক ও কয়েকশ ব্যাংক মালিক আছেন। আরও বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আছে। তারা বেসরকারি খাতে ভূমিকা রাখছেন। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মসূচি বা সিএসআরের আওতায় অর্থ সহায়তা করতে পারে। ধনী ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে হবে। আবার যারা টাকা পাচার করেছেন, তাদেরও উচিত কিছু টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রদান করা।

সর্বশেষ খবর