বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
বিশ্বে আক্রান্ত ১৪ লাখ, মৃত্যু ৮১ হাজার

কোথাও উন্নতি কোথাও অবনতি

প্রতিদিন ডেস্ক

কোথাও উন্নতি কোথাও অবনতি

বিশ্বজুড়ে ১৮৪ দেশে করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ৫০ জন। আর আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ লাখ ১১ হাজার ৩৪৮ জন। এর মধ্যে মৃত্যুর হার কোথাও বেড়েছে আবার কোথাও অবস্থার উন্নতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি ৭ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় এ তথ্য জানিয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের ভরকেন্দ্র এখনো ইউরোপ। যদিও ধীরে ধীরে সেই কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্র। মৃত মানুষের সংখ্যার দিক থেকে প্রথম দুটি দেশই ইউরোপের।

করোনাভাইরাস-চীনে ‘মৃত্যুহীন’ প্রথম দিন : নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর থেকে প্রথমবারের মতো এ সংক্রমণে কোনো মৃত্যু ছাড়াই একটি দিন পার করার কথা জানিয়েছে চীন। সোমবার দেশটির মূল ভূখ-ে কভিড-১৯-এ কারও মৃত্যু হয়নি এবং স্থানীয়ভাবে কেউ রোগটিতে আক্রান্তও হয়নি বলে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের (এনএইচসি) বরাত দিয়ে জানিয়েছে সিএনএন। এদিন দেশটিতে নতুন করে ৩২ জন আক্রান্তের সন্ধান মেলেছে, কিন্তু তারা সবাই বিদেশফেরত। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজার ৬৯৭ জন, মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৩৫ জন এবং সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ৭৭ হাজার ৩৯৩ জন। সিএনএন জানায়, চীনের অধিকাংশ এলাকার জীবনযাত্রায় এখন স্বাভাবিক গতি ফিরে এসেছে।

গরমে ছড়ায় কম! : তুষারপাতের দিন কাটিয়ে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই এখন ঋতু পরিবর্তনের হাওয়া। ধীরে ধীরে গরম বাড়ছে; তাপদাহও বাড়ছে। উষ্ণ আবহাওয়া কি নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে পারে? তাপমাত্রা বাড়লে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমবে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছে বিশ্ব। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো নভেল করোনাভাইরাসও কোনো মৌসুমি সংক্রমণের ধাঁচ অনুসরণ করে কিনা বিশেষজ্ঞরা তা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে তার মাত্রা খুব সামান্য হতে পারে বলে তারা সতর্ক করছেন। যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুক্তরাজ্যে ঠা-ার উপসর্গ দেখানো করোনাভাইরাসের অন্য ধরনগুলো নিয়ে প্রাথমিক গবেষণায় ঋতু বদলের সঙ্গে সংক্রমণ বাড়া-কমার সম্পর্ক পাওয়া গেছে। শীতে এটা বেড়ে গেলেও বসন্তে আর থাকে না। তবে অল্প কয়েকটি করোনাভাইরাস আছে যেগুলো গরমেও সংক্রমিত হয় বলেই মনে হয়।

স্বেচ্ছায় আইসোলেশনে ব্রিটিশ মন্ত্রী : ব্রিটেনের ক্যাবিনেট মন্ত্রী মাইকেল গোভ বাসায় স্বেচ্ছা আইসোলেশন শুরু করেছেন। তিনি জানিয়েছেন তার পরিবারের একজন সদস্যের করোনাভাইরাস উপসর্গ দেখা দিয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, গোভ যদিও বলছেন তিনি ডিজিটালি তার কাজকর্ম যথারীতি চালিয়ে যাবেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ক্যাবিনেট মন্ত্রিসভার দায়িত্ব এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোভ সমন্বয়ের ক্ষেত্রে একটা কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার আইসোলেশনে যাওয়া পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলবে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অসুস্থ থাকাকালে গোভ তার জায়গায় কয়েকবার নিয়মিত সরকারি ব্রিফিংও করেছেন।

ফ্রান্সে ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮৩৩ মৃত্যু : বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ফ্রান্স। হু হু করে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৮৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওলিভার ভেরান বিষয়টি জানান। তিনি জানান, নার্সিংহোমে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বর্তমানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৪৩৪ জন। এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৯১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ব্রিটেনে মৃত্যুর মিছিলে আরও ৪৩৯ : ব্রিটেনে সোমবার আরও ৪৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। খবর স্কাই নিউজ ও ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগের। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩৭৩ জনে। এদিকে শুধু ইংল্যান্ডে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরে আরও ৪০৩ জন রোগী হাসপাতালে মারা গেছে। এ নিয়ে ইংল্যান্ডে মোট মৃত্যু ৪৮৯৭ জনের। ওয়েলসে মোট ২৭ জন মারা গেছে এবং সামগ্রিক সংখ্যা ১৯৩ এবং স্কটল্যান্ডে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে ৭টি ‘হটস্পট’, রাজ্যে মৃত ৫, আক্রান্ত ৬৯ : গোটা ভারতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এমন অবস্থায় ৭টি জায়গাকে করোনা ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করল রাজ্য সরকার। এ কথা জানান রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মঙ্গলবার নবান্নে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, ‘আগে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছিল ৩, মঙ্গলবার অডিট রিপোর্ট আসার পর মৃতের সংখ্যা হয়েছে ৫। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৯। এর মধ্যে ৬০ জনই ৯টি পরিবারের সদস্য।’

এদিকে, ভারতে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামা ডাক্তাররা নিজেদের বাড়ি ছেড়ে নাওয়া-খাওয়া ভুলে রাত-দিন লেগে রয়েছেন করোনা আক্রান্তদের সুস্থ করতে। তাই কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে সব রাজ্য সরকার হিরোর মর্যাদা দিয়েছেন ডাক্তারদের। কোনোভাবেই তারা যেন কোনো সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য খেয়াল রাখা হচ্ছে। আর এই ডাক্তারদের যেভাবে দিল্লির পাঁচতারা হোটেলে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানানো হলো, তা সত্যই অতুলনীয়। যেহেতু সারাক্ষণ করোনা আক্রান্ত রোগীদের কাছে থাকছেন ডাক্তাররা, তাই তাদের থেকে পরিবারের লোকদের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সম্প্রতি দিল্লি সরকার ঘোষণা করেছে, ডাক্তাররা যদি চান, তাহলে তাদের আলাদা করে পাঁচতারা হোটেলে রাখা হবে। সেখানে তাদের থাকা-খাওয়ার খরচ দেবে অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার। রাজধানীর লোক নায়ক হাসপাতাল ও জিবি পন্থ হাসপাতালের ডাক্তারদের জন্য পাঁচতারা হোটেল ‘দ্য ললিত’-এ ১০০টি ঘর বুক করা হয়েছে। যতদিন না করোনা সংক্রমণ শেষ হচ্ছে, ততদিন সেখানেই থাকবেন তারা। সব খরচ সরকারের। পাকিস্তানের অর্ধশতাধিক চিকিৎসক আটক : চীনের বন্ধু দেশ পাকিস্তানে করোনার সংক্রমণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত তিন হাজার ৭৬৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। সোমবার আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়ে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ জনে। এর মধ্যে দেশটির চিকিৎসকরা কাজ করতে না চাওয়ায় বিপাকে পড়েছে দেশটি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কড়া পদক্ষেপ নিয়ে আটক করা হয়েছে চিকিৎসকদের। জানা গেছে, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী না পাওয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করেছেন পাকিস্তানের শত শত চিকিৎসক। বিক্ষোভ থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় অর্ধশতাধিক চিকিৎসককে আটক করা হয়েছে। সোমবার দেশটির বেলুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটায় চিকিৎসকদের সঙ্গে পুলিশের এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বেলুচিস্তান পুলিশ বলছে, ৫৩ জনকে আটকের পর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর