শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বিদেশে বাংলাদেশি মৃত্যু ১৫০

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বিদেশে বাংলাদেশি মৃত্যু ১৫০

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল পর্যন্ত বিদেশে ১৫০ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কেই ৯২ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। সেখানে গত তিন দিনে অন্তত ২১ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। নিউইয়র্কের বাইরে আরও কয়েকজনের মৃত্যুর সংবাদ জানা গেলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অন্যান্য স্থানের মধ্যে যুক্তরাজ্যে মারা গেছেন ৩৬ জন, সৌদি আরবে ৬, ইতালিতে ৩, কাতারে ৩, স্পেন ৩, আরব আমিরাতে ২ এবং সুইডেন-লিবিয়া ও গাম্বিয়ায় একজন করে মোট ৩ জন।

বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস, প্রবাসে কমিউনিটি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশিদের মৃত্যুর এ তথ্য পাওয়া গেলে এই সংখ্যা আরও বেশি হতেই পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ উন্নত দেশগুলোর স্বাস্থ্যনীতিতে হাসপাতালের রোগীদের তথ্য প্রকাশ না করার কথা বলা হয়েছে। তাই বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোও এ ধরনের কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে না। করোনোর সবচেয়ে বেশি প্রকোপ চলতে থাকা নিউইয়র্কের কর্তৃপক্ষ করোনায় বেশি সংক্রমিত এলাকাগুলোর নাম প্রকাশ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে : জ্যাকসন হাইটস, করোনা ফ্লাশিং, জ্যামাইকা ও ব্রুকলিনের কয়েকটি এলাকা। এসব জায়গায়, বিশেষ করে জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকাতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা অনেক। নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, অভিবাসী ও অশ্বেতাঙ্গ এবং স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হার সবচেয়ে বেশি। সে হিসেবে বাংলাদেশিদের ঝুঁকি বেশির থাকার কথাই জানা যাচ্ছে। সেখানে বর্তমানে কয়েকশ বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পরই সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে যুক্তরাজ্যে। অবশ্য প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা বেশি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে। আবার সেখানে করোনাভাইরাসের প্রকোপও বেশি। সে কারণে এই দুই দেশেই বেশিসংখ্যক বাংলাদেশির মৃত্যু হচ্ছে। এদিকে ইতালি ও স্পেনে করোনায় তুলনামূলকভাবে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা কম। এই দুই দেশে ৩ জন করে বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। করোনার প্রকোপ চলতে থাকা ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে শতাধিক বাংলাদেশির করোনা আক্রান্তের খবর এসেছে বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যমে। দুই দফা লকডাউনের পরও ফ্রান্সে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এক লাখের বেশি আক্রান্ত ফ্রান্সে কোনো বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, মৃত্যুর সংখ্যার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে হুহু করে বাড়ছে আক্রান্ত বাংলাদেশিদের সংখ্যাও। গতকাল শুধু এক দিনেই ৪৬ বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন সিঙ্গাপুরে। দুই দিনে একশর বেশি বাংলাদেশি সিঙ্গাপুরে কভিড-১৯ নামের এই রোগে আক্রান্ত হলেন। সিঙ্গাপুরেই প্রথম কোনো বাংলাদেশি প্রবাসী এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোনো বাংলাদেশির মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি। সিঙ্গাপুর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কভিড-১৯ আক্রান্তদের সর্বশেষ তথ্যানুসারে,  মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা পর্যন্ত সংকলিত তথ্য অনুযায়ী সেখানে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ১০৬। এর মধ্যে ৪৬ বাংলাদেশি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন।

তালিকায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগ বাংলাদেশিই একসঙ্গে একই আবাসিক ভবনে থাকতেন। এ রকম তিন-চারটি আবাসিক ভবন দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে সিঙ্গাপুরে শুরু হয়েছে এক মাসের লকডাউন। কর্মকর্তারা আগেই স্কুল ও অফিস বন্ধ ঘোষণা করেছেন। সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। তাদের বেশির ভাগই দক্ষিণ এশিয়ার। তারা বেশির ভাগই কাজ করছেন নির্মাণ শিল্পে। গাদাগাদি করে ছোট ঘরে থাকেন এবং একই টয়লেট ব্যবহার করেন। কোনো কোনো আবাসিক ভবনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে একটা ঘরে গাদাগাদি করে ঘুমান ১২-১৫ জন করে শ্রমিক। বেশ কিছু আবাসিক ভবনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সেখানে শ্রমিকদের ভিতরে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু বদ্ধ ঘরে গাদাগাদি করে বাস করা অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে ভাইরাসে ছড়িয়ে পড়ার খবর আসছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর