রাজধানীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান। গতকাল সকালে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে পুলিশকে জানানো হয়, মৃত ওই কনস্টেবল করোনা পজিটিভ ছিলেন। দেশে এই প্রথম কোনো পুলিশ সদস্যের করোনায় মৃত্যু হলো। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সদর দফতর থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আরও ১০ রক্ষী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা সবাই ঢামেক হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতেন। তাদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী। এর আগে দুজন কারারক্ষী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
জানা যায়, করোনাভাইরাসে মৃত কনস্টেবলের নাম জসিম উদ্দিন (৪০)। তার বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায়। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। জসিম উদ্দিন ওয়ারী থানায় কর্মরত ছিলেন। ওয়ারী ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি করোনায় সংক্রমিত হন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, কয়েকদিন আগে জসিম উদ্দিনের শরীরে করোনার লক্ষণ পাওয়া যায়। এরপর তাকে ফকিরাপুলের একটি হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। ২৫ এপ্রিল তার নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। নমুনার ফলাফল আসার পর তাকে পুলিশ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে জানা যায়, তার নমুনায় করোনা পাওয়া গেছে। করোনা যুদ্ধে কনস্টেবল জসিম উদ্দিনকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে পুলিশ সদর দফতর। সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানার পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, করোনা মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ের সম্মুখ যোদ্ধা পুলিশের এক গর্বিত সদস্য কনস্টেবল জসিম উদ্দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। চলমান করোনা যুদ্ধে দেশের জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে জসিম উদ্দিনের মৃত্যুতে বাংলাদেশ পুলিশ গভীরভাবে শোকাহত। একই সঙ্গে দেশমাতৃকার সেবায় তার এমন আত্মত্যাগে বাংলাদেশ পুলিশ গর্বিত। পুলিশের ব্যবস্থাপনায় জসিম উদ্দিনের লাশ গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় পাঠানো হবে। সেখানে ধর্মীয়-রীতি মেনে তার লাশের দাফন সম্পন্ন হবে। করোনা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী কনস্টেবল জসিম উদ্দিনের পরিবারের পাশে থাকবে বাংলাদেশ পুলিশ।’ সূত্র জানান, গতকাল সকাল পর্যন্ত পুলিশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৮১। এর মধ্যে ১২ জন নারী সদস্য। এ রোগে আক্রান্ত সদস্যদের রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার বেশির ভাগের শরীরে করোনার কোনো লক্ষণই নেই। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যরা মহানগর পুলিশের আটটি অপরাধ বিভাগ ছাড়াও পরিবহন, প্রটেকশন, উন্নয়ন, গোয়েন্দা, স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপসহ ২২টি বিভাগে কর্মরত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রাজধানীর যে ১০টি স্থানকে করোনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে, এতে এক নম্বরে রয়েছে রাজারবাগ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও লকডাউন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। এ ছাড়া রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটানো, শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তা করাসহ বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালন করছেন। এসব করতে গিয়ে অজান্তেই তারা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন। তবে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সদস্য রাজারবাগ পুলিশ লাইনস থেকে সংক্রমিত হয়েছেন।