শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

সব হাসপাতালে কভিড চিকিৎসার আদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে করোনাভাইরাস এবং অন্যান্য সব ধরনের রোগীকে আলাদা ইউনিটে চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দেশের সব সরকারি হাসপাতালে চিঠি দিয়ে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের সংগঠনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। সরকারের এ নির্দেশনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হাসপাতাল মালিকরা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, এর মধ্য দিয়ে আরও বেশি কভিড-১৯ রোগীকে হাসপাতালের সেবার আওতায় আনা যাবে। আর কভিড-১৯ এর বাইরে অন্য রোগীদের যে ভোগান্তি এত দিন হচ্ছিল, তারও কিছুটা লাঘব হবে। তবে লোকবল ও অন্যান্য সক্ষমতা বিবেচনায় সব হাসপাতালে আলাদা ইউনিট খুলে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া কতটা সম্ভব সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। ২৪ মে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দেশের কভিড-১৯ চিকিৎসা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেছেন। তারা ‘কভিড-১৯’ ও ‘নন কভিড’ রোগীদের একই হাসপাতালের ভিন্ন ভিন্ন অংশে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রস্তাব অনুযায়ী কভিড ও নন-কভিড রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৫০ শয্যা ও তার বেশি শয্যাবিশিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কভিড ও নন-কভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ দেওয়া হলো। এর আগে ১১ মে সরকারি হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। ওই চিঠিতে বলা হয়, কভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে সাধারণ রোগীরা সমস্যায় পড়ছেন। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার এবং অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধা পাচ্ছেন। ওই চিঠিতে সব সরকারি হাসপাতালে কভিড-১৯ সন্দেহে আসা রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, কোনোভাবেই রোগীদের ফেরত না পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়ালাইসিস করছেন, কভিড-১৯ হাসপাতাল থেকে ডায়ালাইসিসের জন্য স্থানান্তর করা হয়েছে এবং হৃদরোগ ও অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা কভিড-১৯ আক্রান্ত না হলে তাদের চিকিৎসা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ওই চিঠিতে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে তারা একই হাসপাতালে তিনটি জোন করার পরামর্শ দিয়েছেন। কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের রেড জোনে; উপসর্গ বা সংক্রমণের ঝুঁকি আছে, এমন রোগীদের ইয়েলো জোনে এবং বাকিদের গ্রিন জোনে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেখানে। এ পদ্ধতি চালু করা গেলে যে কেউ যে কোনো হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন।  নন-কভিড পেশেন্টরা খুবই সাফার করছিল। চিকিৎসা পাচ্ছিল না তারা। সাধারণ রোগ নিয়েও হাসপাতালে গেলে বলা হচ্ছিল ‘কভিড-১৯ পরীক্ষা করে নিয়ে এসো’।

আমার মতে এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। হাসপাতালে আসার সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের শ্রেণি অনুযায়ী ভাগ করে নির্দিষ্ট জোনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সংক্রমণ রোধে সবাই পিপিই পরবে। আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলছেন, বিশ্বের কোনো দেশে কভিড হাসপাতাল বলে আলাদা বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল নেই। দেশে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে শুরুতে বিষয়টি নিয়ে মতপার্থক্য ছিল। পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি দেখে সবাই এখন এ বিষয়ে একমত।

কভিড এবং নন-কভিড দুই ধরনের রোগীর চিকিৎসাই এক হাসপাতালে হবে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সব হাসপাতালকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় একই হাসপাতালে কভিড এবং নন-কভিড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া খুবই কঠিন। এভাবে চিকিৎসা করতে হলে হাসপাতালগুলোতে আলাদা ভবন, প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ, জনবলসহ অন্যান্য সুবিধা থাকতে হবে। ছোট সরকারি হাসপাতালগুলোতেও এ পদ্ধতিটি চালু করা কঠিন হবে। তাতে কভিড-১৯ রোগীদের থেকে বাকিদের মধ্যে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থাকবে। আমার মনে হয় বিষয়টি লেজেগোবরে হয়ে যাবে। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগোনস্টিক সেন্টারে কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিএমএর মহাসচিব।

অবশ্য বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগোনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া সংগঠনের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তিনি বলেন, এটা করতে গেলে তো কতগুলো প্রবলেম হবেই। সবাই তো ডিউটি করতে চাইবে না। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের বেতন বাড়ানোর দাবি করবে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে একইভাবে ডিল করানো হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে কেউ প্রণোদনা পাবে কেউ পাবে না তা তো হতে পারে না। যতটুকু সম্ভব ততটুকু সেবা দেওয়া হবে। না হলে বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।

সর্বশেষ খবর