রবিবার, ৩১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা রোগী নিয়ে পাঁচ তারকা হাসপাতালগুলোর টালবাহানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্বাসকষ্ট, কাশি বা জ্বর নিয়ে হাসপাতালে গেলে এখন বেসরকারি পাঁচতারকা কোনো হাসপাতালই রোগী ভর্তি করতে চাইছে না। অভিযোগ উঠেছে, রোগীর করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার উপসর্গ দেখলে এসব হাসপাতাল কভিড-১৯ পরীক্ষা করাতে এবং তাদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেয়। অথচ সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। একই হাসপাতালে ‘কভিড-১৯’ ও ‘নন-কভিড’ রোগীদের আলাদা আলাদাভাবে চিকিৎসা দিতে গত ২৪ মে একটি চিঠি দেশের সব সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, মেডিকেল কলেজ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের কাছেও এরকম চিঠি পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগ পাওয়া যায়, কভিড-১৯ এর উপসর্গ না থাকলে, নামিদামি হাসপাতাল থেকে বলা হয়- রোগী যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন, এমন সার্টিফিকেট বা টেস্ট করিয়ে নিয়ে আসতে। কিন্তু করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য এবং পরীক্ষার ফল  পেতেও অনেক সময় দিনের পর দিন লেগে যায়। অন্যদিকে কভিড-১৯ এর জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতেও আবার নমুনা পরীক্ষার ফল ছাড়া চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এরকম নানামুখী ব্যবস্থার কারণে ঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে কিছুদিন আগে কয়েকজন মানুষের মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত হয়।

সুমাইয়া নামে এক ভুক্তভোগী জানান, তার শাশুড়ি দীর্ঘদিনের কিডনি রোগী, তাকে ডায়ালাইসিস করাতে হতো। শাশুড়ির ফুসফুসে পানি জমে যাওয়ায় তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। এটা দেখে বেসরকারি হাসপাতালগুলো শাশুড়িকে ভর্তি করতে চায়নি। নামি তিনটি হাসপাতাল থেকে তাকে বলা হয়েছে- শাশুড়ির হয়তো কভিড-১৯ হয়েছে, কুর্মিটোলা বা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যান। যদি উনার করোনাভাইরাস টেস্ট নেগেটিভ নিয়ে আসেন আপনারা, তাহলে ভর্তি করব। বাসা থেকে বের হয়ে এভাবে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরেছিলেন তিনি। তিনটা হাসপাতাল ফেরত দেওয়ার পর তিনি তার শাশুড়িকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত এখানে তার শাশুড়িকে ভর্তি করাতে সমর্থ হন তারা, ততক্ষণে রোগীর অক্সিজেন ৭৩ শতাংশতে নেমে গেছে। ঢামেকের আইসিইউতে ভর্তির কয়েক ঘণ্টা পর তার শাশুড়ি মারা যান। অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল ইসলামের স্বাক্ষরিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দেশের কভিড-১৯ চিকিৎসা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে, একই হাসপাতালে কভিড-১৯ ও নন-কভিড রোগীদের ভিন্ন ভিন্ন অংশে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য পরামর্শ প্রদান করেছেন। এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রস্তাব অনুযায়ী কভিড এবং নন-কভিড রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৫০ শয্যা ও তার বেশি শয্যাবিশিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কভিড ও নন-কভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ প্রদান করা হলো। এদিকে রাজধানীর বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাস আক্রান্ত এক রোগীকে অন্য কোথাও চলে যেতে চাপ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই রোগী এখন শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এবং তার অক্সিজেন লাগছে বলে জানিয়েছেন। এদিকে ঢাকার সব হাসপাতাল ঘুরেও তার জন্য একটি আইসিইউ বেড না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্ত্রী। দুই দিন আগেই ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের এই হাসপাতালের নিচের প্রাঙ্গণে করোনাভাইরাস রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লেগে পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়। জানা গেছে, কভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে গত ২৮ মে দুপুরে এই হাসপাতালে ভর্তি হন রাজধানীর কুড়িল চৌরাস্তা এলাকার বাসিন্দা সুলতান মিয়া। আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে জানিয়ে ওইদিন রাত থেকেই তাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর