মঙ্গলবার, ২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

রপ্তানি ও শ্রমবাজারে চাই মনোযোগ

-ড. জামালউদ্দিন আহমেদ

রপ্তানি ও শ্রমবাজারে চাই মনোযোগ

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, করোনা মহামারী পরবর্তী দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে রপ্তানি ও শ্রমবাজারের প্রতি গভীর মনোযোগ দিতে হবে। আসন্ন বাজেটেও এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে ইউরোপ আমেরিকা বা অন্য দেশগুলোতে বাংলাদেশের দূতাবাসাগুলোতে যারা কর্মরত রয়েছেন তাদের প্রতি বছর এটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। সেটা কোয়ার্টার ভিত্তিক টার্গেটও হতে পারে। এরা রপ্তানি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য কাজ নির্দিষ্টভাবে কাজ করবে। আবার নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানের জন্যও কাজ করবে। তাদের পারফরমেন্স মূল্যায়ন করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। কেউ লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে তাকে প্রত্যাহার করতে হবে। সেখানে অন্য কোন দক্ষ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি আরো বলেন, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এই যে, চীন থেকে আমেরিকা জাপানসহ আরও অনেক দেশ তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে এটা আমাদের জন্য বিরাট সুযোগ। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। এখানে যেন তারা অন্য কোনো দেশে গিয়ে আমাদের দেশেই বিনিয়োগ করে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তারা এখানে বিনিয়োগের ভালো পরিবেশ পাবেন। অধিক মুনাফাও পাবে বিনিয়োগের পুঁজি হারানোর কোনো শঙ্কা থাকবে না। এসব বিষয় তাদের নিশ্চিত করতে অর্থ, বাণিজ্য, শিল্প ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিলে কাজ করতে পারে। তাদেরকে বোঝাতে হবে যে এ দেশে তোমরা নিরাপদে বিনিয়োগ করতে পার। এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের কলকারখানা চালু করতে হবে। অর্থনৈতিক কর্মকা  চালাতে হবে। এখন জীবন ও জীবিকার জন্য যুদ্ধ করতে হবে। এই যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতে হবে। অন্যথায় সামনের দিনগুলোতে আমাদের জন্য ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে। আমাদের উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা যেন ভেঙ্গে না পড়ে না সেদিকে নজর রাখতে হবে। আমরা ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। এ জন্য সীমিত পরিসরে কলকারখানা চালু করা হয়েছে। অর্থনীতির সিস্টেম মেশিনের মতো। মেশিন যদি বেশিদিন বন্ধ থাকে সেটার বিভিন্ন সিস্টেমে সমস্যা দেখা দেবে। আরও সহজ করে বললে এটা একটা গাড়ির মতো। কোনো একটি পার্টস যদি ঠিকমতো কাজ না করে তাহলে গাড়িটা চলবে না। অর্থনীতির বিষয়টা তেমনি। এরই প্রতিটি পার্ট ঠিকমতো চলতে হবে। একটায় সমস্যা হলে অন্যটাও আক্রান্ত হবে। এতে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বেড়ে যাবে। যা সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও বলেন, আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতের গবেষণাসহ হাসপাতালগুলোর অবকাঠামোর মান উন্নয়ন করতে হবে। রাজস্ব আহরণ ঠিক রাখতে হলে প্রতিটি উপজেলায় রাজস্ব কার্যালয় খুলতে হবে। এটা এ বছরই খোলার সুযোগ। কেননা, এবার আমাদের রাজস্ব আদায়ে অনেক বেগ পেতে হবে। মানুষের আয় কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাতের অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এখানে যারা ছলচাতুরি করে ঋণ নিয়ে যাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থনীতির সংকট কাটাতে আরেকটা বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব¦পূর্ণ সেটা হলো বন্দরগুলোর পূনর্গঠন করা। বন্দরগুলোতে যে পরিমাণ অব্যবস্থাপনা রয়েছে সেটা অকল্পনীয়। এখানে দালাল চক্রের দৈরাত্ম্য বন্ধ করা না গেলে রাজস্ব আদায় বাড়ানো অসম্ভব। একইভাবে তৈরি পোশাক খাতের সমস্যাও দূর করতে হবে। আমাদের রপ্তানির বৃহৎ অংশজুড়ে রয়েছে এই পোশাক খাত। এ খাতে খবরদারি করছে ‘অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স’ নামের দালাল চক্র। তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। কেননা তারা আমাদের মঙ্গলে কাজ করে না। তারা শুধু বিদেশি ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষা করে। এজন্য করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে ক্রেতারা অযৌক্তিভাবে অর্ডার বাতিল করছে। সঠিক সময়ে পাওনাও পরিশোধ করছে না। অথচ এই বিপদের দিনে অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সকে কাছে পায় না  পোশাক কারখানার মালিকরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর