শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
রাজনীতির ৫০ বছরে তোফায়েল আহমেদ

চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নেই, শ্রেষ্ঠ অর্জন বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য

রফিকুল ইসলাম রনি

চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নেই, শ্রেষ্ঠ অর্জন বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক দেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিক তোফায়েল আহমেদ রাজনীতিতে ৫০ বছরে পা রাখলেন আজ। তিনি ১৯৭০ সালের ২ জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এর আগে তিনি ১৯৬০-১৯৭০ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে সংগঠনের সর্বোচ্চ পদ সভাপতি পর্যন্ত নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর নির্বাচিত সহ-সভাপতিও (ভিপি) ছিলেন তিনি।

আওয়ামী লীগে দীর্ঘ ৫০ বছরের রাজনীতির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিব সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, এই জীবনে অনেক পেয়েছি। এখন আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমার রাজনৈতিক জীবনে শ্রেষ্ঠ অর্জন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য লাভ, তাঁর ¯ন্ডেœহ মমতা ও ভালোবাসা। আমার জীবন সার্থক ও ধন্য। যা পেয়েছি, তা কখনো কল্পনাও করিনি। অজপাড়া গাঁয়ের একজন সাধারণ ছেলে হয়ে এত কিছু পাব ভাবতেও পারিনি। এখন আমার একটাই চাওয়া আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে ইজ্জত-সম্মানের সঙ্গে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেওয়া। তিনি বলেন, আমার রাজনীতির শ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে, ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। এদিন তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ১০ লক্ষাধিক মানুষের সামনে কৃতজ্ঞ বাঙালির জাতির পক্ষে কৃতজ্ঞচিত্তে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলাম।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন।

১৯৬০ সালে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি তোফায়েল আহমেদের। প্রথমে ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক এবং কলেজের হোস্টেল অশ্বিনী কুমার হলের ভিপি (সহ-সভাপতি) নির্বাচিত হন ১৯৬২ সালে। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক, ১৯৬৬-৬৭-তে ইকবাল হল ছাত্র সংসদের ভিপি (সহ-সভাপতি) নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ডাকসুর ভিপি থাকাকালে তিনি চারটি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত ৬ দফাকে হুবহু ১১ দফায় অন্তর্ভুক্ত করে ’৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৬-এর ৮ মে থেকে ১৯৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৩৩ মাস কারাগারে আটক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র সব রাজবন্দীকে নিঃশর্ত মুক্তিদানে তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারা বাংলায় তৃণমূল পর্যন্ত তুমুল গণআন্দোলন গড়ে তোলে। যে আন্দোলনে আসাদ, মতিউর, মকবুল, রোস্তম, সার্জেন্ট জহুরুল হক, ড. শামসুজ্জোহাসহ অসংখ্য শহীদের রক্তের বিনিময়ে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে ১৯৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভার সভাপতি হিসেবে ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে জাতির পিতাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন তিনি। ১৯৬৯-এ তোফায়েল আহমেদ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০-এর ২ জুন তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতার উপস্থিতিতে ছিল এ যোগদান। ছাত্রলীগের রাজনীতিসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ৬০ বছর, আর শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে তাঁর। অর্থাৎ অর্ধ শতাব্দী আওয়ামী লীগে রাজনৈতিক জীবন পার করলেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। ১৯৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে ভোলার দৌলত খাঁ-তজুমদ্দিন-মনপুরা আসন থেকে মাত্র ২৭ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তিনি ছিলেন ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ‘মুজিব বাহিনী’র অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার প্রধানের একজন।

১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১২ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৪ জানুয়ারি প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় তোফায়েল আহমেদকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে একই মর্যাদায় রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী মনোনীত হন তোফায়েল আহমেদ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগের প্রথম জাতীয় কাউন্সিলে তোফায়েল আহমেদ দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ওই কমিটিতে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনকের নির্মম হত্যাকান্ডের পরপরই  তোফায়েল আহমেদকে প্রথমে গৃহবন্দী ও পরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম এবং রেডিও অফিসে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দী অবস্থায় তাঁকে ফাঁসির আসামির কনডেম সেলে রাখা হয়। পরে কুষ্টিয়া কারাগারে পাঠানো হয়। দীর্ঘ ৩৩ মাস তোফায়েল আহমেদ কারান্তরালে ছিলেন। ১৯৭৮-এ কুষ্টিয়া কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তিনি। দীর্ঘ ১৪ বছর তিনি সফলভাবে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন (তখন একজন মাত্র সাংগঠনিক সম্পাদক পদ ছিল)। ১৯৯২-এ তোফায়েল আহমেদ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন এবং দীর্ঘ ১৮ বছর এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বর্তমানে দলের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য তিনি। রাজনতৈকি জীবনে স্বৈরশাসক জিয়া, এইচ এম এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে তিনি প্রায় ৫ বছর কারাগারে জীবন কাটিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে তিনি কখনো ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, সিলেট, কুমিল্লা, বরিশাল, রাজশাহী, কাশিমপুর  কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ছিলেন। 

তোফায়েল আহমেদ ১৯৭০-এ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে এমএনএ এবং ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে মোট আটবার এমপি নির্বাচিত হন। এর মধ্যে তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে ভোলা ১ ও ২ আসন থেকে পরপর দুবার দুটি আসনে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় ঐকমত্যের সরকারে’ তিনি শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে নির্বাচনকালীন সরকারে তিনি শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তিন দফা মুখপাত্র এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা-ডব্লিউটিওসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান ও বিভিন্ন দেশ সফর করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনেক স্মৃতিচারণ করেন জাতির পিতার সঙ্গে কাটানো সোনালি সময়গুলো নিয়ে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য সেসব তুলে ধরা হলো-

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন আপনার। ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অধ্যায়গুলোতে আপনার অবদান আছে। কখনো কখনো আপনি নিজেই ইতিহাসের অনন্য উপাদান। রাজনীতিতে ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে, এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি কী?

তোফায়েল আহমেদ : গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা একজন মানুষ আমি। আমার রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় মূল্যায়ন হচ্ছে, বিশ্বের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য লাভ। এটাই আমার সবচেয়ে বড় অনুভূতি। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই তিনি আমাকে কাছে রেখেছেন। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব হিসেবে তিনি (বঙ্গবন্ধু) দেশ-বিদেশে যেখানে গেছেন, সেখানেই আমাকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে কমনওয়েলথ, জোট নিরপেক্ষ, ইসলামী সম্মেলন এবং জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানসহ বিভিন্ন দেশ সফর করি। আমার জীবন সার্থক ও ধন্য। একজন অজপাড়া গাঁয়ের সাধারণ ছেলের সবচেয়ে বেশি পাওয়া, যা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : রাজনৈতিক জীবনের সূচনা কীভাবে? আদর্শ বা অনুপ্রেরণা কে ছিলেন?

তোফায়েল আহমেদ : আমার রাজনৈতিক আদর্শ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৭ সালে ভোলা সরকারি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় জীবনে প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখি। সে সময় একটি উপ-নির্বাচন উপলক্ষে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে ভোলাতে যান জাতির পিতা। সেদিন ভোলা স্কুলের মাঠে জনসভায় জাতির পিতা যে বক্তৃতা করেছিলেন, মন্ত্রমুগ্ধের মতো তন্ময় হয়ে তা শুনি। আর সেই সময়েই উপলব্ধি করেছিলাম, জীবনে কোনো দিন যদি রাজনীতি করি, এই মহান নেতার আদর্শের রাজনীতি করব। আমার সেই স্বপ্ন ও আদর্শ পূরণ হয়েছে। যাকে ১৯৫৭ সালে দূর থেকে দেখেছিলাম, কখনো ভাবিনি তাঁকে এত কাছে পাব ও সঙ্গে থাকতে পারব। তাঁর সান্নিধ্য পাব।  

বাংলাদেশ প্রতিদিন : রাজনীতির ৫০ বছর শেষে এসে কী মনে হয়, রাজনৈতিকভাবে এখনো কিছু আপনার অপ্রাপ্তি আছে? যা চেয়েছিলেন, পেয়েছেন কী?

তোফায়েল আহমেদ : আমার অপ্রাপ্তি নেই। আমার জীবনে যা পাওয়ার কথা ছিল না, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি পেয়েছি। সুতরাং আমার পাওয়ার আর কিছু নেই। একটাই চাওয়া ইজ্জত-সম্মানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়া। বড় অর্জন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য লাভ। তাঁর আদর, ¯ন্ডেœহ ও ভালোবাসা পাওয়া।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ব্যর্থতা আছে বলে মনে করেন? কী সেসব ব্যর্থতা?

তোফায়েল আহমেদ : প্রত্যেক মানুষের জীবনে সফলতা যেমন আছে, ব্যর্থতাও আছে। আমার সফলতা দেশের মানুষ মূল্যায়ন করবে। আমার জীবনে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। জীবনে যা পেয়েছি তা কল্পনাও করতে পারিনি। ভোলায় আমার মায়ের নামে ‘ফাতেমা খানম’ একটা কমপ্লেক্স আছে। সেই কমপ্লেক্সের মধ্যে ‘ফাতেমা খানম গার্লস হাইস্কুল’ ‘ফাতেমা খানম ডিগ্রি কলেজ’ ‘ফাতেমা খানম মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র,’ ‘ফাতেমা খানম জামে মসজিদ’, ‘ফাতেমা খানম এতিমখানা’, ‘ফাতেমা খানম বৃদ্ধাশ্রম’ আছে। সেখানে ‘ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন’, ‘বঙ্গভঙ্গ’ এবং ‘বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস’ স্মৃতি ধরে রাখার জন্য একটা ‘স্বাধীনতা জাদুঘর করেছি’। এই কমপ্লেক্সের মধ্যেই আমার বাবা-মায়ের নামে একটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাজ চলছে। এগুলো নিয়েই আমি বাকি জীবন কাটাতে চাই।   

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া এত বড় গণজাগরণ বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটেনি, যেমনটি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ঘটেছিল। সেই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম মহানায়ক আপনি। এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি কী?

তোফায়েল আহমেদ : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সেই দিনগুলো ছিল আমার জীবনের সোনালি দিন। জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। আমাদের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৬৯ এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। কারণ ওই কালপর্বটি ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের ‘ড্রেস রিহার্সেল’। বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ ছয় দফা দেওয়ার অপরাধে বঙ্গবন্ধু মুজিবসহ মোট ৩৫ জনকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি করে তাদের ফাঁসি দেওয়ার লক্ষ্যে এবং নির্বিঘ্নে পুনরায় ক্ষমতায় আরোহণের এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে আইয়ুব খান এগোচ্ছিলেন। আগরতলা মামলার বিচার যখন শুরু হয় তখন আমরা উপলব্ধি করি, বঙ্গবন্ধুকে যদি ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো হয় তাহলে চিরদিনের জন্য বাঙালি জাতির কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যাবে। তাই আমরা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফাকে অন্তর্ভুক্ত করে ১৯৬৯-এর ৫ জানুয়ারি ১১ দফা কর্মসূচি জাতির সামনে পেশ করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে ‘ডাকসু’ কার্যালয়ে আমার সভাপতিত্বে এবং চার ছাত্র সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ছাত্রলীগের আবদুর রউফ (প্রয়াত), খালেদ মোহাম্মদ আলী, ছাত্র ইউনিয়নের (মতিয়া) সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক (প্রয়াত), সামসুদ্দোহা, ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) মোস্তফা জামাল হায়দার, মাহবুব উল্লাহ, এনএসএফের ইব্রাহিম খলিল এবং ফখরুল ইসলাম মুন্সি, ডাকসুর ভিপি হিসেবে আমি এবং সাধারণ সম্পাদক নাজিম কামরান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। উল্লিখিত ছাত্রনেতারা সবাই আমার থেকে বড় নেতা। কিন্তু ডাকসু সবার। সে কারণেই আমাকে ডাকসুর সভাপতি হিসেবে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মুখপাত্র করা হয়। এসব নেতার উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন এবং ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ১১ দফা ঘোষণা করা হয়। এরপর আমরা ধাপে ধাপে আন্দোলনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিলাম। ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থান হলো। এর ফলে ২২ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতাসহ রাজবন্দীদের পাকিস্তানের সরকার আইয়ুব খান ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ১০ লাখ মানুষের সামনে কৃতজ্ঞ বাঙালির জাতির পক্ষে কৃতজ্ঞচিত্তে বঙ্গবন্ধুকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলাম। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে এই উপাধি দেওয়া হয়। আমার জীবনে যদি কোনো শ্রেষ্ঠ দিন থাকে সেটা ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : জাতির পিতাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়েছেন। তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়ার ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে গত বছর। সেই দিনটির স্মৃতিচারণ করতে পারেন।

তোফায়েল আহমেদ : ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তীব্র আন্দোলনের ফলে ২২ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্ত হয়ে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে আসেন। তখন আমি ছুটে গিয়েছিলাম সেখানে। বঙ্গবন্ধু আমাকে কাছে টেনে নিলেন। বুকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করলেন। ২৩ তারিখ আমরা তৎকালীন রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জাতির পিতাকে কৃতজ্ঞ বাঙালির পক্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করি। তখন বঙ্গবন্ধু আমাকে বুকে টেনে নিলেন। এরপর থেকেই জাতির পিতা আমাকে কাছে রেখেছিলেন। তিনি যে ¯ন্ডেœহ, মমতা দিয়েছেন তা কখনো কল্পনাও করিনি। ব্যক্তি জীবনে মা-বাবা আর রাজনৈতিক জীবনে জাতির পিতার কাছে আমি সবচেয়ে ঋণী। আমি প্রত্যেক দিন যখন ঘর থেকে বের হই, তখন প্রথমে জাতির পিতার ছবি, পরে আমার মায়ের ছবির পাশে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকি। তারপর বের হই। আমি জাতির পিতার কাছে ঋণী। এই ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারব না।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : লকডাউনের মধ্যে কি দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সোনালি অধ্যায়ের ঘটনাগুলো মনে পড়ে? সহযোদ্ধা, প্রতিপক্ষের স্মৃতি? তাঁদের মধ্যে অনেকেই তো বেঁচে নেই।

তোফায়েল আহমেদ : রাজনৈতিক সহযোদ্ধা যারা বেঁচে আছেন তাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। আমার প্রিয় নেতা শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি ভাই, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক ভাইসহ অনেক জাতীয় নেতার কথা মনে পড়ে। তাদের সঙ্গে কাটানো সময়গুলো আমাকে স্মৃতিকাতর করে। বাড়িতে আমার লাইব্রেরি আছে, বই পড়ে সময় কাটাই। আমার সাধারণ জীবন নিয়ে একটা আত্মজীবনী লেখার কাজ শুরু করেছি। এর আগে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে বসেও স্মৃতিকথা বলেছি। 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নির্বাচিত করা, দেশে ফিরিয়ে আনার প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনীতা নিয়ে যদি কিছু বলেন। 

তোফায়েল আহমেদ : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিদেশের মাটিতে থাকায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান। দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালের ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কাউন্সিলে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। এরপর আমরা ছুটে যাই নয়াদিল্লিতে। দিনক্ষণ ঠিক করে ১৭ মে পিতা-মাতাবিহীন দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সেদিন ছিল রবিবার। বঙ্গবন্ধুকন্যার আগমনে সেদিন গগনবিদারী মেঘ গর্জন, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রকৃতি যেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বদলা নেওয়ার লক্ষ্যে গর্জে উঠেছিল। আর অবিরাম মুষলধারে বারিবর্ষণে যেন ধুয়ে-মুছে যাচ্ছিল বাংলার পিতৃহত্যার জমাট বাঁধা পাপ আর কলঙ্কের চিহ্ন। তাঁকে এক নজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জনতার কণ্ঠে বজ্রনিনাদে ঘোষিত হয়েছিল ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম- পিতৃহত্যার বদলা নেব’। আমরা স্লোগান দিয়েছিলাম, ‘ঝড়-বৃষ্টি, আঁধার রাতে আমরা আছি তোমার সাথে’। 

ঝড়-বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে শেরেবাংলা নগরে লাখ লাখ মানুষের সংবর্ধনা ও হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা-ভালোবাসার জবাবে পিতা-মাতা-ভাইসহ স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘... সবকিছু হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি। আজকে লাখ লাখ মানুষ দেখছি, খুঁজে পাচ্ছি না আমার ছোট্ট ভাই শেখ রাসেলকে। যে আমাকে আর আপু বলে ডাকবে না। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এ জীবন দান করতে চাই। আমার আর হারানোর কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাঁদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’ শেখ হাসিনা সেদিন জনগণকে দেওয়া সেই অঙ্গীকার পূরণে বিগত ৪০ বছর ধরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে দেশের মানুষের ভাগ্য বদলে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এসেছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে। তাঁর হাতে পতাকা দিয়েছিলাম বলেই স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। তাঁর হাতে পতাকা দিয়েছিলাম বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। যারা এক দিন বলেছিল, বাংলাদেশ হবে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের দেশ। তারাই এখন বলেন, বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একজন সার্থক রাজনীতিবিদ। তিনি জননেত্রী থেকে রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দুটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। একটি বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। আরেকটি বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। দুটিই বাস্তবায়ন হয়েছে। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হব। বাংলাদেশর অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নের পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, মেট্রো রেল, উড়ালসড়ক, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী ট্যানেল, ফোর  লেনসহ বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের বুকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী যে সুনাম অর্জন করেছেন তা অকল্পনীয়।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : যেমন বাংলাদেশের জন্য লড়াই, সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, সেই বাংলাদেশের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের মিল ও অমিল কোথায়?

তোফায়েল আহমেদ : জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করা এবং ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়া। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত দেশ যখন গঠনে কাজ শুরু করলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা নির্মমভাবে তাঁকে সহপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা কাজ করছি। আজকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলার পরিণত করব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বছর উদযাপিত হচ্ছে (যদিও করোনার কারণে কিছু অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে হয়নি) চলতি বছর। আগামী বছর স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করা হবে। এসব বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

তোফায়েল আহমেদ : আসলেই আমাদের জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্য। বাংলাদেশের মহান স্থপতির জন্মশতবার্ষিকী এ বছর। গত ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ‘কাউনডাউন’ পর্ব দিয়ে কর্মসূচির সূচনা হয়েছিল। কিন্তু বৈশ্বিক সংকট করোনার আঘাত বাংলাদেশের ওপর পড়ল। সে কারণে কিছু কর্মসূচি কাটছাঁট করা হলো। তবুও প্রতিদিন টেলিভিশন-পত্রপত্রিকা ও অনলাইনে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের নানা কর্মসূচি বা স্মৃতিচারণ আমরা দেখতে পাই। যে পরিসরে করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম তা হয়নি। কিন্তু কর্মসূচি চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মুজিববর্ষেই আমরা দুটো (মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী) কর্মসূচি ভালোভাবে উদযাপন করতে পারব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনা মোকাবিলায় সরকার যেভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেসব বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

তোফায়েল আহমেদ : আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, সেগুলো যদি সঠিকভাবে সমন্বয় করা যায় তাহলে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব। সবার আগে প্রয়োজন সঠিকভাবে সমন্বয়। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সমস্ত পৃথিবী আজ একই সুরে কথা বলছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : করোনা দুর্যোগের কালে বিএনপির রাজনীতিতে গুণগত কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন?

তোফায়েল আহমেদ : বিএনপির রাজনীতির কোনো পরিবর্তন দেখি না। প্রতিদিনই তারা মিথ্যাচার করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে যখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, সেই মুহূর্তে যার যার জায়গা থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা যেখানে চালানো প্রয়োজন, তারা সেটা না করে সরকারের সমালোচনা করছে। 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাকে ধন্যবাদ। 

তোফায়েল আহমেদ : বাংলাদেশ প্রতিদিন পরিবারকেও ধন্যবাদ।

সর্বশেষ খবর