বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাকালে পুলিশে ফিরেছে মানবিক চরিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাকালে পুলিশে ফিরেছে মানবিক চরিত্র

করোনাভাইরাসের প্রকোপ সারা পৃথিবীর মতো এদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। গত ১১ মার্চ আন্তর্জাতিক সংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা দেয়। প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। মৃত্যুর মিছিলও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও ত্রাণ বিতরণসহ বেশির ভাগ কাজ পুলিশকেই করতে হচ্ছে। এমনকি লাশ দাফন সম্পন্নও করতে হচ্ছে পুলিশকে। সব দুর্নাম ছাপিয়ে এই করোনাকালে পুলিশ ফিরে পেয়েছে মানবিক চরিত্র। গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে কার্যত দেশে লকডাউন শুরু হয়। এরপরই অসহায়, দুস্থ ও খেটে খাওয়া মানুষদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ। করোনাকালের পুরো সময় তার বিভাগীয় কার্যালয় থেকে সকাল-সন্ধ্যা এসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে আসছেন তিনি। গত ১ মে থেকে করোনা মোকাবিলায় সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের মাঝে পিপিই বিতরণ শুরু করে ডিএমপির তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোন। অন্তত ২৫ জন সাংবাদিককে পিপিই দেন এ জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) এম এম মঈনুল ইসলাম। পাশাপাশি ৫০ জন দুস্থ সাংবাদিকের মাঝে ঈদ উপহারসামগ্রী পাঠান। এর আগে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের ৫০ জন চিকিৎসকের মাঝে পিপিই বিতরণ করেন। এ ছাড়া ২০০ পুলিশের মাঝে পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ফেস মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস বিতরণ করা হয়। পুলিশের এই জোনের উদ্যোগে অন্তত ৫ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, হাতিরঝিল ছাড়াও ফোন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য পেলেই খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন এসি মঈনুল ইসলাম। তিনি পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের টাকা এবং দানশীল ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে নিজ জোনের বাইরেও গোপালগঞ্জ, পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেসে থাকা শিক্ষার্থীর খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেন। এ ছাড়া শ্যামপুর, শনির আখড়া, উত্তরা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা পাঠান। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বাইরেও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্ব পালন করছে তারা। যা বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অনেক বেশি দৃশ্যমান। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের দাফন সম্পন্ন করতে হচ্ছে পুলিশকেই। ৪০ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরও থেমে যায়নি সিলেট জেলা পুলিশ। এরপরও লাশ দাফন ও বাড়ি বাড়ি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। খবর পাওয়া মাত্রই সার্বিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন। করোনা সমস্যা মোকাবিলায় বর্তমানে বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটকে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) এর হটলাইন সেবা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। হটলাইনে  ফোন বা এসএমএসের মাধ্যমে সাহায্য চাইলেই সিএমপি সহায়তা টিম ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। পাশাপাশি এই ইউনিটটি প্লাজমা ব্যাংক তৈরিও উদ্যোগ নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর