বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

প্রতিদিন ডেস্ক

তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

জামালপুরে পানি বাড়ছেই। ছবিটি গতকাল ইসলামপুর উপজেলার বামনা এলাকা থেকে তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ১২ ঘণ্টায় টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকূল পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে।

গতকাল দুপুরে সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেওয়া এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ অবস্থায় ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ  জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম অংশে বিপৎসীমার ৪১  সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঘাঘটের গাইবান্ধা অংশে ৫০ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া অংশে ৫২  সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী অংশে ৬৩ সেন্টিমিটার, যমুনার ফুলছড়ি অংশে ৭৯ সেন্টিমিটার, বাহাদুরবাদ অংশে ৮৪  সেন্টিমিটার, যমুনার সারিয়াকান্দি অংশে ৬৭ সেন্টিমিটার, যমুনার কাজিপুর অংশে ৭০ সেন্টিমিটার, আত্রাইয়ের বাঘাবাড়ি অংশে ৩৪  সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরীর এলাসিন অংশে ৩২ সেন্টিমিটার, পদ্মার  গোয়ালন্দ অংশে ৩১ সেন্টিমিটার, সুরমার সুনামগঞ্জ অংশে ৯  সেন্টিমিটার এবং পুরাতন সুরমার দিরাই অংশে বিপৎসীমার ১৯  সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও খবর- রংপুর : রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। গঙ্গাচড়ায় পানির তোড়ে মার্জিনাল ডাইক (প্রান্তিক বাঁধ) এর ব্লক পিচিং ধসে গেছে। কয়েকদিনের বন্যায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নোহালী ইউনিয়নের বৈরাতি নামক স্থানে অবস্থিত মার্জিনাল ডাইকের প্রায় ৭০ ফুট অংশের ব্লক পিচিং ধসে যায়। স্থানীয়রা বাঁশ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তারা জানান, ২০১৮ সালে এখানে ব্লক পিচিং করা হলেও সামনে ব্লক ডাম্পিং না করার কারণে পানির তোড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, দু-একদিনের মধ্যে সেখানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে। এদিকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি এক সপ্তাহ যাবৎ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে গত কয়েকদিনের বন্যার পানিতে ডুবে শান্ত, বেলাল ও মোস্তাকিম নামে ৩ শিশু মারা গেছে বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সিভিল সার্জন নিশ্চিত করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে পানি ৮ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমে ৫১ সেন্টিমিটার ওপর এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার কমে ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন তীব্র রূপ ধারণ করেছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে সদরের সারডোব, মুঘলবাসা  ও নুনখাওয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এ ছাড়া জয়কুমার, থেতরাই, কালিরহাটসহ আরও ১২টি স্পটে ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছে অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার। গাইবান্ধা : গত দুই দিন থেকে গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি কমতে থাকলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ৪ সেন্টিমিটার ও ঘাঘটের পানি ৩ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে ব্রহ্মপুত্র এখনো বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে বলে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে। অন্যদিকে করতোয়ার পানি ২ সেন্টিমিটার আর তিস্তার পানি ১২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যমুনার পানি বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩১টি ইউনিয়নের ২১৬টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। প্রায় ২৫ হাজার পরিবারের কয়েক লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন শতাধিক ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে।

নেত্রকোনা : কয়েকদিনের টানা বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা এই পাহাড়ি ঢলে বন্ধ হয়ে গেছে নেত্রকোনা-ঠাকুরোকানা কলমাকান্দা সড়কের যোগাযোগ। বিভিন্ন স্থানে সড়ক তলিয়ে গেছে। ফলে বাস, টেম্পু, রিকশাসহ ওই সড়কে সব প্রকার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

টাঙ্গাইল : বৃষ্টি ও উজানের ঢলে টাঙ্গাইলের সবকটি নদীর পানি বাড়ছে। যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় টাঙ্গাইলের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ধলেশ্বরীসহ জেলার সব অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার তীর উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় নতুন নতুন এলাকায় বন্যাকবলিত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর