সোমবার, ১০ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

এখনো পানিবন্দী লাখো মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

বন্যার পানির কারণে ঘরের চালে আশ্রয় নিয়েছেন বাসিন্দারা। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে শ্রিফলতলী ইউনিয়নের নাওলা উত্তরপাড়া থেকে গতকাল তোলা ছবি -রোহেত রাজীব

বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢল কমে যাওয়ায় দ্রুত উন্নতি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির। গত এক দিনের ব্যবধানে চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। তবে করোনার মধ্যে মাসব্যাপী বন্যায় তছনছ হয়ে গেছে ২১টি জেলার ৩০ লক্ষাধিক মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ভেসে গেছে ঘর, নদীগর্ভে গেছে ভিটেমাটি, পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে ফসল, কাজ না থাকায় অর্ধাহারে-অনাহারে কাটছে জীবন। অনেক স্থানে বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি বানভাসিরা। বাড়ি-ঘরে রয়েছে কাদা।  নেই রান্নার জায়গা। হাতে নেই ঘরবাড়ি মেরামতের টাকা, ঘরে নেই খাবার। তারপরও ক্ষত কাটিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় সংগ্রাম করছেন দুর্গত এলাকার মানুষগুলো।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যমতে, অনেক এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় উঁচু সড়ক ও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া বানভাসি মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। পানির স্রোতে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি মেরামতে পার করছেন ব্যস্ত সময়। হাতে টাকা-পয়সা না থাকায় কেউ কেউ বাড়িঘর মেরামত করতে না পেরে ভাঙা ঘরেই কোনো রকমে পরিবার নিয়ে মাথা গুঁজে আছেন। উঠানে ও ঘরের মধ্যে কাদা থাকলেও নিজের ঘরে ফিরেই স্বস্তি বোধ করছেন তারা। উঁচু জায়গায় চুলা বসিয়ে রান্না করছেন। তবে খাদ্য সংকটে অর্ধাহারে-অনাহারে কাটছে অনেক পরিবারের দিন। দুর্গত এলাকায় সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকলেও তা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তুলনায় অপর্যাপ্ত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

এদিকে এক দিনের ব্যবধানে গতকাল চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও বিপৎসীমার ওপরে ছিল আটটি নদ-নদীর পানি প্রবাহ। ফলে ১২টি জেলা এখনো  বন্যামুক্ত হতে পারেনি। ঢাকায় গতকাল বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও তুরাগের পানি বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে রাজধানী ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া ও টঙ্গীর অনেক নিচু এলাকা এখনো বন্যার পানিতে ডুবে আছে। তবে এক দিনের ব্যবধানে তুরাগের পানি ৯ সেন্টিমিটার কমেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রকৌশলীদের মতে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে আসবে। এদিকে গতকাল সকালেও পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের ১৬টিতে পানি বৃদ্ধি পায়। তবে হ্রাস পায় ৮০টিতে। অপরিবর্তিত ছিল পাঁচটি স্টেশনের পানি সমতল। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও তথ্য- মাদারীপুর : জেলার চারটি উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তবে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর দুই পাশের অনেক গ্রামের নিচু স্থানের ঘরবাড়িতে এখনো পানি রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বন্যা ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে পানি কমতে শুরু করলেও শিবচর উপজেলার পদ্মাবেষ্টিত চর ও সংলগ্ন ইউনিয়নগুলো এবং সদর উপজেলা, রাজৈর ও কালকিনি উপজেলার নিম্নাঞ্চল এখনো প্লাবিত হচ্ছে। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। জেলার প্রায় ৪০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষি ফসলের। অন্যদিকে নদীর পানি কিছুটা কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানিকগঞ্জ : নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় অনেকের বাড়িঘর থেকে পানি নামলেও দুর্ভোগ কমেনি। ঘরের পানি নামলেও রয়েছে উঠানে পানি। ময়লা-আবর্জনায় সয়লাব বাড়িঘর। টিউবওয়েল ডুবে থাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট রয়েছে। বানের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার করে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। জলাবদ্ধতায় আটকে পড়া ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে রাস্তাঘাট দিয়ে চলাচল করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। জামালপুর : বন্যার কারণে মাসেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সড়ক, বাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্রে দিনযাপনের পর বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে বন্যা দুর্গতরা। গত ২৬ জুন প্রথম দফায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করায় জামালপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এরপর টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে জেলার ৭ উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৯টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়। দুর্গত এলাকার মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র, উঁচু সড়ক, বাঁধ, রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফরমে আশ্রয় নেয়। কর্মহীন হয়ে পড়ে মানুষ। পানি কমতে শুরু করায় গত চার দিন ধরে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে দুর্গতরা। তবে বন্যায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় দুর্গত এলাকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে অনেক সময় লেগে যাবে বলে মনে করছেন বন্যা দুর্গতরা।

সরকারি হিসাবেই চলতি বন্যায় জামালপুর জেলায় ১৩ হাজার ৭৩৮টি বসতঘর আংশিক এবং ৩৮৬টি বসতঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ হাজার ৯১৪টি নলকূপ, ছয় হাজার ৯৩৪টি ল্যাট্রিন, ১২ হাজার ৮৬৩ হেক্টর ফসলি জমি, ১৯৪ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা, ৬৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক, চারটি বাঁধ এবং পাঁচটি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বগুড়া : যমুনা নদীর পানি কমায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। বানভাসিরা ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে উপজেলায় কৃষকের ৬৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। ঈদের আগে বগুড়ার যমুনা নদী সংলগ্ন সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। তিন উপজেলার প্রায় ৩২ হাজার ৩৪২ পরিবারের এক লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর