বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু

আদালত প্রতিবেদক

এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু

জালিয়াতির মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করার মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল মামলার বাদী দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন রাষ্ট্রপক্ষের ১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে আদালতে প্রথম দিন জবানবন্দি দেন। ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে আসামিপক্ষের আইজীবী শাহীনুল ইসলাম অনি সাক্ষীকে জেরা করেন।

এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ আলী সালাম সাংবাদিকদের জানান, মামলার বাদী সাক্ষী দিয়েছেন। আসামিপক্ষ জেরা করেছে। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৫ আগস্ট দিন ধার্য করেছে আদালত। এদিকে ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা আত্মসমর্পণ করলে তাদের জামিন দেন বিচারক। এর আগে বৃহস্পতিবার একই আদালত সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়।

আদালতে যা বলেছেন দুদক কর্মকর্তা : মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা সৈয়দ ইকবাল হোসেন আদালতকে বলেন, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ও শাহজাহান তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) গুলশান শাখায় দুটি চলতি হিসাব খোলেন। পরদিন পৃথক দুটি হিসাবের বিপরীতে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করা হয়। ঋণের আবেদনপত্রে ঠিকানা হিসেবে উত্তরার একটি বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যে বাড়ির মালিক সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের কর্মকর্তা মামলার আসামি জিয়াউদ্দিন আহমেদ, সফিউদ্দিন আসকারী ও লুৎফুল হক ঋণ আবেদন যাচাই-বাছাই না করে, এই ব্যাংক এবং ব্যাংকের কোনো নীতিমালা না মেনেই ঋণ প্রস্তাব প্রস্তুত করেন। তাতে নিজেরা স্বাক্ষর করেন। আসামি জিয়াউদ্দিন আহমেদ ঋণ প্রস্তাবটি হাতে হাতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যান। ফারমার্স ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় কোনো যাচাই-বাছাই না করে ওই ঋণ প্রস্তাব দুটি অনুমোদনের জন্য নোট আকারে উপস্থাপন করেন। তিনি ব্যাংকটির ক্রেডিট শাখার গাজী সালাউদ্দিনের কাছে নিয়ে যান। তিনিও কোনো যাচাই-বাছাই না করে ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীমের কাছে নথিটি নিয়ে যান। ব্যাংকের ঋণ পলিসি নীতি অনুযায়ী এ ধরনের ঋণ অনুমোদনের ক্ষমতা ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের না থাকা সত্ত্বেও অবৈধ প্রক্রিয়ায় তিনি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেন। পরদিন ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন সাহার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদিত ঋণের টাকা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে পে-অর্ডার আকারে ইস্যু করা হয়। ওই বছরের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সোনালী ব্যাংক শাখায় সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ব্যাংক হিসাবে চার কোটি টাকা জমা হয়। দুদক কর্মকর্তা সৈয়দ ইকবাল হোসেন আদালতকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সোনালী ব্যাংক শাখায় টাকা জমা হওয়ার পর সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিভিন্ন সময় টাকা তুলে তা স্থানান্তর করেন। এর মধ্যে ওই বছরের ২৮ নভেম্বর দুটি চেকের মাধ্যমে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার আপন ভাইয়ের শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার হিসাবে এক কোটি ৪৯ লাখ টাকা ও ৭৪ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন। মামলার আসামি রণজিত চন্দ্র সাহা এই ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের সময় নিজে ব্যাংকে উপস্থিত থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নাম উল্লেখ করে ভুয়া ঋণ অনুমোদনের ব্যবস্থা করেন। ঋণ আবেদনকারী নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা আসামি রণজিত চন্দ্র সাহার ভাইপো। অপর ঋণ আবেদনকারী শাহজাহান হচ্ছেন রণজিৎ চন্দ্র সাহার বাল্যবন্ধু। আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা দুজনই গরিব ও দুস্থ। তারা ব্যবসায়ী নন। মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা সৈয়দ ইকবাল হোসেনের জবানবন্দি শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন।

মামলাসূত্রে জানা গেছে, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাবেক ফারমার্স ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে ১০ জুলাই বাদী হয়ে মামলা করেন দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। পরে ঘটনা তদন্ত করে ৯ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক পরিচালক বেনজীর আহমেদ ১১ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, উত্তোলন ও পাচার করেছেন, যা দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সর্বশেষ খবর