গণফোরামের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের পর ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে দুই অংশের শুরু হওয়া গৃহবিবাদ বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনা পর্যন্ত গড়ায়। এখন সংগঠনটি বিভক্তির পথেই হাঁটছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান না পাওয়া অংশটি আগামী রবিবার বর্ধিত সভা ডেকেছে জাতীয় প্রেস ক্লাবে। বর্ধিত সভা প্রক্রিয়ার সঙ্গে আছেন গত কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা।
বর্ধিত সভাকে ‘অগঠনতান্ত্রিক’ বলছেন গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া। মঙ্গলবার তাঁর ও সভাপতি ড. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বর্ধিত সভার সঙ্গে গণফোরামের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তারা এ রকম বর্ধিত সভা আহ্বান করতে পারেন না। এটা সম্পূর্ণভাবে গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ। তবে এটা ঠিক, যে কারও রাজনীতি করার অধিকার আছে। সেটা তারা কোনো দল গঠন করে করতে পারেন। কিন্তু গণফোরামের নাম ব্যবহার করে কোনো সভা করার অধিকার কারও নেই। তিনি দাবি করেন বলেন, ২৬ সেপ্টেম্বরের ‘কথিত’ ওই সভায় গণফোরামের কোনো জেলা কমিটির নেতা আসবেন না। তাঁর সঙ্গে প্রতিটি জেলা কমিটি নেতাদের কথা হয়েছে তারা জানিয়েছেন তারা ওই সভায় যাবেন না। গাজীপুর ও এলিফ্যান্ট রোড থেকে ‘কিছু লোক’ নিয়ে এ সভা হবে বলে তাঁর বিশ্বাস। ড. রেজা কিবরিয়ার এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, ড. রেজা কিবরিয়া নিজেই তো গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল পরিচালনা করছেন না। গঠনতন্ত্রে আছে- ৩০ দিনে সম্পাদক পরিষদ, ৬০ দিনে স্থায়ী কমিটি ও ৯০ দিনে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক করতে হবে। ২০১৯ সালের ৫ মে ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার এক বছরের মধ্যে একটি মিটিংও তিনি করেননি। এসব মিটিং আহ্বান করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির ৭০ জন সদস্য লিখিতভাবে চিঠি দিয়েছেন। উল্টো তাদের মধ্যে ১৩ জনকে কারণ দর্শানো নোটিস ও চারজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এভাবে তো দল চলতে পারে না। এটা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বর্ধিত সভা আহ্বানকারী অংশের নেতারা জানান, এ অনুষ্ঠানে ‘বিতর্কিত’ সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সারা দেশের জেলা-উপজেলা থেকে প্রতিনিধিদের আসতে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গত বছরের কাউন্সিলের পরে ঘোষিত কমিটিতে স্থান পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে মূলত বিরোধের সূত্রপাত। মোস্তফা মহসীন মন্টুকে বাদ দিয়ে ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করার পর থেকে এ বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আহ্বান নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে দাঁড়ায় দুই গ্রুপ। দলের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেন বিপক্ষ গ্রুপের নেতারা। এক পর্যায়ে ড. রেজা কিবরিয়া কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল হাসিব চৌধুরী, খান সিদ্দিকুর রহমান, হেলাল উদ্দিন ও লতিফুল বারী হামিমকে বহিষ্কার করেন। এ নিয়ে বিপক্ষ গ্রুপও পাল্টা বহিষ্কার করেন চারজনকে, তার মধ্যে রয়েছেন- দলের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির মহসীন রশিদ, আ ও ম শফিকউল্লাহ ও মোশতাক আহমেদ। পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের মধ্যে গত ৪ মার্চ গণফোরামের নানা গ্রুপ-বিভক্তির মধ্যে ড. কামাল হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়ে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করেন।