মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অনিয়ম-জালিয়াতি রোধে কঠোর হচ্ছে উচ্চ আদালত

আরাফাত মুন্না

অনিয়ম-জালিয়াতি রোধে কঠোর হচ্ছে উচ্চ আদালত

ভুয়া নথি দাখিল করে হাই কোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার একটি ঘটনা গত সপ্তাহে ধরা পড়ে। সংশ্লিষ্ট আসামির আইনজীবী নিজেই বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে হাই কোর্ট ওই চুয়াডাঙ্গার আবদুস সাত্তারের জামিন আদেশ প্রত্যাহার করে। এ ছাড়া প্রকৃত জালিয়াতির উদ্্ঘাটন করে তথ্য দাখিলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে এক সপ্তাহ সময় দেয়। বিষয়টি এ সপ্তাহে আদেশের জন্য আসবে। এর আগে একই বেঞ্চ জাল কাগজপত্র তৈরি করে জামিন নেওয়ায় কবির বিশ্বাস নামে এক আসামির জামিন বাতিল করে এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেন। শুধু এ দুই মামলা নয়, সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের পাঁচটি জামিন জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।

এদিকে নথি গায়েব, মামলার ফাইল ওপর-নিচ, কার্যতালিকা অদল-বদলের মতো অনিয়ম রোধেও কঠোর হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। অসদাচরণ, দুর্নীতি ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করায় সাম্প্রতিক সময়ে চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে বাধ্যতামূলক অবসর, একজনকে বরখাস্ত এবং দুজনের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। নজরদারিতে রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। ১৬ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের এফিডেভিট শাখায় দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযানে অনাকাক্সিক্ষত অবস্থান করায় ৪৩ ক্লার্ক ও বিচারপ্রার্থীকে আটক করা হয়। পরে মুচলেকা দিয়ে অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ শেষে মৌখিকভাবে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। মূলত এর পর থেকেই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ করা গেলেই বিচারপ্রার্থীরা প্রকৃত সুফল পাবেন। অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখারও দাবি জানিয়েছেন অনেকে। সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, অনিয়মের অভিযোগে করা বিভাগীয় মামলার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ১৬ আগস্ট হাই কোর্ট বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট মো. রেজাউল ইসলামের এক বছরের বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করে আদেশ দেওয়া হয়। এর আগে ১২ জুলাই এক আদেশে অসদাচরণ, অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় হাই কোর্ট বিভাগের বেঞ্চ অফিসার মো. রফিকুল ইসলামকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তারও আগে ১২ মার্চ এক আদেশে হাই কোর্ট বিভাগের এমএলএসএস এ কে এম ইকরামুল হাসানকে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এ বছর ২০ জানুয়ারি হাই কোর্ট বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট মো. এনামুল হক মজুমদারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এক বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে তার উত্তোলন করা অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতেও নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। অন্যদিকে হাই কোর্টের বেঞ্চ অফিসার মোরশেদুল হাসান সোহেলকে ১৬ আগস্ট বরখাস্ত করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ৬ আগস্ট রাজধানীর মিরপুরের মধ্য পীরের বাগের নিজ বাসা থেকে নারী মাদক ব্যবসায়ী এবং ৬০০ পিস ইয়াবাসহ সোহেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জানতে চাইলে হাই কোর্টের সাবেক বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুধু কিছু অসাধু কর্মকর্তার অনিয়মের কারণে অনেক সময় বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে প্রধান বিচারপতির কঠোর অবস্থানের পর অনিয়মের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অ্যাকশন আমরা দেখেছি। এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’

জামিন জালিয়াতির পাঁচ ঘটনায় মামলার নির্দেশ : ২০ সেপ্টেম্বর জাল কাগজপত্র তৈরি করে জামিন নেওয়ায় আসামি কবির বিশ্বাসের জামিন বাতিল করে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেন। ঝিনাইদহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কবির বিশ্বাস জাল কাগজপত্র দাখিল করে সাত বছর কারাদন্ড দেখিয়ে জামিন নিয়েছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে আরও পাঁচটি জালিয়াতির মামলা দাখিলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘটনায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন চকরিয়া উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা খেয়াঘাট ইজারা এক বছরের জন্য নেওয়া হলেও জাল কাগজ সৃজন করে ওই ইজারা দুই বছরের জন্য নেওয়া হয়েছিল মর্মে কাগজপত্র দাখিল করা হয়। এই জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়লে চকরিয়ার নয়াপাড়া, চিরিংগির মেসার্স এএইচ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ মঈনুদ্দীন হাসানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরেক ঘটনায় জাল ক্ষমতাপত্র সৃজন করে দাখিল করায় কুমিল্লার তিতাস থানার ২ নম্বর সাতানি গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া এর আগের সপ্তাহে ২ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবাকে ৫০ পিস দেখিয়ে জামিন নেওয়ার ঘটনায় আসামি মুক্তা বেগমসহ আটজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। বগুড়ার একটি ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর