শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা টেস্টে নানা সংকট

মুগদাসহ তিন ল্যাবে টেস্ট বন্ধ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

তাপমাত্রার পারদ নিচে নামতেই করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে শুরু করেছে। আক্রান্তের হার বাড়ায় করোনা টেস্ট বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আরও দুটি পরীক্ষাগারের আরটি-পিসিআর মেশিন। এতে করোনা টেস্ট ঘিরে দেখা দিয়েছে নানা সংকট।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের ১৭২টি হাসপাতালে ১৭৭টি আরটি-পিসিআর মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি নষ্ট। কর্মকর্তাদের দাবি, এসব মেশিনে যে সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা হতো, তা অন্য ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। ফলে মেশিন বন্ধ থাকার   কোনো প্রভাব করোনা পরীক্ষায় পড়েনি। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরটি-পিসিআর মেশিন ৬ ডিসেম্বর থেকে নষ্ট হয়ে রয়েছে। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সদ্য বিদায়ী পরিচালক ডা. রওশন আনোয়ার বলেন, আরটি-পিসিআর মেশিন পাঁচ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে বিষয়টি জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে মেশিন মেরামত হয়ে এলে আবার টেস্ট শুরু হবে।’ বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান আকবর হোসেন জানান, গত ৩ ডিসেম্বর থেকে তিন দিন বন্ধ ছিল সেখানকার আরটি-পিসিআর মেশিন। মেশিনটি ঠিক করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে আবার পরীক্ষা শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরো বরিশাল বিভাগে এটিই একমাত্র আরটি-পিসিআর মেশিন। এটি যখন বন্ধ হয়ে গেল, তখন পুরো বিভাগের পরীক্ষাই জটিলতার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। নিরবচ্ছিন্ন পরীক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের আরেকটি মেশিন প্রয়োজন।’ গত ৬ ডিসেম্বর থেকে মেশিন নষ্ট হওয়ায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি পরীক্ষাগারে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না। গতকাল বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরীক্ষাগারে করোনার নমুনা টেস্ট হয়নি।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ৫১টি সরকারি ও ৬১টি বেসরকারি পরীক্ষাগারে করোনা টেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে জিন-এক্সপার্ট সরকারি ১৬টি ও বেসরকারি ২টি, র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন দেওয়া হয়েছে ১০ জেলায়। মোট ১৪০টি পরীক্ষাগারে করোনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে নমুনা টেস্ট হয়েছে ১৬ হাজার ২৬৫টি। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৬১ জনের। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৭ জন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জেলার একমাত্র আরটি-পিসিআর মেশিন রয়েছে। তবে ইদানীং মেশিনটি ত্রুটিযুক্ত ও ভুল ফলাফল দিচ্ছে। ৩০ নভেম্বর থেকে বন্ধ থাকার পর গত সোমবার থেকে সেখানে আবার শুরু হয়েছে পরীক্ষা। রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের গেটে একটি নোটিসে লেখা রয়েছে, ‘অনিবার্য কারণে মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কভিড-১৯ টেস্ট বন্ধ থাকবে।’ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক কর্মী জানান, সেখানকার আরটি-পিসিআর মেশিনটি কাজ করছে না। প্রতিদিন মেশিনে ১৮০ থেকে ২০০টি নমুনা পরীক্ষা করা হতো বলেও জানান তিনি। স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মেশিনগুলো মাঝে মাঝে কাজ করে না। আমরা খুব দ্রুত সেগুলো মেরামতের চেষ্টা করছি। একটি আরটি-পিসিআর মেশিন মেরামত করতে দুই থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে। আরটি-পিসিআর মেশিন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) বে-নাজির আহমেদ বলেন, ‘কভিড-১৯ এর সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিরবচ্ছিন্ন পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল। পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিদিনের পরীক্ষার সংখ্যা কম। আমাদের প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা দরকার। সংখ্যা এত কম থাকার মধ্যেই যদি আরটি-পিসিআর মেশিনগুলো কাজ না করে, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর