রবিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

অক্সফোর্ডের টিকা ভারতে অনুমোদন

প্রতিদিন ডেস্ক

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনা টিকা ব্যবহারে অনুমোদন দিয়েছে ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে। বলা হচ্ছে, দেশটিতে আগামী বুধবার থেকে এই টিকা প্রয়োগ করা হতে পারে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে ভারতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ায় (এসআইআই) প্রস্তুত হচ্ছে করোনার টিকা ‘কোভিশিল্ড’। এর আগে যুক্তরাজ্য এই টিকা জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে। গত বুধবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিও জরুরি প্রয়োগ নিয়ে বৈঠক করে। সব মিলিয়ে গত তিন দিনে দুটি বৈঠক হয়। গত শুক্রবারের বৈঠকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কোভিশিল্ড’ টিকা জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের এই বিশেষজ্ঞ কমিটি মূলত টিকার বিভিন্ন ধাপের পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিস্তারিত তথ্য বিশ্লেষণ করে, সেটি নিরাপদ ও কার্যকর কিনা-তা বিবেচনা করে দেখেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, এবার এই সুপারিশ বা ছাড়পত্র বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার (ডিসিজিআই) কাছে। ডিসিজিআইয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন ছাড়া ভারতে কোনো ওষুধ বা টিকার ব্যবহার বা প্রয়োগ করা যায় না।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিশিল্ডকে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছ ডিসিজিআই। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চায়নি। শুক্রবারের বৈঠকে সেরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেক তাদের টিকার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে। এই দুটি প্রতিষ্ঠান টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছিল। শুক্রবারের বৈঠকে এ দুটি টিকা বিবেচনা করা হয়। একই তালিকায় ছিল ফাইজার-বায়োএনটেকও। তবে ফাইজার বিস্তারিত উপাত্ত উপস্থাপনের জন্য আরও কিছুদিন সময় চেয়েছে।

টিকা নিয়েও করোনায় আক্রান্ত : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে যখন বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব, তখন টিকা আবিষ্কার হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পায় বিশ্ববাসী। এরই মধ্যে বাজারে এসেছে ফাইজার ও মডার্নার টিকা। টিকা দুটি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে অনুমোদন  দেওয়া হয়েছে। ওইসব দেশে চলছে টিকা প্রদানও শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ফাইজারের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও।

এই বাস্তবতায় অন্যান্য দেশের মতো ইসরায়েলও নিজেদের নাগরিকদের ফাইজার-বায়োনটেকের উদ্ভাবিত টিকা প্রয়োগ শুরু করেছে। তবে ওই টিকা নেওয়ার নতুন করে ২৪০ জন ইসরায়েলি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে রুশ গণমাধ্যম আরটি ও টাইমস অব ইসরায়েল এ তথ্য জানিয়েছে।

চ্যানেলে-১৩ এর তথ্যমতে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন  নেতানিয়াহুর দেশে টিকা নেওয়া সত্ত্বেও এ পর্যন্ত ২৪০ জন কভিড সংক্রমিত হয়েছেন। ভ্যাকসিন নেওয়ার ক’দিনের মধ্যেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে না, এমনটি বলছেন বিশেষজ্ঞরা। নিয়ম অনুযায়ী দুই ডোজ টিকা নিতে হবে।

এ ছাড়া ইনজেকশন নেওয়ার পর প্রায় এক হাজার  লোকের মধ্যে হালকা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এর মধ্যে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা এবং জ্বর আসা। ইনজেকশন  দেওয়ার স্থানে ব্যথা, ফোলাভাব এবং লাল হয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, গেল বছরের ২০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রটিতে গণহারে করোনা টিকাদান কর্মসূচিটি চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী  নেতানিয়াহু। এরই মধ্যে এক লাখ মানুষকে জরুরিভিত্তিতে ফাইজারের ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়েছে। যা  দেশটির জনসংখ্যার ১২ শতাংশ মানুষ। অক্সফোর্ডের টিকাও দ্রুত ইসরায়েলে পৌঁছে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

ভারতে ভ্যাকসিনের ড্রাই ট্রায়াল রান : ভারতজুড়ে কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ড্রাই রান (মহড়া) শুরু হয়েছে। গতকাল থেকে প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে এ মহড়া চালানো হচ্ছে।

মহড়ায় শেখানো হচ্ছে, করোনার ভ্যাকসিন বা টিকা এলে তা দেওয়ার সময় কী কী করতে হবে? কোন কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে? কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে? প্রাথমিকভাবে কাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে? ভ্যাকসিন সম্পর্কে কীভাবে প্রচার করা হবে? এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই বা কি? ইত্যাদি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মেনে গতকাল পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার মধ্যমগ্রাম ও দত্তাবাদ আরবান প্রাইমারি হেলথ সেন্টার এবং আমডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে করোনা ভ্যাকসিনের ড্রাই রানের ব্যবস্থা করা হয়। এতে ২৫ জন করে মোট ৭৫ জন স্বেচ্ছাসেবক অংশগ্রহণ করেন। প্রথম ধাপে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বাইরে থাকা স্বেচ্ছাসেবীদের নাম একে একে ডাকেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। তারপর তাদের পাঠিয়ে  দেওয়া হয় ওয়েটিং রুমে। সেখান থেকে তাদের পরিচয়পত্র এবং অন্য আবশ্যিক তথ্য মিলিয়ে দেখা হয়। তারপর তাদের পাঠানো হয় ভ্যাকসিনেশন রুমে। সেই ঘরে তাদের টিকা দেওয়ার মহড়া চলে। মহড়ার পর তাদের পাঠানো হয় রেস্ট রুমে। সেখানে আধা ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়ার পর সুস্থতা অনুভব করলে তাদের নিজেদের বাড়ি চলে যেতে দেওয়া হয়। কিন্তু আধাঘণ্টার মধ্যে কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে চিকিৎসকরা তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।

সর্বশেষ খবর