সোমবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

কারা পাবে ভ্যাকসিন

অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যাচাইয়ে তথ্য জোগাড় করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর

জয়শ্রী ভাদুড়ী

কারা পাবে ভ্যাকসিন

সরকার এরই মধ্যে প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে দেশে কীভাবে বণ্টন হবে করোনাভাইরাসের টিকা। কভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত ৬ লাখ স্বাস্থ্যকর্মীকে শুরুতে টিকা দেওয়া হবে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কেনার জন্য ৬০০ কোটি টাকা অগ্রিম হিসেবে ব্যাংকে জমা দেওয়া হচ্ছে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা জানার জন্য টিকা তৈরির বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক কমিটি এখন তা পর্যালোচনা করছে। টিকা-সংক্রান্ত পরিকল্পনাপত্র অনুসারে দেখা যায়, সবার আগে পাবে সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে সরাসরি করোনা রোগীদের সেবায় কাজ করা চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ধাত্রী, ফিজিওথেরাপিস্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ও অ্যাম্বুল্যান্সচালক- যাদের সংখ্যা ৩ লাখ ৩২ হাজার ২৭। পাশাপাশি পাবেন বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে সরাসরি করোনা রোগীদের সেবায় কাজ করা ৬ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী। এর পরই টিকা পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে কাজ করা অন্যান্য বিভাগের আরও ১ লাখ ২০ হাজার চিকিৎসক-নার্স ও অন্যরা। এ ছাড়া রয়েছেন ২ লাখ ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙ্খলা

রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সরাসরি করোনায় দায়িত্ব পালন করা ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৯ জন, সশস্ত্র বাহিনীর ৩ লাখ ৬০ হাজার সদস্য। এ তালিকায় রয়েছেন বিচার বিভাগ, মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের ৫ হাজার শীর্ষ কর্মকর্তা। সাংবাদিকদের মধ্যে যারা সরাসরি করোনার খবর সংগ্রহে কাজ করেছেন এমন ৫০ হাজার গণমাধ্যমকর্মী, সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন পাবেন এরপর। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত ১ লাখ ৫০ হাজার জন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ষাটোর্ধ্ব বয়সের ৫ লাখ ৮৬ হাজার জনের সঙ্গে টিকা পাবেন ৭৫ হাজার দাফন ও সৎকারকর্মী। দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ মানুষ পর্যায়ক্রমে করোনাভাইরাসের টিকা বিনামূল্যে পাবেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমরা অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে টিকা প্রয়োগের পরিকল্পনা প্রায় সম্পন্ন করে এনেছি। প্রথমে আমরা প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ৩ কোটি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাব ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে।’ তিনি বলেন, ‘পরে বাকিটা আসবে কোভেক্স থেকে। এমনকি সেরাম থেকেও আরও আসতে পারে। এ ছাড়া প্রাইভেট সেক্টরকেও আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। ফলে কিছুটা সময় লাগলেও টিকার কোনো সংকট হবে বলে মনে হয় না। পেশাভিত্তিক মানুষের তালিকা তৈরির একটি পদ্ধতি আইসিটি বিভাগ প্রায় চূড়ান্ত করেছে। তবে সাধারণ মানুষের তালিকা তৈরির পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে আরও কিছু সময় লাগবে।’

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পরীক্ষা হয়নি ভারত কিংবা বাংলাদেশে। তাই এ অঞ্চলের মানুষের শরীরে এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনো তথ্য নেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা জানার জন্য টিকা তৈরির বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক কমিটি এখন তা পর্যালোচনা করছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যুক্তরাজ্য বা ভারতে বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে দেওয়া শুরু হয়নি। তাই এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী, তা এখনো জানা যায়নি। তবে এই টিকা দেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তা নিরসনের জন্য নির্দেশিকা তৈরি করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা ট্রায়াল হওয়া দরকার ছিল। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর ওপর ভ্যাকসিনের প্রভাব কেমন হবে, সেটা দেখতে হতো। এমনকি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনেরও ট্রায়াল হয়ে আসা উচিত। এখন লাখ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। কিন্তু তাদের মধ্যে যদি কেউ সমস্যায় পড়ে তাহলে সেটা দুঃখজনক বিষয়। তাই পরামর্শক কমিটি চেয়েছিল দেখেশুনে বাছাই করে, পরীক্ষা করে নেওয়ার জন্য।’

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কেনার জন্য এ সপ্তাহে ৬০০ কোটি টাকা অগ্রিম হিসেবে ব্যাংকে জমা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে তারা টাকা পেয়েছেন। তৃতীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশের জনতা এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ওই টাকা অগ্রিম হিসেবে গচ্ছিত রাখা হবে। বিনিময়ে সেরাম ইনস্টিটিউট ব্যাংক গ্যারান্টি দেবে। প্রথম চালানের টিকা বাংলাদেশে আসার পর সেরাম ইনস্টিটিউট ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে পারবে। টিকা সরবরাহ শুরু হলে বাকি টাকা দেওয়া হবে। যদি কোনো কারণে সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে পুরো টাকাই সরকার ফেরত নিয়ে আসতে পারবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, প্রতি ডোজ টিকার ক্রয়মূল্য চার ডলার। সব খরচ মিলিয়ে দাম পড়বে পাঁচ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় হিসাব করলে ৪২৫ টাকার মতো। করোনাভাইরাসের এই টিকা সরকার কিনে তা বিনামূল্যে বিতরণ করবে বলে আগেই জানানো হয়েছে।

ভ্যাকসিন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ডিএনসিসির সমন্বয় সভা : করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নগর ভবনে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মেয়র আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএনসিসি এলাকায় এই ভ্যাকসিনের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে আমাদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিএনসিসি এলাকায় ডিএনসিসি মেয়র কমিটির সভাপতি। এই কমিটি অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন, ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন, ভ্যাকসিন প্রদান কেন্দ্রসমূহের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে।’ সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক মো. বেলাল হোসেন, ঢাকার সিভিল সার্জন মঈনুল ইসলাম, ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এ কে এম মাসুদুজ্জামান প্রমুখ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর