শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সম্ভাবনা অনেক তবে উদ্যোগের প্রয়োজন

--- হুমায়ুন কবির

জিন্নাতুন নূর

সম্ভাবনা অনেক তবে উদ্যোগের প্রয়োজন

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণের ফলে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের মধ্যে অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নে উদ্যোগের প্রয়োজন আছে। গতকাল বাংলাদেশ

প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি। হুমায়ুন কবির বলেন, বাইডেন প্রশাসন এমন একটি সময় ক্ষমতা গ্রহণ করছেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ বিভাজিত, সংঘাতময়। করোনার কারণে মানুষ ব্যাপকভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বেকারত্বের কারণে অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো নয়। ফলে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে এসব অভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবিলা করতেই ব্যস্ত থাকতে হবে। এই অবস্থায় বাইরের পৃথিবীর দিকে তিনি ততটাই তাকাতে পারবেন যতটা তার নিজ দেশের অভ্যন্তরীণ কাজে তার প্রয়োজন হবে। সে জায়গায় আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ চাই তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। আর এই উদ্যোগগুলো যদি আমরা নিতে পারি তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান যে সহযোগিতার কাঠামো আছে সেই কাঠামোকে আমরা আরও বেশি শক্তিশালী করতে পারব এবং আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে যেভাবে সহযোগী হিসেবে চাই সেভাবেই তাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ তৈরি হতে পারে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই বাংলাদেশকে তার কূটনৈতিক উদ্যোগ তৈরি করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক গত সাত-আট বছর ধরে স্থিতিশীল আছে। এই দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে যে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি হয়েছে সেগুলো কিন্তু মোটামুটিভাবে চলমান এবং একে কার্যকরও বলা চলে। আমাদের যে জায়গাগুলোতে সহযোগিতার ক্ষেত্র আমরা চিহ্নিত করে কাজ করছি সেগুলোও ক্রমবর্ধিষ্ণু। যেমন- নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমাদের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য তাদের সমর্থন এবং সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড থেকে বাংলাদেশ যাতে নিরাপদ থাকতে পারে তার জন্য বিশেষভাবে সমর্থন পাচ্ছি। সামগ্রিকভাবে নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই জায়গাটি আগামী দিনে শক্তিশালী করা গেলে আরও ভালো হবে। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক বিষয়েও কাজ করার আছে। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে আমাদের এক নম্বর রপ্তানিকারক দেশ। সে হিসেবে সেখানে মোটামুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থার মধ্যে আমরা টিকে আছি এবং আমাদের রপ্তানির গতিও ঊর্ধ্বগতি। আমি মনে করি, এই জায়গাটি আরও কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশকে আরেকটু মনোযোগী হতে হবে। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী যারা আছে যেমন-ভিয়েতনাম তাদের প্রবৃদ্ধির হার আমাদের চেয়ে বেশি।

 এ জন্য এখানে আমাদের বেশি কাজ করার সুযোগ আছে। হুমায়ুন কবির বলেন, ২০১৩ সালে যখন থেকে আমাদের জিএসপি স্থগিত করা হয় তখন প্রথমদিকে আমরা জিএসপি কীভাবে পাওয়া যায় তা নিয়ে একটু সচেষ্ট ছিলাম। কিন্তু জিএসপি পাওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ১৬টি পয়েন্টের যে তালিকা দিয়েছিল তার কাজ আমরা সম্পূর্ণ করতে পারিনি বলে এই জায়গাটিতে আমরা সফল হতে পারিনি। গত আট বছরে গার্মেন্ট পণ্যের বাইরেও অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করেছি। সে হিসেবে অপ্রচলিত যেসব পণ্য আমরা উৎপাদন করছি অর্থাৎ যেগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার পেতে পারে সে যায়গায় এখন আমাদের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এই সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আমরা জিএসপি পুনরুদ্ধারের সুযোগ নিতে পারি। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্রাজিলের মতো দেশ জিএসপির আওতায় প্রায় আড়াই বিলিয়ন এবং ভারত প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। চেষ্টা করলে বাংলাদেশও জিএসপিরর আওতায় বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে পারবে। এ বিষয়ে এখনই উদ্যোগী হলে হয়তো আমাদের জন্য সুযোগ তৈরি হতে পারে। আবার এতদিন পর্যন্ত জলবায়ুর ইস্যুটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বাইডেন জলবায়ু ইস্যুতে বেশ মনোযোগী হয়েছেন এবং ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের মতো যে দেশগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সে দেশগুলোর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রটি এখন জোরদার হবে বলে মনে করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর