দুই ধাপের পৌরসভা ভোটে নৌকার বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখায় দুই প্রতিমন্ত্রী, ছয় এমপি ও তিন জেলার তিন শীর্ষ নেতাকে তলব করা হচ্ছে কেন্দ্রে। আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের তালিকা অনুযায়ী আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের ডেকে পাঠানো হবে। ‘অপরাধ’-এর মাত্রা বুঝে ভর্ৎসনা ও শোকজ করা হচ্ছে তাদের। শোকজের জবাবের পর তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আট বিভাগে আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা পৌর ভোটে কারা কারা বিরোধিতা করেন সে তালিকা তৈরি করেছেন। এতে কয়েকজন এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতাও রয়েছেন। আমরা তাদের প্রথমে কেন্দ্রে তলব করব। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ভোটে নৌকার বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন এমন কাউকেই ক্ষমা করা হবে না।’
দলীয় সূত্রমতে, গত দুই ধাপের পৌরসভা ভোটে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে মাশুল গুনতে হয়েছে নৌকার প্রার্থীদের। যেসব জায়গায় নৌকাডুবি হয়েছে তার পেছনে ইন্ধন জুগিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রী ও নেতারা। কেন্দ্র মনোনীত নৌকার প্রার্থী পছন্দ না
হওয়ায় বিদ্রোহীদের মদদদান এবং দল মনোনীত প্রার্থীদের পরাজয়ে সব ধরনের কলকাঠি নেড়েছেন তারা। আওয়ামী লীগের আট বিভাগীয় টিমের অনুসন্ধানে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
ওই সূত্র জানিয়েছেন, গত দুই ধাপের পৌর নির্বাচনে সরাসরি নৌকার বিরোধিতা করায় রাজশাহী বিভাগে একজন প্রতিমন্ত্রী, দুজন এমপি, সিলেট বিভাগে একজন প্রতিমন্ত্রী ও একজন এমপি, বরিশাল বিভাগে দুজন এমপি, ঢাকা বিভাগে একজন এমপি এবং চট্টগ্রাম বিভাগে একজন এমপিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। নৌকার বিরুদ্ধে তাদের কর্মকান্ডের সারমর্ম তুলে ধরে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে এ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা পেলেই এসব ‘নৌকাবিরোধী’ প্রভাবশালীকে কেন্দ্রে ডাকা হবে। একই সঙ্গে তাদের শোকজও করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নৌকাবিরোধী এমপি-মন্ত্রী ও কিছু নেতাকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা কেন নৌকার বিরোধিতা করলেন, সংগঠনের শৃঙ্খলা কেন ভঙ্গ করলেন সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন। নেত্রীর সিদ্ধান্ত পাওয়ামাত্রই তাদের কেন্দ্রে ডেকে ব্যাখ্যা চাওয়ার পাশাপাশি কাউকে কাউকে শোকজও করা হতে পারে।’ আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, দলের সকল পর্যায়ের নেতাকে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। প্রার্থী পছন্দ না হলেই বিদ্রোহী দাঁড় করিয়ে দেওয়া কিংবা বিরোধিতা করা অনেকের কাছে ‘ফ্যাশন’ হয়ে গেছে। অতীতে বিদ্রোহীদের মদদ দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও তা না করায় দিনে দিনে দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। সে কারণেই এখন থেকে কঠোর হচ্ছে দলের হাইকমান্ড। তারা আরও বলছেন, বিগত দিনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন এবার তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। দুজন বিদ্রোহীকে ভুলক্রমে প্রথমে মনোনয়ন দেওয়া হলেও পরদিনই প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়। এ ব্যাপারে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থানে। শুধু বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নয়, এবার বিদ্রোহীদের মদদদাতা এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধেও কঠোর হচ্ছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যারা নৌকা নিয়ে এমপি হয়েছেন, পরে মন্ত্রী হয়েছেন কিন্তু এখন পৌর নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা করছেন কিংবা করবেন তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। নেত্রীর নির্দেশে নৌকাবিরোধী এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতাদের চিহ্নিত করে রাখা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটাই দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ।