বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভ, রিমান্ডে সু চি দেখা গেল আঙিনায়

চীনা ভেটোতে আটকে গেল নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দা

প্রতিদিন ডেস্ক

ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভ, রিমান্ডে সু চি দেখা গেল আঙিনায়

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে দেশটির পুলিশ বেশ কয়েকটি অভিযোগে মামলা করেছে। এসব অভিযোগে তাকে দুই সপ্তাহের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর আগে সামরিক বাহিনী সমর্থিত পুলিশ গতকাল একটি আদালতে সু চির বিরুদ্ধে অবৈধ ওয়ারলেস রাখার অভিযোগ এনে ১৫ দিনের            জন্য আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এ আবেদন করে। আবেদনে বলা হয়েছে, সু চির বাড়ি তল্লাশি করে ছয়টি ওয়াকিটকি পাওয়া গেছে, যেগুলো অবৈধভাবে আমদানি করা এবং তা অবৈধভাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। এছাড়া তিনি আমদানি-রপ্তানি আইন লঙ্ঘন করেছেন। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি। অন্য খবরে বলা হয়েছে, গতকাল মিয়ানমারে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো বড় আকারের প্রতিবাদ হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষ হাঁড়িপাতিল বাজিয়ে রাস্তায় নেমে অবস্থান নেয়। তারা ‘অমঙ্গল দূর হ’ বলে স্লোগান  দেয়। মিয়ানমারের তরুণ ও শিক্ষার্থীরাও অসহযোগ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। ফেসবুক পেজে তাদের এই কর্মসূচিতে ১ লাখেরও বেশি লাইক পড়েছে। এছাড়া দেশটির অন্তত ২০টি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাকর্মীরা এদিন ধর্মঘটে অংশ নেন। তারা ‘আইন না মানা আন্দোলনেরও’ ডাক দিয়েছেন। চিকিৎসকদের ধর্মঘটের সময় সুরক্ষা পোশাক পরা কর্মীদের হাতে থাকা প্লাকার্ডে লেখা ছিল, ‘অবশ্যই স্বৈরাচারের পতন হবে’। সরকারি হাসপাতালগুলোয় কর্মরত চিকিৎসকরা সু চির মুক্তি দাবিতে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখবেন বলেও জানিয়েছেন। কিছু চিকিৎসাকর্মী নীরব প্রতিবাদ জানাতে বিশেষ প্রতীক ব্যবহার করেছেন। এছাড়া সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে সাগাইং অঞ্চলে মংগিওয়া হাসপাতালের অবেদনবিদ নায়িং হিতু অং পদত্যাগ করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এ ধরনের অভ্যুত্থান আর সহ্য করা যায় না। সেনাশাসকের অধীনে আমি কাজ করতে পারব না। তাই আমি পদত্যাগ করেছি। সেনাশাসক দেশের ও জনগণের কথা ভাবে না। পদত্যাগ করেই আমি তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছি।’ আরেক চিকিৎসক মিয়ো থেট অ বলেন, ‘আমরা  স্বৈরশাসক ও অনির্বাচিত সরকার মেনে নিতে পারি না। তারা যে কোনো সময় আমাদের আটক করতে পারে। আমরা সবাই হাসপাতালে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ বাড়ির আঙিনায় সু চি : সেনা অভ্যুত্থানের পর প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিকে দেখতে পেয়েছেন প্রতিবেশীরা। মঙ্গলবার সকালে বাড়ির সীমানা প্রাচীরের মধ্যে তাকে শনাক্ত করা  গেছে বলে জানিয়েছেন তার রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাসি লিগের (এনএলডি) প্রেস কর্মকর্তা কিয়াই টোয়ে। তিনি বলেন, তার প্রতিবেশী একজন জানিয়েছেন, সু চি ভালো আছেন জানাতে কিছু সময় তিনি কম্পাউন্ডে হাঁটাহাঁটি করেছেন। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনলডির এক আইনপ্রণেতা জানিয়েছেন, রাজধানী নেপিদোর সরকারি বাসভবনে তাকে গৃহবন্দী করা হয়েছে। একজন জ্যেষ্ঠ  নেতা জানিয়েছেন, সু চি রাজধানী নেপিদোতে গৃহবন্দী আছেন। তিনি ‘শারীরিকভাবে ভালো আছেন’। পার্টি অফিসে অভিযান : মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) পার্টির দফতরগুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি। ওই অভিযানগুলোর সময় জোর করে প্রবেশের ঘটনা ঘটেছে এবং নথি, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দা আটকাল চীন : মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতি দেওয়ার চেষ্টা ঠেকিয়ে দিয়েছে চীন। এ সংক্রান্ত বৈঠকের আগে জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিনা শানার, দেশটিতে  সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের তীব্র নিন্দা জানান। অভ্যুত্থানের পর নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগ পর্যন্ত চীন বলছিল, আন্তর্জাতিক চাপ কিংবা নিষেধাজ্ঞা মিয়ানমারের পরিস্থিতির কেবল অবনতিই ঘটাতে পারে। উল্লেখ্য, পশ্চিমা বেশির ভাগ দেশই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ জানিয়েছে। কেউ কেউ দেশটির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও হুমকিও দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ অসংখ্য দেশ মিয়ানমারে ক্ষমতার এ পটপরিবর্তনের নিন্দা জানিয়েছে। কয়েকশ এমপি খোলা আকাশের নিচে : মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটির কয়েকশ সংসদ সদস্যকে রাজধানীর খোলা আকাশের নিচে আটকে রাখা হয়েছে। ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রসির নেত্রী অং সান সুচিসহ দেশের প্রেসিডেন্ট ও বহু সরকারি কর্মকর্তাকে আটকের এক দিন পর সংসদ সদস্যদের আটক করে  খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়। এছাড়া গতকালও অন্তত আরও ৪০০ সংসদ সদস্যকে তাদের সরকারি বাসভবন কমপ্লেক্স থেকে আটক করা হয়। তাদের বাইরে যাওয়া-আসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, আটকে থাকা সংসদ সদস্যরা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন এবং তারা এই চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন যে, তাদের অন্য কোনো স্থানে নেওয়া হতে পারে। সর্বশেষ পরিস্থিতি : মিয়ানমারের সব ক্ষমতা এখন  সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের হাতে। বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্রসহ ১১ জন মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে বদলানো হয়েছে। মিয়ানমারে নতুন নির্বাচন কমিশন ও পুলিশপ্রধান নিয়োগ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। বিভিন্ন রাস্তায় রাইফেল কাঁধে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। ইয়াঙ্গুনের প্রধান বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, আগামী ১ জুন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক এ বিমানবন্দর বন্ধ থাকবে এবং সব ধরনের ফ্লাইট ওঠানামার অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। বড় শহরগুলোতে সব সময় সৈন্যরা টহল দিচ্ছে এবং রাস্তাঘাট নীরব হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে জারি রয়েছে রাতের কারফিউ। ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও চালু হয়েছে।

সর্বশেষ খবর