বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

কাদের গাফিলতিতে ব্যয় বাড়ে, তদন্তের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

কাদের গাফিলতিতে ব্যয় বাড়ে, তদন্তের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

যে কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে প্রকল্প পরিকল্পনায় গলদ থেকে যাচ্ছে বা যাদের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে, প্রধানমন্ত্রী তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় অংশ নেন। পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, একনেক সভায় সংশোধনের জন্য উপস্থাপিত ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির মেয়াদ তিন বছর এবং ব্যয় ২ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব আসায় প্রধানমন্ত্রী ওই নির্দেশনা দেন। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীতে অনুমোদন দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী সময় ও ব্যয় বাড়ার সঙ্গে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে বলেন। ৩ হাজার ৯২৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকার প্রকল্পটিতে আরও ২ হাজার ৫৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা খরচ বাড়িয়ে ৬ হাজার ৪৫৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুনে যেখানে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা এখন ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। জানা গেছে, প্রকল্পের ডিজাইন ত্রুটির কারণেই ৬৫ শতাংশ খরচ বেড়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছেন, এ প্রকল্পের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দিলেও এটি মূলত তিনি ওভারঅল সব প্রকল্পের ক্ষেত্রে বলেছেন। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্প গ্রহণের পর দেখা যায় দুই-একটি আইটেম বেড়ে যায়। আবার মূল্য বেড়ে যায়। এতে প্রশ্ন তৈরি হয় যে প্রকল্প প্রণয়নের সময় কি তাহলে সঠিকভাবে হয়নি? প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে করা হয়নি? দেখা গেছে দাম বেড়েছে, অনেক আইটেম নতুন যুক্ত হয়েছে। যেটা মূল প্রকল্পের ডিজাইনে ছিল না। তাহলে প্রশ্ন হলো, যারা ডিজাইন করেছে সেখানেই সমস্যা হয়েছে।’

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘কাদের গাফিলতির কারণে প্রকল্পের ডিজাইন সঠিক হলো না, সময় ও অর্থ দুটোই অপচয় হলো, প্রধানমন্ত্রী ওইসব ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে বলেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ বিধান যেটা আছে তা নিতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে না হয় সেটা দেখতে বলেছেন। আমাদের অধিকতর সতর্ক হতে বলেছেন।’ এ ধরনের অসম্পূর্ণ প্রকল্প গ্রহণে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায় রয়েছে স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, ‘কাদের দায়ে এই অবস্থা হয়েছে, কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।’ তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ব্রিজ নির্মাণে সাইট সিলেকশনে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছেন। অহেতুক বা কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য করা যাবে না। জনগণের প্রয়োজনে ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। কোনো চলমান নদীর প্রবাহ যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেটা দেখতে হবে। অধিক সংখ্যক ঠিকাদার যাতে অংশ গ্রহণের সুযোগ পায়, প্রধানমন্ত্রী তা দেখতে বলেছেন উল্লেখ করে এম এ মান্নান বলেন, ‘ভালো ঠিকাদার ভালো কাজ করে। তাদের পুঁজি ও দক্ষতা রয়েছে। কিন্তু এর বাইরে নতুন যারা আসতে চায়, তাদেরও সুযোগ দিতে হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী আইনের মধ্যে থেকে কোনো কাজে অধিক সংখ্যক ঠিকাদার যাতে অংশ গ্রহণের সুযোগ পায় তা দেখতে বলেছেন।’ পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান করতে বলেছেন। কোন নদীতে কোন জায়গায় ব্রিজ হবে তার একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে রাখতে বলেছেন। অন দ্য স্পট সিদ্ধান্ত না নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

১১ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার ৮ প্রকল্প অনুমোদন : একনেক সভায় প্রায় ১১ হাজার ৩২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা খরচে আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সরকার দেবে ৫ হাজার ১৪০ কোটি ৩৯ লাখ, বিদেশি ঋণ ৬ হাজার ১৬৫ কোটি ৮২ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৮ কোটি ১২ লাখ টাকা। একনেক সভা শেষে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

পরিকল্পনামন্ত্রীর তথ্যমতে, একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে দুটি সংশোধিত এবং ছয়টি নতুন। তার মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ৫ হাজার ২৪৮ কোটি ৬ লাখ টাকা।

সংশোধনীতে প্রকল্পটির খরচ ২ হাজার ৯০৩ কোটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮ হাজার ১৫১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘টাঙ্গাইল জেলার ১০টি পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে খরচ হবে ২৭২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ‘যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১০৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা খরচে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে খরচ করা হবে ৪২৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ‘ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকো-সিস্টেম উন্নয়ন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে খরচ করা হবে ৩৫৩ কোটি ৬ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ৪ হাজার ৩৪৭ কোটি ২১ লাখ টাকা খরচে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন’ প্রকল্পটি ৩৮৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা খরচে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

সর্বশেষ খবর