শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ট্রাম্পের অভিশংসন বিচার শুরু আজ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্পের অভিশংসন বিচার শুরু আজ

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসন করতে সিনেটের বিচার প্রক্রিয়া আজ থেকে শুরু হচ্ছে। দ্রুততার সঙ্গেই এ প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছে উভয় পক্ষ। বর্তমানে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দল ডেমোক্র্যাটরা চাইছেন মার্কিন ক্যাপিটল ভবনে সমর্থকদের হামলার জন্য ট্রাম্পকে বিচারের মুখোমুখি করতে, আর রিপাবলিকানরা চাইছেন যত দ্রুত সম্ভব এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে। ট্রাম্প জঙ্গিদের লেলিয়ে দিয়ে গত ৬ জানুয়ারি যে ভবনে সন্ত্রাস উসকে দিয়েছিলেন, যাদেরকে হত্যা-লাঞ্ছিত করার জঘন্য অপচেষ্টা চালিয়েছেন- সেই ক্যাপিটল ভবনেই ট্রাম্পের বিচার শুরু করবেন কংগ্রেসের সদস্যরা। আর এ বিচারে ৯৯ সদস্যের জুরিরা থাকবেন দুই পার্টির ১০০ সিনেটর। ইমপিচমেন্ট-ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করবেন ৯ কংগ্রেসম্যান। বিচারকের আসনে বসবেন ৮০ বছর বয়েসী সিনেটর প্যাট্রিক লিহাই। তবে আইনের ফাঁক গলিয়ে ট্রাম্প কাঠগড়ায় দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন। তার পক্ষে লড়বেন ভাড়াটে আইনজীবীরা। জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সমর্থনে হামলার প্রাক্কালে ট্রাম্পের সমাবেশে ভাষণ এবং হামলার সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জঙ্গিদের মন্তব্য/বক্তব্যকে বিচারের সময় উপস্থাপন করা হবে। রিপাবলিকান সিনেটররা দলীয় কারণে প্রকাশ্যে সাক্ষী দিতে সম্মত না হলেও এসব ফুটেজকে কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারবেন না বলে সবার ধারণা। ওই নৃশংসতার ভিকটিম ক্যাপিটল হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সাক্ষী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন। তাই নৈতিক দৃষ্টিতে ট্রাম্প জনসমক্ষে ‘কালপ্রিট’ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারেন।

এ ট্রায়ালে প্রতিনিধি পরিষদের প্রধান ইমপিচমেন্ট ম্যানেজার কংগ্রেসম্যান জেমি রাস্কিন (মেরিল্যান্ড) ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের আইনজীবীদের কাছে নোটিস পাঠিয়েছেন বিচারের সময় ট্রাম্পকে উপস্থিত থাকার জন্য। ফ্লোরে হাজির হয়ে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ট্রাম্পকে আত্মপক্ষ সমর্থনের আহ্বান জানানো হয়েছে ওই নোটিসে। একই সঙ্গে উত্থাপিত অভিযোগের আলোকে নিজেদের যুক্তিতর্ক লিখিত আকারে আগেই সাবমিট করতে অনুরোধও করা হয়েছে। অথবা বিচারকালে সরাসরি তা উপস্থাপনের সুযোগ থাকবে বলে নোটিসে বলা হয়েছে। ট্রাম্পকে শাস্তি প্রদানে প্রয়োজন ৬৭ ভোট। এর ৪৮ জন ডেমোক্র্যাট এবং দুজন স্বতন্ত্র। অবশিষ্ট ১৭ ভোট লাগবে রিপাবলিকানকাদের। তাহলে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (সুপার মেজরিটি) হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, প্রতিনিধি পরিষদের ইমপিচের রেজ্যুলেশন পাসের সময় রিপাবলিকান পার্টির মাত্র ১০ কংগ্রেসম্যান ডেমোক্র্যাটদের পাশে ছিলেন। অপরদিকে, ২৭ জানুয়ারি ইউএস সিনেটে এই ট্রায়াল সংবিধান সম্মত কিনা তা যাচাইয়ের ভোটে ডেমোক্র্যাটদের পাশে ছিলেন রিপাবলিকান পার্টির মাত্র পাঁচ সিনেটর। ট্রাম্পের আইনজীবীরা এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন আর প্রেসিডেন্ট নন, তাই তার বিরুদ্ধে ইমপিচের ট্রায়াল হতে পারে না। তিনি হচ্ছেন সাধারণ একজন নাগরিক। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালেও ট্রাম্পকে ইমপিচের প্রথম সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্রতিনিধি পরিষদে। কিন্তু সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় ট্রাম্পকে করুণা করেছিলেন। এবার ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও তা এতটাই ক্ষীণ যে, প্রয়োজনীয় ভোট পেতে ১৭ রিপাবলিকানের সমর্থন লাগবে। ৬ জানুয়ারির জঙ্গি হামলার ভিকটিম রিপাবলিকানরাও ছিলেন। রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ফাঁসিতে ঝুলানোর স্লোগান দিয়েছে ট্রাম্পের সমর্থকরা। সে আলোকে রিপাবলিকানরা বিবেকের তাড়নায় হলেও ট্রাম্পকে সমুচিত শাস্তি দিতে ডেমোক্র্যাটদের পাশে দাঁড়াতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। অন্যথায় সামনের বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটের ময়দানে বিষয়টি মাথা চাড়া দিলে রিপাবলিকানদেরই বিপর্যয় ঘটবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মন্তব্য করেছেন।

সর্বশেষ খবর