মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের ভাগ্য নির্ধারণী বৈঠক আজ

বাজার চালু করতে কর্মী স্বার্থের বাইরে কিছুই ভাবছে না বাংলাদেশ

জুলকার নাইন

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের ভাগ্য নির্ধারণী বৈঠক আজ

বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার বাজার খুলবে কি না তা নির্ধারণে আজ বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া। কর্মী নিয়োগের পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য চারটি এজেন্ডা নিয়ে হবে এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ বা যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠক। বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য আবার চালুর যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সেক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আজকের এই বৈঠক।

সংশ্লিষ্ট সরকারি ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, যে কোনো মূল্যে শ্রমবাজার চালু করাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে যে পদ্ধতিতে কর্মী নেওয়ার আগ্রহ দেখানো হবে তাতেই সম্মতি  দেবে বাংলাদেশ। কর্মীস্বার্থের বাইরে অন্য কোনো         ভাবনাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। কারণ বাংলাদেশের যে কোনো দ্বিমতে যদি বাজার বন্ধ থাকার বিষয়টি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে দেশেরই ক্ষতি। তারা বলছেন, এমনিতেই করোনা মহামারীর মধ্যে বিদেশে বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি প্রায় থমকে আছে। এমন অবস্থায় মালয়েশিয়া কর্মী নিতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার যে আগ্রহ দেখাচ্ছে তা ইতিবাচক। এ প্রক্রিয়া ফলপ্রসূ হলে ভিন্ন কোনো চিন্তা ছাড়াই জনশক্তি রপ্তানি খাতে চলমান সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আজ বাংলাদেশ সময় বিকেলে অনলাইনে এ বৈঠক শুরু হবে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী সভায় সূচনা বক্তব্য রাখবেন। পরে জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ে গঠিত যৌথ কারিগরি কমিটির সদস্যের মধ্যে আলোচনা হবে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি পাঠানো এক ই-মেইলে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় ভার্চুয়াল সভা করার ব্যাপারে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয়। সেদিন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ মুখ্য সহকারী সচিব সালিনা মোহাম্মদ সালি লুডিন ই-মেইলে সভার এজেন্ডাগুলোও পাঠান। সেখানে চারটি এজেন্ডা নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে কতসংখ্যক এজেন্সি কর্মী পাঠাবে তা নির্ধারণ, কর্মী নিয়োগের অনলাইন পদ্ধতি, বিদ্যমান সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ শেষে নতুন চুক্তি এবং নতুন সমঝোতা স্মারক সইয়ের তারিখ। জানা যায়, কর্মীদের ক্রমাগত প্রতারিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো কর্মী নেওয়া বন্ধ হয়। এরপর নানান দেরদরবার করে ২০১২ সালে জিটুজি পদ্ধতিতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ধীরগতির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে যুক্ত করে জিটুজি প্লাস পদ্ধতি শুরু করে মালয়েশিয়া। প্রায় ২ লাখ কর্মী মালয়েশিয়া গেলেও সেখানে গিয়ে প্রতারণার অভিযোগ আসেনি। তারপরও জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে অর্থ আত্মসাতের কথা বলা হলে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়ে তদন্ত করে মালয়েশিয়া। তদন্তে মালয়েশিয়ার কমিটি অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে বাজার পুনরায় চালুর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখায়। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি জিটুজি প্লাস পদ্ধতির মেয়াদ শেষ হতে যাওয়ায় নতুন করে চুক্তির বিষয়ে আগ্রহ দেখায় মালয়েশিয়া। সর্বশেষ গত বছরের ১৫ অক্টোবর মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান এর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদের বৈঠকে মালয়েশিয়ার এই আগ্রহের কথা উঠে আসে। সিদ্ধান্ত হয়, সুষ্ঠু শ্রম অভিবাসনের স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্টের তালিকা মালয়েশিয়ায় পাঠানো হবে, সেই তালিকা থেকে মালয়েশিয়া উপযুক্ত সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্ট নির্বাচন করবে। রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়ায় ডাটাবেজ থেকে কর্মী সংগ্রহ, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ন্যায্য সার্ভিস মূল্যসহ পুরো প্রক্রিয়া সমন্বিত অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে মনিটরিং করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেদিনই চুক্তির নতুন তারিখ নির্ধারণসহ নতুন চুক্তির কর্মপদ্ধতি ও রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়া নির্ধারণে যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর এক দফায় পিছিয়ে আজ হচ্ছে সেই বৈঠক।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর