শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে করোনা হাসপাতাল

৮৬ ভাগ শয্যা খালি, ছয় মাসের ব্যবধানে রোগী কমেছে ৩১৬৭ জন

শামীম আহমেদ

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হার কমে যাওয়ায় দৈনিক শনাক্তের চেয়ে সুস্থ হচ্ছেন বেশি মানুষ। বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে ফিরছেন স্বাভাবিক জীবনে। ফলে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে দেশের কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর শয্যা। গতকাল ১০ হাজার ৯০৫টি আইসিইউ ও সাধারণ শয্যার মধ্যে ৯ হাজার ৪৭৮টি (৮৬ দশমিক ২৮ শতাংশ) শয্যাতেই কোনো রোগী ছিল না। সারা দেশে হাসপাতালে ভর্তি ছিল মাত্র ১ হাজার ৪৯৬ জন করোনা রোগী। শংকটাপন্ন রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৫৮২টি আইসিইউর মধ্যে ৪৩২টিই ফাঁকা ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে হাসপাতালে রোগী ভর্তি কমতে থাকে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সংক্রমণ ও হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ফের বাড়ে। নতুন বছরে এসে সংক্রমণ দ্রুত কমে, বাড়ে সুস্থতা। ফলে দ্রুত ফাঁকা হতে থাকে করোনা হাসপাতালের শয্যা। ছয় মাস আগে গত বছরের ১৮ আগস্ট সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৪ হাজার ৬৬৩ জন করোনা রোগী। এর মধ্যে আইসিইউতে ছিলেন ৩৩৩ জন সংকটাপন্ন রোগী। এক মাস পর ১৮ সেপ্টেম্বর  হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৮৪ জনে। ১৮ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি ছিল ২ হাজার ৬৮১ জন। ১৮ নভেম্বর আবার হাসপাতালে রোগী বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৯৭০ জনে, ১৮ ডিসেম্বর ছিল ৩ হাজার ৪৬ জন। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ফের হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ১৭৫ জনে। গতকাল হাসপাতালে ভর্তি ছিল মাত্র ১ হাজার ৪৯৬ জন করোনা রোগী। এর মধ্যে আইসিইউতে ছিলেন ১৫০ জন। এদিকে নমুনা পরীক্ষায় গত ৩১ দিন টানা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। ৪ শতাংশের নিচে রয়েছে ২৪ দিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, ৫ শতাংশের নিচে শনাক্তের হার চার সপ্তাহ বজায় থাকলে তাকে নিরাপদ সংক্রমণ বলা যায়। তখন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা কমতে থাকে। বাংলাদেশেও কমতে শুরু করেছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। সুস্থ ও মৃত রোগী বাদ দিলে গতকাল দেশে সক্রিয় করোনা রোগী ছিল ৪৪ হাজার ৭ জন। গত পাঁচ দিনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতিদিনই নতুন রোগী শনাক্তের চেয়ে সুস্থ হয়েছেন বেশি মানুষ। গত পাঁচ দিনে দেশে মোট ২ হাজার ২ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিপরীতে সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ১৬৫ জন। অর্থাৎ, পাঁচ দিনেই শনাক্তের চেয়ে ১ হাজার ১৬৩ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। এতে মোট শনাক্ত হওয়া সক্রিয় রোগী কমে গেছে। আর অধিকাংশ রোগী বাড়িতে অবস্থান করে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা নেওয়ায় ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে হাসপাতালগুলোর শয্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় সরকারের তিনটি হটলাইন নম্বরে ফোন করে কভিড-১৯-এর সেবা নিয়েছেন ৯ হাজার ৪৫৮ জন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৬০৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৯১ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬৭৮ জন। এ নিয়ে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৪২ হাজার ২৬৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ হাজার ৩২৯ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৩২ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর