শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

এমপি পদ চলে গেল পাপুলের

ঈদের আগেই উপনির্বাচন, মার্চে তফসিল ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এমপি পদ চলে গেল পাপুলের

এমপি পদ চলে গেল কাজী মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের। কুয়েতের আদালতে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দন্ডিত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করেছে সংসদ সচিবালয়। রায় ঘোষণার দিন থেকে তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করে গতকাল গেজেট জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান। গেজেটে বলা হয়, ‘কুয়েতের ফৌজদারি আদালতে (২৮ জানুয়ারি) ঘোষিত রায়ে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-২ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য নন। সে কারণে সংবিধানের ৬৭ (১) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রায় ঘোষণার তারিখ ২৮ জানুয়ারি থেকে তার আসন (২৭৫ লক্ষ্মীপুর-২) শূন্য হয়েছে।’

এদিকে ঈদের আগেই এপ্রিলে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে উপনির্বাচন করতে চায় নির্বাচন কমিশন। এ জন্য ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর এ আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে কমিশন। ভোট হতে পারে ঈদের আগেই। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদের আগে ১১ এপ্রিল ৯ পৌরসভায় এবং ৩২৩ ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা। একই দিনে এ উপনির্বাচনের ভোট হতে পারে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার গতকাল সন্ধ্যায় বলেছেন, ‘আসন শূন্য ঘোষণাসংক্রান্ত গেজেটের কপি আমরা হাতে পেয়েছি। পরবর্তী করণীয় বিষয়ে      সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে।’ আর সাংবিধানিকভাবে পাপুলের আসন শূন্য ঘোষণার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সেখানে নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম জানান। তিনি বলেন, ‘সংসদ সচিবালয়ের চিঠি কমিশন সভায় উপস্থাপনের পর সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করব। নির্বাচন করতে ৪০-৪৫ দিন সময় হাতে লাগবে আমাদের। ২ মার্চ হালনাগাদের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এর পরই তফসিল ঘোষণা করা হবে।’ অর্থ ও মানব পাচার এবং ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গত বছর জুনে কুয়েতে গ্রেফতার হন পাপুল। ব্যবসার সূত্রে সেখানে তার বসবাসের অনুমতি ছিল। ওই মামলার বিচার শেষে ২৮ জানুয়ারি তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয় কুয়েতের একটি আদালত। সেদিন থেকেই তার সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো আইনপ্রণেতার এভাবে বিদেশে দন্ডিত হওয়ার এবং সাজার কারণে পদ বাতিলেরও এটাই প্রথম ঘটনা।

লক্ষ্মীপুরে ক্ষোভ, দেশেও শাস্তি চায় জনগণ : লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, পাপুলকান্ডে তার নির্বাচনী এলাকার মানুষ ও জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এবার দেশের প্রচলিত আইনে তার ও পরিবারসহ অভিযুক্তদের বিচারের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। এদিকে পাপুলের এমপি পদ বাতিলের খবর জানাজানির পর জেলার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী দেশেও তার ও পরিবারের অন্য অভিযুক্তদের বিচারের দাবি জানান। জেলা আওয়ামী লীগের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাসেল মাহমুদ মান্না বলেন, এমপির মানব পাচারের বিষয়টি আমাদের লজ্জিত করেছে। দেশীয় আইনেও তার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন বলেন, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ এমপি হলে হয়তো এমনটি হতো না। সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ জামান রিপন বলেন, ‘ভবিষ্যতে এমন অপরাধী কেউ যেন আর এমপি না হতে পারেন সে জন্য রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

সাবেক ছাত্রনেতা নজরুল ইসলাম ভুলু বলেন, ‘দীর্ঘ সময় এমপি পাপুল তার নিজ নির্বাচনী এলাকায় না থাকার কারণে শেখ হাসিনার অব্যাহত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার মানুষ। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ এমপি-সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে সেবাবঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হবে।’ রায়পুরের বাসিন্দা ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শামছুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, ‘পাপুল আমাদের দলের কেউ ছিল না। জোটের প্রার্থীর পক্ষে যখন আমরা মাঠে কাজ করছি ঠিক তখনই কতিপয় নেতার চক্রান্তের কারণে জোটের প্রার্থীর আত্মগোপনের পর আমরা বাধ্য হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী অচেনা পাপুলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাকে বিজয়ী করি। এখন তার অপকর্মের দেশীয় আইনে বিচারের দাবি করছি। এ ছাড়া শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ আসনে অচিরেই পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।’ এদিকে রায়পুরের সাধারণ মানুষ বলছেন, নির্বাচনের আগে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে ব্যক্তিগতভাবে শত কোটি টাকার উন্নয়নের ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পাপুল। কিন্তু নির্বাচিত হয়ে তার দেখা পায়নি জনগণ।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর