শিরোনাম
শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে : শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে আমরা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

গতকাল বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মুজিব চিরন্তন’- এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে গত ১৭ মার্চ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার গতকাল (২৬ মার্চ) ছিল শেষ দিন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই শুভ মুহূর্তে আসুন প্রতিজ্ঞা করি সব ভেদাভেদ ভুলে আমরা আমাদের জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করব। তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশকে আদর্শচ্যুত করা হয়েছিল। নীতি-আদর্শ না থাকলে কোনো জাতি কিছু অর্জন করতে পারে না। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী ছিলেন। বিশ্বের             নিপীড়িত মানুষের রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি তিনি স্বপ্ন দেখতেন অর্থনৈতিক মুক্তির। এ জন্য পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা এবং সমতার ভিত্তিতে সহযোগিতার ওপর তিনি জোর দিতেন। ভারত এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ দেশ। একটি স্থিতিশীল এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে হলে ভারতকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা যদি পরস্পরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি, তাহলে আমাদের জনগণের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী। ভারতের সঙ্গে বর্তমানে আমাদের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদিজির ‘প্রতিবেশী সর্বাগ্রে’ নীতির প্রশংসা করি। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের টিকা পাঠানোর মাধ্যমে মোদিজির এই নীতিরই প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে ব্যবসায়-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত আমাদের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। এই রাজ্যগুলো এখন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে। সেই সঙ্গে মোংলা বন্দরও ব্যবহার করতে পারবে। তিনি বলেন, জাতির পিতার পররাষ্ট্রনীতি ছিল ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব- কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে আমরা এগিয়ে যাব। শেখ হাসিনা বলেন, ভারত আমাদের সুখে-দুঃখের সঙ্গী। ভারতের সব রাজনৈতিক দল ও জনগণ বাংলাদেশের প্রশ্নে এক হয়। এ জন্য আমি ভারতের জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত শুধু আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্রই নয়, ভারতের সঙ্গে আমাদের রয়েছে ঐতিহাসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্যগত এবং ভৌগোলিক সেতুবন্ধ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের সঙ্গে ভারতের সরকার এবং সে দেশের জনগণ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের অত্যাচারের মুখে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রায় ১ কোটি শরণার্থীকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল। খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসা দিয়েছিল। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, গোলাবারুদ দিয়ে সাহায্য করেছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এ যুদ্ধে ভারতের এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সৈন্য শহীদ হয়েছেন, যারা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন। আমি তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণের যে আত্মত্যাগ, সাহায্য-সহযোগিতা তা কখনো ভুলবার নয়। আমরা কৃতজ্ঞ চিত্তে সে অবদানের কথা স্মরণ করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভারতের জনগণ এবং সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।  

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ৫০ বছর আগে এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি জান্তাদের হাতে বন্দী হওয়ার আগমুহূর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর আগে ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সব নির্দেশনা দেন। জাতির পিতা যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, বাঙালি জাতি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। তিনি বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের মধ্যে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে আমাদের আয়োজনকে মহিমান্বিত করেছেন। বাংলাদেশের সরকার, জনগণ, আমার ছোটবোন শেখ রেহানা এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে এবং সে দেশের জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার পিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমি ও ছোটবোন রেহানা, দুই সন্তান সায়মা ও সজীব ওয়াজেদকে নিয়ে জার্মানিতে থাকি। বিদেশ থাকায় আমরা বেঁচে যাই। জাতির পিতাকে হত্যার পর মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়াউর রহমান একাধারে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ও অন্যদিকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করে। আমাদের দেশে ফিরতে বাধা দেয়। রেহানার পাসপোর্টটা দেওয়া হয়নি। আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ি। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আমাদের খবর পাঠান এবং ভারতে আশ্রয় দেন। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ আমাকে সভানেত্রী নির্বাচিত করে। একরকম জোর করেই আমি দেশে ফিরে আসি। শুরু করি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। প্রথমবারই উদ্যোগ গ্রহণ করি, মুক্তিযুদ্ধের সময় বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ও সরকারকে সম্মাননা দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাব। কিন্তু পারিনি। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে স্বাধীনতা সম্মাননা, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জি এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়িকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননাসহ ২২৫ জন ভারতীয় নাগরিককে আমরা মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায় ভূষিত করেছি। তিনি বলেন, আমি ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এই শুভ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মর্যাদাশীল ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০২০’- এ ভূষিত করার জন্য। আমি মনে করি তাঁকে এই পুরস্কারে ভূষিত করার মাধ্যমে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একজন যোগ্য নেতা এবং গান্ধীজির প্রকৃত অনুসারীকেই সম্মানিত করল। একই সঙ্গে ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি, তাঁর সরকার এবং ভারতের জনগণের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দীর্ঘজীবী হোক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গত ১২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে উভয় দেশ বেশকিছু যৌথ কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া এ উপমহাদেশের দুই বরণীয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে ভারত সরকার বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিয়েছে। আমি এ জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, গত বছর ১৭ মার্চ থেকে এ বছর ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। কিন্তু করোনাভাইরাস দেখা দেওয়ায় জনগণের কথা চিন্তা করে তা সীমিত পরিসরে করি। ভার্চুয়ালি কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সে কারণে আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুজিববর্ষ পালন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ৩০-লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সালাম জানান। একই সঙ্গে ১৫ আগস্ট ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে নিহত তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর