সোমবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

মোর্শেদের স্ত্রীর শেষ আকুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামে ব্যাংক কর্মকর্তা মোর্শেদ চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়েরের ১০ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। গ্রেফতার হয়নি কোনো আসামি। পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ দেওয়ার পরও কী কারণে পুলিশ আসামি গ্রেফতারে গড়িমসি করছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ মোর্শেদ চৌধুরীর স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী। এমনকি মামলার ১০ দিন পার হলেও কোনো আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় উল্টো নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই নারী।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, পুলিশ কমিশনার স্যার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন যে, ‘অবশ্যই এই ঘটনার নিরপেক্ষ বিচার হবে। পুলিশ বিষয়টি দেখছে।’ কিন্তু, স্যারের কাছে আমার প্রশ্ন- নিরপেক্ষ বিচার করতে আগে তো আসামিদের পেতে হবে। আমার কাছে যতটুকু তথ্য-প্রমাণ ছিল, আসামিদের ধরতে ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে সেটা যথেষ্ট বলে আমি মনে করি। আগে তো ধরতে হবে। সেই ধরার প্রক্রিয়াটাই মনে হচ্ছে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। কারণ ওরা অনেক প্রভাবশালী। হুইপপুত্র শারুনের যোগসাজশে আসামিরা আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মামলা করে উল্টো এখন আমি বাচ্চা ও পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছি। প্রতিনিয়ত শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। ইশরাত জাহান বলেন, স্বামী মারা গেছেন। আমাকে এখন জীবনযুদ্ধে নামতে হবে। আমাকে শক্ত হতে হবে। কিন্তু, আমার বাচ্চা ২টার যে ক্ষতি হয়ে গেল তা তো কেউ কোনো দিন পূরণ করতে পারবে না। আমার বাবা-মা আমাদের নিয়ে উদ্বিঘ্ন। তারা বলছেন, কেন আমি এই বিচার নিয়ে লড়তে গিয়ে ঝুঁকি বাড়াচ্ছি? যে যাওয়ার সে তো চলে গেছে। আমার মেয়ে আমাকে বলেছে, ‘‘পাপাকে যারা এভাবে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে তাদের তুমি কোনোভাবেই ছাড় দিবা না।’’ ইশরাত জাহানের ধারণা তার স্বামীর আত্মহত্যার পেছনে হুইপপুত্রের হাত রয়েছে। তিনি বলেন, এই আরশেদ বাচ্চু বলেন, রাসেল বলেন, হুইপপুত্র শারুন বলেন, উনারা কেন আসামিদের হয়ে ফোন কলগুলো করল। কেন আমার বাসায় আসল? কেন আর্থিক লেনদেনের প্রত্যেকটি মিটিংয়ে তারা উপস্থিত ছিল? এরা মামলার আসামি পারভেজ ইকবাল, জাভেদ ইকবালেরই লেলিয়ে দেওয়া মানুষ। এখন আসামি উধাও হয়ে গেলে দায়ভারটা কে নেবে? আমার আর আমার বাচ্চার নিরাপত্তা কে দেবে? ওরা উধাও হয়ে গিয়ে পরবর্তীতে যদি তারা আমার পরিবারের ক্ষতি করে, সেই দায় কার? আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। উনিই ন্যায় বিচার করবেন। আমাকে সবাই বলছে, এ দেশে বিচার নাই। কিন্তু, আমার বাংলাদেশের আইনের ওপর আস্থা আছে। আস্থা রাখতে চাই। এখনো বিশ্বাস করি আমি ন্যায়বিচার পাব। জানা গেছে, ইশরাত চৌধুরীর মামলাটি সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সালাম কবির বলেন, সম্প্রতি মামলাটি আমাদের হাতে এসেছে। মামলাটি একটি আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা। মামলার বাদী, ভুক্তভোগী ও আসামি পরস্পর আত্মীয়। তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক লেনদেনের একটি বিষয় আছে। সব বিষয় খতিয়ে দেখছি। মামলার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আসামি ধরার চেষ্টা চালাচ্ছি। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন কথা ঠিক নয়। প্রসঙ্গত, গত ৭ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবাসিক এলাকায় নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক আবদুল মোরশেদ চৌধুরীর লাশ উদ্ধার করে পুুলিশ। নিহতের পরিবারের দাবি, টাকা উদ্ধারের নামে হুইপপুত্র নাজমুল হক চৌধুরী শারুন, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চুসহ তার রাজনৈতিক অনুসারীরা  মোর্শেদকে মানসিক ও রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। তারা  মোর্শেদের বাড়িতে হানা দেন। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন এ ব্যাংক কর্মকর্তা। এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল নিহতের স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যাতে আসামি করা হয় যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল, জাবেদ ইকবাল, পারভেজ ইকবাল এবং নাইম উদ্দিন সাকিবকে। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলার কোনো আসামি গ্রেফতার হননি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর