মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

লকডাউন আরও সাত দিন

সড়কে গাড়ির সঙ্গে বেড়েছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

লকডাউন আরও সাত দিন

চলমান লকডাউনের মেয়াদ একই শর্তে আরও এক সপ্তাহ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সোমবার সকাল ১১টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে আন্তমন্ত্রণালয় ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি লকডাউনের মেয়াদ আরও সাত দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। সায়েন্টিফিক্যালি তো ১৪ বা ১৫ দিন লকডাউন না হলে সংক্রমণের চেইনটা পুরোপুরি ভাঙা সম্ভব হয় না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত আগের শর্ত মেনে লকডাউন কন্টিনিউ করবে। বিধিনিষেধ আরও সাত দিন বাড়ছে। আরও সাত দিন লকডাউন মেয়াদ বৃদ্ধি হলেও বিধিনিষেধে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ২৮ এপ্রিলের পরও লকডাউনের পরিকল্পনা রয়েছে কিনা- জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, সংক্রমণ ম্যানেজ করাটা আমাদের উদ্দেশ্য, পরিস্থিতি কী হয় সেটা বিবেচনা করেই পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা মনে করছি আগামী ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনে সংক্রমণটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে চলছে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। এর মেয়াদ ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে রবিবার রাতে কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩১তম সভায় ‘কঠোর লকডাউন’ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈজ্ঞানিকভাবে দুই সপ্তাহের কম লকডাউনে কার্যকর ফল আশা করা যায় না। দেশের অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে শিল্প-কলকারখানা খোলা রাখার বিষয়টি কমিটি উপলব্ধি করে। তবে, বেসরকারি দফতর, ব্যাংক খোলা রাখা, ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল, ইফতার বাজারে অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ভিড় লকডাউনের সাফল্যকে অনিশ্চিত করে। লকডাউনের সময় স্বাস্থ্যসেবা, ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। খোলা রাখা যাবে এমন জরুরি সেবার তালিকা প্রকাশ করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে। অন্যথায় বিরূপ পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। চলমান লকডাউনে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের চলাচলে বাধা ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটনা ঘটেছে। কাঁচাবাজার আবারও উন্মুক্ত স্থানে বসানোর প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় কমিটি। এদিকে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে চলমান সর্বাত্মক লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশেই সড়কে বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। সেই সঙ্গে মানুষও রাস্তায় নামতে শুরু করেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন সড়কে সিএনজি, রিকশা, অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে দেদার। ফুটপাথেও বেড়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল। অলিগলির রাস্তাগুলোয় মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। গলিপথের দোকানগুলোও খুলতে শুরু করেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। গতকাল রাজধানীর পুরানা পল্টন, কাকরাইল, বিজয় নগর, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে ব্যাপক গাড়ি লক্ষ্য করা যায়। সড়কের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশি তল্লাশি চৌকির সামনে যানজটও লক্ষ্য করা গেছে। যানবাহন থামিয়ে ‘মুভমেন্ট পাস’ দেখতে চান পুলিশ সদস্যরা। যাদের পাস নেই তাদের জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। মাঝেমধ্যে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডায়ও জড়িয়ে পড়ছেন পথচারীরা। তবে সরকারি নির্দেশনা মেনে বন্ধ রয়েছে শপিংমল, মার্কেট, দোকানসহ সব বিপণিবিতান। কাঁচাবাজারে আগের মতোই মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। বিভিন্ন অলিগলির গেটও বন্ধ রাখা হয়েছে। মাস্ক পরলেও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না অনেকেই। রাজধানীর বিজয়নগর নাইটিঙ্গেল মোড়ে একটি তল্লাশি চৌকিতে দুটি রিকশা উল্টে রাখতে দেখা যায়। সেখানে পুলিশ সদস্য জানান, লকডাউনে রাস্তায় বের হওয়া নিষেধ। সে জন্য প্রতীকী শাস্তির এ ব্যবস্থা। উল্টে রাখা এক রিকশার চালক কালাম বলেন, ‘স্যার, রামপুরা থেকে এক আপা মতিঝিল যাবেন, তাকে নিয়ে এসেছি। তার যে পাস নেই আমি তো আর জানি না।’ শান্তিনগর বাজারের সামনে হ্যান্ডমাইকে ক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার করে দ্রুত বাসায় চলে যেতে বলা হচ্ছে। কয়েকজন রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রিকশার সংখ্যা বাড়লেও তাদের রোজগার বাড়েনি। শান্তিনগরে রিকশাচালক রফিক বলেন, ‘পেটের দায়ে সকাল ৭টায় রিকশা নিয়া নামছি। এখন বাজে ১০টা। দুইটা খ্যাপ পাইছি। দেখেন স্যার, অনেক রিকশা মোড়ে মোড়ে আছে, প্যাসেঞ্জার নাই।’ লকডাউনের এমন ঢিলেঢালা পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন নয়াপল্টনের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এ চাকুরে বলেন, যেভাবে রাস্তায় মানুষজনের উপস্থিতি বাড়ছে, রাস্তায় রিকশা-যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে, এটাকে কি লকডাউন বলা যায়? এরকম হলে সংক্রমণ কমবে কীভাবে? আপনি দেখেন, লকডাউনের প্রথম দিন যেমন ছিল ঢাকার দৃশ্য, আজকে সে রকম দৃশ্য নেই। এখন কড়াকড়ি নেই, ঢিলেঢালা অবস্থা। মানুষের মধ্যে অসচেতনতা জেঁকে বসে আছে। রাস্তা-ঘাটের চিত্র দেখে মনে হচ্ছে যে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে আমাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই।’ তবে লকডাউনের কারণে বিপাকে থাকার কথা জানিয়েছেন সেগুনবাগিচা এলাকার কাপড়ের দোকানি তাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কাঁচাবাজারের কাছে সব দোকানপাট সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়েছে। অথচ আমরা দোকান খুললেই পুলিশ এসে বন্ধ করতে বলে। ছোট পুঁজি নিয়ে কাপড়ের দোকান দিয়েছি। এখন কোনো ব্যবসা নেই, কী খাব, কীভাবে চলব?’ এ ছাড়া বিকালে রাজধানীতে ইফতার কিনতেও মানুষের আনাগোনা বাড়তে দেখা যায়। এমনকি মাগরিব ও এশা-তারাবির নামাজের পর চায়ের দোকানে ব্যাপক ভিড় জমায় সাধারণ মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এ চিত্র দেখা গেছে। সেখানে উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা পাঠিয়েছেন বিভিন্ন এলাকার লকডাউনের খবর।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ ঠেকাতে এলাকাভিত্তিক রেড জোন ও ইয়োলো জোন ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। গতকাল সকাল ১১টার দিকে নগরের জয়নগর আবাসিক এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল স্টাফ কোয়ার্টার এলাকাকে পুলিশ রেড জোন ঘোষণা করে ব্যানার টাঙিয়ে দেয়। এ দুটি এলাকায় পুরোপুরি লকডাউন কার্যকর করা হচ্ছে। তাছাড়া নগরে এলাকাভিত্তিক রেড ও ইয়োলো জোন ঘোষণা করে লকডাউন কার্যকর করতে মাঠে নামছে পুলিশ। 

রাজশাহী : রাজশাহীতে লকডাউনে গতকাল কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। যারা বাইরে বের হয়েছিলেন, তাদের মোড়ে মোড়ে তল্লাশির মুখে পড়তে হয়েছে। তবে আগের দিনের তুলনায় নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল বেশি ছিল। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিট্রেট আবু আসলাম জানান, সরকারি নির্দেশনার বাইরে যারা চলাচল করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে জরিমানা করে সতর্ক করা হয়েছে।

বরিশাল : লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে রাস্তাঘাটে যানবাহন এবং মানুষজন আরও বেড়েছে। খুলেছে অনেক দোকানপাঠ। তবে বিনা প্রয়োজনে রাস্তাঘাটে বের হওয়া জনসাধারণকে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। অপরদিকে লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন। সময় যত যাচ্ছে লকডাউন তত শিথিল হচ্ছে। নগরীর পোর্ট রোড মৎস্য আড়ত, বাজার রোডসহ নগরীর প্রতিটি বাজারে প্রচুর মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে প্রধান প্রধান সড়কের চেয়ে শাখা রোড এবং অলিগলিতে মানুষের চলাচল ছিল উল্লেখ করার মতো। এসব স্থানে স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষিত হতে দেখা গেছে। নগরীর রাস্তায় বেড়েছে রিকশাসহ ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল।

নেত্রকোনা : লকডাউনে বিনা কারণে রাস্তায় বের হওয়া মানুষদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাকবিতন্ডার চিত্র এখন চোখে পড়ে না। মোড়ে মোড়ে মানুষের ভিড় লক্ষণীয়। বিভিন্ন দোকান ঘিরে মানুষের জটলাও লক্ষণীয়। শহরের থানার মোড় থেকে তেরিবাজার পর্যন্ত রিকশা অটো চলাচলও বেপরোয়া। 

নাটোর : নাটোরে লকডাউনে পুলিশের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল সকাল থেকেই শহরে যান চলাচল লক্ষ্য করা গেলেও প্রশাসনের তৎপরতায় তা বন্ধ হয়ে গেছে। নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়াও অলিগলিতে ও প্রধান রাস্তার পাশে কিছু কিছু দোকানপাট খোলা দেখা গেছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর