বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ঢিলেঢালা লকডাউনে রাস্তায় মানুষের ঢল

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢিলেঢালা লকডাউনে রাস্তায় মানুষের ঢল

রাজধানীর রাস্তায় গতকাল গাড়ির দীর্ঘ সারি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে চলমান ‘লকডাউন’ ঢিলেঢালাভাবে চলছে। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মহানগর ও শহরে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও দেদার চলছে ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি, অটোরিকশা ও রিকশা। মানুষও রাস্তায় নেমে পড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ কোনো উপায় না পেয়ে পেটের তাগিদে কাজে বেরিয়ে পড়ছে। ছোট ছোট দোকানগুলোও খোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশের তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। অধিকাংশ চেকপোস্টে পুলিশের উপস্থিতি ছিল না। তবে কোথাও কোথাও ট্রাফিক পুলিশকে রুটিন দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এ সুযোগে বিভিন্ন গাড়ির আধিক্য ছিল নগরজুড়ে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট দেখা যায়।

শুধু মহানগর নয়, আন্তঃজেলা সড়কগুলোতে মানুষের চলাচল বেড়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন চেকপোস্টে থাকা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের শত শত মানুষ পাটুরিয়াঘাট এলাকায় উপস্থিত হয়। পাটুরিয়া তিন নম্বর ঘাট এলাকায় বেশ কিছু ছোট গাড়ি ও লাশবাহী গাড়িকে পারের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ বাসস্ট্যান্ডে শত শত মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত রিকশা ছিল চোখে পড়ার মতো। একই চিত্র দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, গুলশান, রামপুরা, বাড্ডা, নতুন বাজার, প্রগতি সরণি এলাকায়। প্রগতি সরণিতে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত সড়কে দীর্ঘ যানজট লক্ষ্য করা গেছে।

শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ী, ধোলাইপাড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপও দেখা গেছে। মানুষ সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশায় যাতায়াত করছেন। যাত্রাবাড়ীর মূল সড়কে যানজট দেখা গেছে। পুরো সড়কজুড়েই রিকশা আর সিএনজির আধিপত্য লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও প্রতিদিনই হাজারো মানুষ প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল বা ট্রাক কিংবা পিকআপে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন।

আজ থেকে নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানও খোলা :  আজ থেকে নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গ্রাহকদের জরুরি আর্থিক সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ। সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়,  ‘গ্রাহকদের হিসাবে মেয়াদপূর্তিতে স্থায়ী আমানত নগদায়ন, ঋণের কিস্তি জমাদান ইত্যাদি জরুরি আর্থিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২২ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বোচ্চ দুটি শাখা একটি ঢাকায়, অপরটি ঢাকার বাইরে ও প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সকাল ১০টা থেকে বিকাল ২টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।’ বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রয়োজনীয় জনবল বিন্যাস ও উপস্থিতির বিষয়টি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ বিবেচনায় সম্পন্ন করবে।’

আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

শেরপুর : দিন যতই যাচ্ছে শেরপুরে চলছে ঢিলেঢালা লকডাউন। মূল শহরের দোকানপাট কিছু বন্ধ থাকলেও উপশহর ও গ্রামগুলোতে চলছে বেচাকেনার ধুম। বাজারগুলোতে এখন উপচেপড়া ভিড়। জেলা ও উপজেলা শহরে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত, মামলা, জরিমানা চলছে। চলছে শহরের প্রবেশপথে পুলিশের কড়াকড়ি প্রহরা। তবুও নানা অজুহাতে মানুষজন শহরে ঢুকে পড়ছে। প্রধান সড়কসহ অলিগলি রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দখলে। দুপুরের আগে ও বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের সর্বত্রই ভিড় থাকে চোখে পড়ার মত। যে যার মতো করে নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। শেরপুরের বিভিন্ন এলাকা ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশের গাড়ি দেখলেই দোকানপাট বন্ধ ও ভিড় কিছুটা কমে যায়। চলে গেলে সেই আগের অবস্থা। এটাকে অনেকটা চোর পুলিশ খেলার মতো বিষয় বলছেন অনেকেই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : জেলা সদরে চলছে কঠোর লকডাউন। তবে জেলার প্রায় প্রতিটি মার্কেটের প্রধান গেট বন্ধ রেখে মফস্বল গেট খোলা রাখা হয়েছে। দোকানদাররা দোকানের শাটার নামিয়ে রেখে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। রাস্তায় স্বল্প পরিসরে রিকশা, অটোরিকশা, প্রাইভেট কারসহ ছোট যান চলাচল করতে দেখা গেছে। অন্যান্য দিনের মতোই শহরের প্রবেশপথে চেকপোস্ট ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট ছাড়াও রাস্তায় কড়াকড়ি ছিল লক্ষণীয়। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হচ্ছে গাড়িচালকদের। বাইরে বের হওয়ার উপযুক্ত কারণ দর্শাতে না পারলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবুও অনেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়াই নানা অজুহাতে বাইরে বের হচ্ছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় গতকাল দুপুরে বিধিনিষেধ অমান্য করে পৌর শহরে প্রবেশ করায় তিনটি বালুবাহী ট্রাক্টরকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পৌর শহরের বাইপাস এলাকায় তাদের এ অর্থদন্ড দেওয়া হয়।

খাগড়াছড়ি : জেলায় লকডাউন কার্যকর করতে প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিনা কারণে বাড়ি থেকে বের হয়ে ঘোরাফেরা করায় সাতজনের কাছ থেকে ৭০০ টাকা জারিমানা আদায় করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজা মতিন পরিচালিত মোবাইল কোর্ট এ জরিমানা আদায় করেন। তিনি জানান, শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ সব জায়গায় মোবাইল কোর্ট সক্রিয় রয়েছে। বিনা কারণে ঘরের বাইরে ঘোরাফেরার দায়ে সাতজনকে অর্থদন্ড প্রদান করা হয়। 

নাটোর : নাটোরের সিংড়ায় লকডাউন অমান্য করে দোকানপাট খোলা রাখায় ৯ দোকানিকে ১৮০০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল দুপরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এম এম সামিরুল ইসলামের ভ্রাম্যমাণ আদালত এ জরিমানা করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম সামিরুল ইসলাম বলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে দোকানপাট খোলা রাখায় জরিমানা করা হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সর্বশেষ খবর