শনিবার, ৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা
দূরপাল্লার বাস বন্ধ

তবু বাড়ি ফেরার হিড়িক দিনে চলবে না ফেরি

নিজস্ব প্রতিবেদক

তবু বাড়ি ফেরার হিড়িক দিনে চলবে না ফেরি

মানুষের চাপে ফেরিতে উঠতে পারেনি কোনো যানবাহন। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরিঘাট থেকে গতকাল তোলা ছবি - বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনা মহামারীর কারণে বিধিনিষেধের মধ্যেই ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোয় ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে, কেউ আবার একাধিক বাস বদলে রাজধানী ছাড়ছেন। পরিবার নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকে চড়েও ফিরতে দেখা গেছে অনেককে। রাজধানী থেকে বের হওয়ার ফেরিঘাটগুলোতে গতকাল ছিল উপচে পড়া ভিড়। বাড়ি ফেরার এ চিত্রে ছিল না কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, ঈদের এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও গতকাল সকাল থেকেই শিমুলিয়া ফেরিঘাটে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে। যাত্রীদের ভিড় সামলাতে না পেরে অনেক ফেরি কোনো বাহন না নিয়েই গন্তব্যে রওনা হয়। বেলা সোয়া ১১টার দিকে শিমুলিয়া থেকে রো-রো ফেরি এনায়েতপুরী শুধু যাত্রী নিয়েই শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে গিয়ে ভিড়ে। ফেরিঘাট সূত্রে জানা যায়, যাত্রীদের চাপের কারণে শিমুলিয়া থেকে ফেরিটিতে কোনো গাড়ি উঠতে পারেনি। প্রায় ১২০০ যাত্রী নিয়ে ফেরিটি যাত্রা করে। হাজার হাজার মানুষ ফেরিতে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েই পদ্মা পার হন। এ সময় অনেকের মুখেই ছিল না মাস্ক। আবার কারও মাস্ক থাকলেও নামানো ছিল থুতনিতে। ফেরিতে গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে পার হয়েছেন নদী। এদিকে যাত্রীদের চাপে গাড়ি তুলতে না পারায় শিমুলিয়া ফেরিঘাটে আটকা পড়ে সাত শতাধিক পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত গাড়ি। ফেরিঘাট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মায় লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় ফেরিতে চাপ বেড়েছে যাত্রীদের। অত্যধিক চাপে ফেরিগুলোতে পার করা যাচ্ছে না গাড়ি। নৌরুটে বর্তমানে ১৩টি ফেরি সচল রয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ জানান, আসন্ন ঈদ ও শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় যাত্রীদের চাপ বেড়েছে অনেক। যানবাহন ও যাত্রীদের নির্বিঘেœ পারাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। বরিশালের যাত্রী লাকী আক্তার বলেন, ঈদের আগ মুহূর্তে যাত্রীদের আরও ভিড় বেড়ে যায়। বাস চলে না। ভেঙে ভেঙে বাড়ি যেতে হবে। তাই কয়েক দিন আগেই বাড়ি যাচ্ছি।

এদিকে পদ্মা পাড়ি দিয়ে মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে পৌঁছে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দূরপাল্লার যাত্রীদের মাইক্রোবাস, থ্রি-হুইলার আর মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া। পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেশি। দীর্ঘপথ তাদের কয়েক দফা গাড়ি পাল্টে যেতে হচ্ছে। গাড়িতে পরিবারের সবার জন্য আসন জোগাড় করতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সংযোগপথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটেও দেখা গেছে একই চিত্র। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় গতকাল মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। গণপরিবহন চালু হওয়ায় সকাল থেকেই পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী ও ছোট গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। প্রচন্ড রোদে যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকরা ভোগান্তিতে পড়ে। বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে মাস্ক থাকলেও দূরত্বের কোনো বালাই ছিল না। যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় ছোট ছোট যানবাহনে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে আসছে মানুষ। সেখান থেকে ফেরিতে পদ্মা পার হয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত মাহেন্দ্র, প্রাইভেট কারে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। গতকাল সকালে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে দেখা যায়, পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নামের একটি রো-রো ফেরিতে ছয় শতাধিক যাত্রী দৌলতদিয়া ফেরিঘটে পৌঁছায়। পাটুরিয়া থেকে ভাষাসৈনিক বরকত নামের একটি রো-রো ফেরি সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছায়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ফেরিতে সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি। মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি অনেক যাত্রীকে। পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা যাত্রী মো. আইয়ুব আলী বলেন, ছুটির দিন, তাই পরিবার নিয়ে মাগুরায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। তাদের পৌঁছে দিয়ে আমি ঢাকায় ফিরব। দৌলতদিয়া থেকে প্রাইভেট কারে ৫০০ টাকা করে ভাড়া দিয়ে মাগুরা যাচ্ছি। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে সিন্ডিকেট থাকার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া না দিয়ে উপায় নেই। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া প্রসঙ্গে একজন মাইক্রোবাস চালক বলেন, ফরিদপুর থেকে ঈদের যাত্রী বহন করার জন্য দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে এসেছি। এখানে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির সহায়তায় গাড়ি লাগনোর সুযোগ পেয়েছি। তাকে ১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। যে কারণে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাত্রী বহন করতে হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. ফিরোজ শেখ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দিনে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ছয়টি ফেরি চালু ছিল। যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরে ১৬টি ফেরি চালু করা হয়েছে। রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান বলেন, ঘাট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কাজ করছে। অতিরিক্ত ভাড়া নিলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফেরিঘাটের পন্টুন এবং সংযোগ সড়কের ওপর কোনো যানবাহন থাকতে পারবে না। যাত্রীরা সরাসরি মহাসড়কে উঠে গন্তব্যে যাবে।

দিনের বেলা চলবে না ফেরি : আজ সকাল থেকে পাটুরিয়া ও মাওয়া ফেরি ঘাটে দিনের বেলায় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে। শুধু রাতের বেলায় পণ্যবাহী পরিবহন পারাপারের জন্য ফেরি চলাচল করবে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি। গতরাত সাড়ে ১২টার দিকে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর