মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান নেই ব্যাংকে নজরদারি চাই

----- ফারুক হাসান

বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান নেই ব্যাংকে নজরদারি চাই

দেশের শিল্প খাতে বাঁচা-মরার লড়াই চলছে বলে মনে করেন পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেছেন, মহামারীতে গত এক বছরে কোনো বিনিয়োগ হয়নি। নেই কর্মসংস্থানও। প্রধানমন্ত্রী-ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় পোশাকশ্রমিকদের বেতন হিসেবে অর্থ পেলেও অধিকাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান মূলধনি ঋণ পায়নি। শিল্পের পাশে ব্যাংকগুলো দাঁড়ায়নি। সুদ মওকুফ দূরের কথা, কিস্তিও বন্ধ রাখেনি ব্যাংকগুলো। এখন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোর ওপর সরকারের কঠোর নজরদারি চাই। কারণ এখন শিল্প না বাঁচলে অর্থনৈতিক বিপর্যয় আসন্ন।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। দেশের অন্যতম পোশাক পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জায়ান্ট গ্রুপের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারা দুনিয়ায় পণ্যের চাহিদা কমেছে। ওষুধ ও খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্যান্য খাতের পণ্যের খুব একটা চাহিদা নেই। বিনিয়োগ না হওয়ার কারণে এই সময়ে নতুন কর্মসংস্থানও হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস সংকট উত্তরণে নতুন বাজারে পোশাক পণ্য রপ্তানিতে আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রয়োজন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে কর সুবিধা দেওয়া হোক। উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ২৫ করা হোক। তিনি বলেন, পোশাকশিল্পের ওপর করোনা মহামারীর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগই পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভর করে। সুতরাং এ শিল্পকে সক্রিয় রাখা জাতীয় দায়িত্ব। এ শিল্প একদিকে জাতীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে, অন্যদিকে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে প্রতিনিয়ত। সে ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রাখা খুব জরুরি। দেশের পোশাকশিল্পকে এগিয়ে নিতে বাজেটে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

তিনি বলেন, পোশাকশিল্পের বাজার সম্প্রসারণ, পণ্য বহুমুখীকরণ এবং উন্নতমানের পণ্য তৈরিতেও নজর দিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ উইথ প্রাইড’ স্লোগান নিয়ে পৃথিবীর ১৬০টির অধিক দেশে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকাকে সমুজ্জ্বল করেছে আমাদের পোশাকশিল্প। করোনার কারণে পোশাকশিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করে পোশাকশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হবে, এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। এ বাজেটে পোশাকশিল্পে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। তারল্য সংকট মোকাবিলা করে কারখানাগুলো সচল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

ফারুক হাসান বলেন, কভিড মোকাবিলা ও শিল্প পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ১৮ মাস থেকে বৃদ্ধি ও কিস্তির আকার ছোট করার উদ্যোগ চাই। চলমান সংকট প্রতিকারের স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। শিল্পের পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সরকারের কাছে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি-সহায়তা চাই। বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার জন্য বিশেষ সহায়তা তহবিলের আওতায় ৫০০ কোটি টাকার একটি বরাদ্দ আসছে বাজেটে থাকা উচিত। এ তহবিলের মাধ্যমে নতুন পণ্য ও বাজারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান ও ভার্চুয়াল বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি সংকটাপন্ন কারখানাগুলোর জন্য জরুরি তহবিল গঠনও প্রয়োজন। কারণ যেসব কারখানা আর্থিক সমস্যা ও বিপর্যস্ততার সম্মুখীন হয়েছে, কিন্তু তাদের অতীতে ঋণখেলাপির কোনো রেকর্ড নেই, সেসব কারখানা ঋণের কিস্তি পরিশোধে অসমর্থ বা খেলাপি হলে তাদের ব্যবসা থেকে প্রস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর