শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

এনআইডি কার্যক্রম নিয়ে সংকট

স্বরাষ্ট্রে নেওয়ার প্রস্তাব, ইসি কর্মকর্তাদের আপত্তি

গোলাম রাব্বানী

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে দেওয়ার একটি প্রস্তাব এসেছে, যা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম (এনআইডি) ইসির অধীনে না থাকলে ভোটার রেজিস্ট্রেশন ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট পরিচালনা জটিলতা সৃষ্টি হবে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ সংক্রান্ত চিঠি মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বুধবারই ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম ইসির পরিবর্তে সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করা সংক্রান্ত’ প্রস্তাবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জানিয়ে ‘বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন’ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। আগামী শনিবার ইসির কর্মকর্তারা জরুরি বৈঠকে বসবেন পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের ও জাতীয় সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অনুরূপ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকবে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণে ইভিএম পদ্ধতি চালু করেছে, যা সম্পূর্ণ জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজ নির্ভর। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটদানে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে যদি অন্য কোনো দফতর ও নির্বাচন কমিশন একইসঙ্গে ডাটাবেজ গঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করে এতে ২টি ডাটাবেজে নাগরিকদের তথ্যের গরমিল পরিলক্ষিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। গত বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশন সভায় বসলেও এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে পরবর্তীতে ‘গভীরভাবে পর্যালোচনা করে’ ইসির অবস্থান জানানো হবে। তিনি বলেন, কমিশনের বুধবারের সভায় এ সংক্রান্ত এজেন্ডা ছিল না। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠিটি আমরা পেয়েছি। এ বিষয় নিয়ে এখনো বিস্তারিত পর্যালোচনা করিনি আমরা। পর্যালোচনা করার পরে যদি কিছু বলার থাকে জানাব। ইসির বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তবে আগে থেকে তারা এই বিষয়ে কিছুই জানতেন না। একজন নির্বাচন কমিশন বৈঠকে বলেছেন, ভোটার তালিকা প্রকল্প শুরু করার সময় দাতা সংস্থার কাছে লিখিত দেওয়া হয়েছিল ভোটার তালিকার কার্যক্রম ইসি ছাড়া অন্য কারও হাতে দেওয়া হবে না। পরে এই বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিতে সচিবকে দায়িত্ব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন ২০০৭-০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু করে। বর্তমানে দেশের ১১ কোটি ১৭ লাখের বেশি নাগরিক ভোটার তালিকাভুক্ত রয়েছে। ২০১০ সালে ইসির অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ একটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগ ওই দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বিবেচিত বিধায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত দায়িত্ব সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করার লক্ষ্যে ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস অ্যামং ডিফারেন্ট মিনস্ট্রিজ অ্যান্ড ডিভিশন্স’-এ সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বসমূহের মধ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০ এ ‘নির্বাচন কমিশন’ এর পরিবর্তে সরকার শব্দ অন্তর্ভুক্তকরণসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। সুরক্ষা সেবা বিভাগ কর্তৃক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা বিভাগে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

এ অবস্থায় ইসির অধীনে এনআইডি সংক্রান্ত কাযক্রম ও সেবা নিয়ে আইনগত, অপারেশনাল ও কারিগরি দিক এবং সুবিধা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরিত হলে উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুজ্জামান তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান তালুকদার স্বাক্ষরিত ইসির কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে জানান, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ইসির অধীনে জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্যক্রম যেভাবে চলমান রয়েছে তা অব্যাহত রেখে দ্রুত কীভাবে সেবা নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুজ্জামান তালুকদার বলেছেন, ইসির অধীনে ২০০৭ সাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা চালু রয়েছে। বর্তমানে ইসির ৫ হাজারের ওপরে কর্মকর্তা কর্মচারী এই সেবা প্রদানে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তান্তরের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি। আমরা চাই ইসির অধীনে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা থাক। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। ইসি আশ্বস্ত করেছে এই সেবা আমাদের কাছেই থাকবে। নির্বাচন কমিশন ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু করে। বর্তমানে দেশের ১১ কোটি ১৭ লাখের বেশি নাগরিক ভোটার তালিকাভুক্ত রয়েছে। ২০১০ সালে ইসির অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ একটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়।

সর্বশেষ খবর