রবিবার, ৬ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
মাঠে গড়াচ্ছে রাজনীতি

আওয়ামী লীগে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা উপজেলার সম্মেলন শিগগিরই

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা উপজেলার সম্মেলন শিগগিরই

আবারও সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার সম্মেলন শেষ করা হবে। দলের কেন্দ্রীয় ২২তম জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে এখন সংগঠনকে শক্তিশালী করতে মনোযোগ দিচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। এ জন্য দীর্ঘ বিরতির পর আবারও শুরু হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার সম্মেলন। সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ আগামী বছরের ডিসেম্বর মাসে শেষ হবে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই জেলা-উপজেলার সম্মেলন শেষ করতে চায় দলের নীতিনির্ধারকরা। সে জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে তা হয়ে ওঠেনি। দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩০ জেলার সম্মেলন হয়েছে। বাকি ৪৮ জেলার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই এসব মেয়াদোত্তীর্ণ জেলার সম্মেলন শেষ করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলকে সুসংগঠিত করা হচ্ছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়নের সম্মেলন শেষ করা হবে।

সূত্রমতে, গত শীতে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কায় তখন মার্চ পর্যন্ত দল গোছানোর কাজ স্থগিত করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু মার্চেই করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকে। ফলে দল গোছানোর কাজ আরও পিছিয়ে যায়। সেই কাজ পুরোপুরি শুরু করতে পারেনি ক্ষমতাসীনরা। তবে করোনার মধ্যেই সীমিত পরিসরে দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। এ জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ শুরু করেছেন। কেউ কেউ জেলার শীর্ষ নেতা, দলীয় এমপিদের ডেকে ঢাকায় এনে বৈঠক করে কর্মপরিকল্পনা করছেন। কারণ এখনো তৃণমূলের বেশরি ভাগ জেলা ও উপজেলা মেয়াদোত্তীর্ণ। যেগুলোর সম্মেলন হয়েছে সেখানেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ফলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, করোনা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে সাংগঠনিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখা ঠিক হবে না। এ কারণে সীমিত পরিসরে হলেও দল গোছানোর কাজ চালিয়ে যেতে হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করা হবে। সে কারণে এখন করোনার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছি। খুব শিগগিরই মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার সম্মেলন শুরু করা হবে।  

জানা গেছে, ইতিমধ্যে স্থগিত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং শূন্য হওয়া উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনগুলো নিয়ে ব্যস্ততাও বেড়েছে। দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি। করোনার কারণে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে এবং কোনো ধরনের লোকসমাগম ছাড়া প্রার্থী নিজে অথবা প্রার্থীর একজন যোগ্য প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে মনোনয়ন ফরম বিক্রিকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু দিন পর আবার সরব হয়েছে ধানমন্ডির অফিস।

দলীয় সূত্রমতে, দলকে সুসংগঠিত করতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদককে বিভাগীয় দায়িত্ব পুর্নবণ্টন করেছেন। এতে কাজের গতিও ফিরছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। নোয়াখালীর বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা দীর্ঘদিন ধরে দলের সিনিয়র নেতা ও স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে দেশজুড়ে আলোচনায় আসছিলেন। আবদুল কাদের মির্জার সঙ্গে বৈঠক করেছেন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। এতে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে বলে ধারণা করছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কিছু দিন আগে আমার সাংগঠনিক বিভাগ পরিবর্তন হয়েছে। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পরই কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। চট্টগ্রাম বিভাগের প্রতিটি জেলার এমপিদের নিয়ে সংসদ ভবনে আমার অফিসে বৈঠক করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছি। আগামী ৮-৯ জুন চট্টগ্রাম উত্তর জেলার অধীনে জেলা-উপজেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ডাকা হয়েছে। ১৮ জুন চট্টগ্রাম সফর করব। এ বছরের মধ্যেই বিভাগের মেয়াদোত্তীর্ণ সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলায় সম্মেলন করা হবে।

গত দুই বছরে সবচেয়ে বেশি সম্মেলন হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। এ বিভাগে ২৮টি উপজেলা এবং একটি জেলায় সম্মেলন হয়েছে। আরও অনেক উপজেলা সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ বিভাগের কয়েকটি জেলা ও উপজেলায় করোনার ভারতীয় ধরন ধরা পড়ায় লকডাউন করা হয়েছে। সে কারণে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আবার সম্মেলন শুরু হবে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি উপজেলায় লকডাউন করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই উপজেলা-জেলা সম্মেলন শুরু করব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর